সোমবার, ১০ আগস্ট ২০১৫

এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে

Home Page » প্রথমপাতা » এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে
সোমবার, ১০ আগস্ট ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ছন্দপতন ঘটেছে। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।। পাসের হারের দিক দিয়ে এবারের ফলাফল অনেকটা ২০১৩ সালের মতোই। ওইবার বড় ধরনের বিপর্যয় হয়েছিল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। এবার বিজ্ঞানমানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ তিনটিতেই উল্লেখ করার মতো পাসের হার কমেছে। শুধু নগরী নয়চট্টগ্রাম জেলাকক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায়ও পাসের হার কমে গেছে। সবদিক দিয়ে ঠিক যেন গতবারের উল্টো অবস্থা হয়েছে এবার। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে উল্লেখিত তথ্য উঠে এসেছে। একই সাথে সারাদেশের শিক্ষাবোর্ডগুলোতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল একযোগে প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। ঘোষিত ফলাফলে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষসহ সবমহল।

পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেনআগে নিজ নিজ বোর্ড প্রশ্নপত্র তৈরি করতো। চলতি বছর থেকে নিজ বোর্ড বাদ দিয়ে বাকি ৭ বোর্ডের ২৮ সেট প্রশ্নপত্র থেকে যে কোন চার সেট পছন্দ করা হয়েছে। ওই প্রশ্নপত্র কোন বোর্ডের সেটাও আমরা জানি না। ফলে আগে শিক্ষার্থীরা সিলেক্টিভ পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিত। পুরো বই পড়তো না। এখন ভিন্ন একটি বোর্ডের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফলাফল ভাল করতে পারেনি। তিনি আরো বলেনশুধু চট্টগ্রামে না পুরো বাংলাদেশে পাসের হার কমেছে। সে তুলনায় চট্টগ্রাম অনেক ভালো করেছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৬৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গতবারের পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২০১৩ সালে ছিল ৬১ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০১২ সালে পাসের হার ছিল ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অথচ ২০১৩ সালের তুলনায় গত বছর পাসের হার বেড়েছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ঠিক যেন উল্টো ফলাফল এবার। ২০১০ সালে পাসের হার ছিল ৭২ দশমিক ৭১। এবার ফেল করেছে ৩৬ দশমিক ৫১ শতাংশ পরীক্ষার্থী। গতবার এটা ছিল ২৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৩৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেছিল। এবার চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ১২৯ জন। গতবার ২ হাজার ৬৪৬ জন পরীক্ষার্থী এ কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। গতবারের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ৫১৭ জন শিক্ষার্থী। ২০১৩ সালে পেয়েছিল ২ হাজার ৭৭২ জন পরীক্ষার্থী। ২০১২ সালের পরীক্ষায় এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৪৫ জন। ২০১১ সালে পেয়েছিল ১ হাজার ৮০২ জন। ২০১০ সালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬২৪ জন।

২০১২ সালে থেকে বিগত চার বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছেচট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে কমেছে প্রতিবছর। এক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি করতে নতুনভাবে সংশ্লিষ্টদেরকে ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অভিভাবকসহ শিক্ষাবিদরা।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছেচট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড এর ফলাফলে এবার সর্বক্ষেত্রে ছন্দপতন ঘটেছে। প্রকাশিত ফলাফলে কোন ভুলত্রুটি বা অসঙ্গতি থাকলে সেক্ষেত্রে ফলাফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে তা চট্টগ্রাম শিক্ষাবার্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসানকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে। প্রতিবারের ফলাফলে সেরা কলেজের তালিকা থাকলেও এবার তা নেই।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছেগতবারের মতো এবারও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা এগিয়ে রয়েছেন। ২০১৩ সালে জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে ছিল। এবারের ফলাফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ২ হাজার ১২৯ জনের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা ১ হাজার ৭৮ জন। মেয়েদের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৫১ জন। গতবারের ২ হাজার ৬৪৬ জন জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৫৭ জন। আর মেয়েদের সংখ্যা ১ হাজার ২৮৯ জন। ২০১৩ সালে ২ হাজার ৭৭২ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০৩ জন। আর ছাত্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৯ জন। ২০১২ সালের পরীক্ষার ফলাফলে ৩ হাজার ১৪৫টি জিপিএ-৫ এর মধ্যে মেয়েরা দখল করেছিল ১ হাজার ৫৮৭ টি এবং ছেলেরা দখল করেছিল ১ হাজার ৫৫৮ টি।

এবার বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫৯৩ জন শিক্ষার্থী। গতবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৭১ জন ছাত্র-ছাত্রী। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৯৫ জন। মানবিক বিভাগ থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৬৭ জন। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৩২ জন।। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী। গতবার পেয়েছিল ১ হাজার ৮ জন। ২০১৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯৪৫ জন।

এবার বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়লেও মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেনজিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে কম জিপিএ-৫ প্রাপ্তি।

গতবারের মতো এবারও বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ছেলেরা। এবার বিজ্ঞানে ছেলেদের জিপিএ-৫ এর সংখ্যা হচ্ছে ৯১৫ জন। গতবার ছিল ৮৬৩ জন। ২০১৩ সালে ছিল ৯৩৭ জন। আর ছাত্রীদের সংখ্যা হচ্ছে ৬৭৮ জন। গতবার ছিল ৬০৮ জন। ২০১৩ সালে ছিল ৭৫৮ জন। দেখা যাচ্ছেবিজ্ঞানে গতবারের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের ক্ষেত্রেই বেড়েছে।

মানবিকে ছেলেদের জিপিএ-৫ এর সংখ্যা হচ্ছে ২১ জন। গতবার ছিল ৫৮ জন। ২০১৩ সালে ছিল ৩৯ জন। মেয়েদের জিপিএ-৫ এর সংখ্যা হচ্ছে ৫৫ জন। গতবার এ সংখ্যা ছিল ১০৯ জন। ২০১৩ সালে ৯৩ জন। এ বিভাগে উভয় ক্ষেত্রেই জিপিএ-৫ এর সংখ্যা গতবার বাড়লেও এবার কমে গেছে।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এবার মেয়েদের জিপিএ-৫ এর সংখ্যা হচ্ছে ৩১৮ জন। গতবার ছিল ৫৭২ জন। ২০১৩ সালে ছিল ৫৫২ টি। এ বিভাগে ছেলেদের জিপিএ-৫ এর সংখ্যা হচ্ছে এবার ১৪২ জন। গতবার ছিল ৪৩৬ জন। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৯৩। ব্যবসায় শিক্ষায়ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে কমেছে।

এবারের এইসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে মোট ৫১ হাজার ২৪৩ জন পরীক্ষার্থী। গতবার পাস করেছিলেন ৫৪ হাজার ৩১২ জন ছাত্র-ছাত্রী। ২০১৩ সালে পাস করেছিল ৩৮ হাজার ৯৮৬ জন। এবার পাস করা শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ২৪ হাজার ৪২৫ জন। গতবার ছিল ২৬ হাজার ৫৮১ জন। ৬১ দশমিক ৮১ শতাংশ। গতবার পাসের হার ৬৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এবার ছাত্রী পাস করেছে ২৬ হাজার ৮১৮ জন। গতবার ২৭ হাজার ৭৩১ জন । পাসের হার ৬৫ দশমিক ১১ শতাংশ। গতবার ছিল ৭০ দশমিক ৭০ শতাংশ। গতবারের ফলাফলের মতো এবারও পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে গেছে মেয়েরা।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞানমানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষার্থী ছিল মোট ৮০ হাজার ৭৬৫ জন। গতবার ছিল ৭৭ হাজার ৭৯২ জন। এবার পরীক্ষায় শেষতক অংশ নেয় ৮০ হাজার ৭০৭ জন। গতবার অংশ নিয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৫২৬ জন। এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র হচ্ছে ৩৯ হাজার ৫১৭ জন। গতবার ছিল ৩৮ হাজার ৩০৫ জন। এবার ছাত্রী অংশ নিয়েছেন ৪১ হাজার ১৯০ জন। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ২২১।

এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মোট ১২ হাজার ৪৯২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯ হাজার ২২৮ জন। একইভাবে গতবার ১১ হাজার ৯৯৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯ হাজার ৪৭৭ জন। এবার বিজ্ঞানে পাসের হার হচ্ছে ৭৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতবার বিজ্ঞানে পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ০২ শতাংশ। এ বিভাগ থেকে ছাত্র পাস করেছে এবার ৫ হাজার ৩৬৬ জন। গতবার পাস করেছিলেন ৫ হাজার ৬৯৮ জন। এবার এ বিভাগ থেকে ছাত্রী পাস করেছে ৩ হাজার ৮৬২ জন। গতবার ছিল ৩ হাজার ৭৭৯ জন। এক্ষেত্রে এবার ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গতবার ছিল ৭৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং এবার ছাত্রীদের পাসের হার ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ। গতবার যা ছিল ৮০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গতবারের মতো বিজ্ঞানে এবারও সবক্ষেত্রে পাসের হার বেড়েছে।

মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেয়া মোট ২৮ হাজার ৭৮৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৫ হাজার ৬৪ জন। একইভাবে গতবার ২৬ হাজার ১৯৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছিল ১৬ হাজার ২৭২ জন। এ শাখায় পাসের হার এবার ৫২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতবার ছিল ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে এবার ছাত্র পাস করেছে ৫ হাজার ২৫৮ জন। গতবার পাস করেছিল ৫ হাজার ৭৮৬ জন। এবার ছাত্রী পাস করেছে ৯ হাজার ৮০৬ জন। গতবার এ সংখ্যা ১০ হাজার ৪৮৬ জন। এ ক্ষেত্রে এবার ছাত্রদের পাসের হার হচ্ছে ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। গতবার ছিল ৬০ দশমিক ২৬ শতাংশ। একইভাবে এবার ছাত্রীদের পাসের হার হচ্ছে ৫৪ দশমিক ২০ শতাংশ। গতবার এটা ছিল ৬৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয়া মোট ৩৯ হাজার ৪২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৬ হাজার ৯৫১ জন। গতবার ৩৯ হাজার ৩৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মোট পাস করেছিল ২৮ হাজার ৫৬৩ জন ছাত্র-ছাত্রী। এ বিভাগে পাসের হার হচ্ছে এবার ৬৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গতবার ছিল ৭২ দশমিক ৬১ শতাংশ। এবার এ বিভাগে ছাত্র পাস করেছে ১৩ হাজার ৮০১ জন। গতবার পাস করেছিল ১৫ হাজার ৯৭ জন । একইভাবে এবার ছাত্রী পাস করেছে ১৩ হাজার ১৫০ জন। গতবার ছিল ১৩ হাজার ৪৬৬ জন। এক্ষেত্রে ছাত্রদের পাসের হার এবার ৬৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গতবার ছিল ৭০ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭২ দশমিক ৭১ শতাংশ। গতবার ছিল ৭৫ দশমিক ০২ শতাংশ। এ বিভাগে গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে।

এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ১ টায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম বোর্ড কার্যালয়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় তার সাথে উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরিক্ষাশওকত আলমমুল্যায়ন কর্মকর্তা শুক্লা রক্ষিতসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে সরবরাহ করা ফলাফলে দেখা গেছেবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭ হাজার ৪৭৮ ছাত্রের মধ্যে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯১৫ জন। গতবার ৭ হাজার ৩১৯ ছাত্রের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮৬৩ জন। এবার ৫ হাজার ১৪ জন ছাত্রীর মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে মাত্র ৬৭৮ জন। গতবার ৪ হাজার ৬৭৪ জন ছাত্রীর মধ্যে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬০৮ জন ।

এ বিভাগে এবার জিপিএ-৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পয়েন্ট নিশ্চিত করেছে মোট ৪ হাজার পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র হচ্ছে ২ হাজার ১৫৫ জন এবং ছাত্রী হচ্ছে ১ হাজার ৮৪৫ জন। জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে ১ হাজার ৭৪০ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৪৩ জন এবং ছাত্রী হচ্ছে ৬৯৭ জন। জিপিএ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ১ হাজার ১১০ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র রয়েছে ৭১৩ জন এবং ছাত্রী রয়েছে ৩৯৭ জন। জিপিএ-২ থেকে ৩ পর্যন্ত গ্রেড পয়েন্ট নিশ্চিত করেছে ৭৬২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫২০ জন এবং ছাত্রী ২৪২ জন। জিপিএ-১ থেকে ২ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ২৩ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র হচ্ছে ২০ জন এবং ছাত্রী ৩ জন।

বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছেমানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেয়া ১০ হাজার ৬৯৮ জন ছাত্রের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২১ জন এবং ১৮ হাজার ৯১ জন ছাত্রীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৫ জন। এ বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ থেকে ৫ পর্যন্ত গ্রেড পয়েন্ট নিশ্চিত করেছে ৯৮৯ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র হচ্ছে ৩৩৯ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৬৫০ জন। জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ১ হাজার ৪৬৪ জন ছাত্র-ছাত্রী। এখানে ছাত্র ৪৮৯ জন এবং ছাত্রী ৯৭৫ জন। জিপিএ-৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ২ হাজার ৬৩৮ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র হচ্ছে ৯৩৮ জন এবং ছাত্রী ১ হাজার ৭০০ জন। জিপিএ-২ থেকে ৩ পর্যন্ত পেয়েছে ৭ হাজার ৬৪৬ জন। এখানে ছাত্রদের সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ৭৫৩ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৮৯৩ জন। জিপিএ-১ থেকে ২ পর্যন্ত পেয়েছে ২ হাজার ২৫১ জন। এখানে ছাত্র ৭১৮ এবং ছাত্রী ১ হাজার ৫৩৩ জন।

এবারের পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে অংশ নেয়া ২১ হাজার ৩৪১ জন ছাত্রের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪২ জন এবং ১৮ হাজার ৮৫ জন ছাত্রীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১৮ জন। জিপিএ-৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ৪ হাজার ৮ জন। এখানে ছাত্র ১ হাজার ৬৮২ জন এবং ছাত্রী হচ্ছে ২ হাজার ৩২৬ জন। জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ৪ হাজার ১৮৩ জন। এখানে ছাত্র রয়েছে ১ হাজার ৯৩৮ জন এবং ছাত্রী রয়েছে ২ হাজার ২৪৫ জন। জিপিএ-৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ৫ হাজার ৫৭ জন পরীক্ষার্থী। এখানে ছাত্র রয়েছে ২ হাজার ৫১৮ জন এবং ছাত্রী রয়েছে ২ হাজার ৫৩৯ জন। জিপিএ-২ থেকে ৩ পর্যন্ত পেয়েছে ১০ হাজার ৫৭৫ জন। এখানে ছাত্র ৫ হাজার ৮৬৭ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৭০৮ জন। এ বিভাগে জিপিএ-১ থেকে ২ পর্যন্ত পেয়েছে ২ হাজার ৬৬৮ জন। এখানে ছাত্র ১ হাজার ৬৫৪ জন এবং ছাত্রী ১ হাজার ১৪ জন।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছেএবার ২১৭ টি কলেজের উল্লেখিত সংখ্যক পরীক্ষার্থী ৯২ টি কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য বসে। গতবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে অধীনে কলেজের সংখ্যা ছিল ২০৫টি। ২০১৩ সালে ১৯৬টি। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এবারের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ৫৮ জন। গতবার ছিল ২৬৬ জন। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৯৬ জন। ২০১২ সালের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ৫৮১ জন। গতবারের মতো এবারও কোন পরীক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত হয়নি। ২০১৩ সালে ২ জনের ফলাফল স্থগিত ছিল। এবার বহিষ্কৃত হয়েছে ৪১ জন। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৪৪ জন। ২০১৩ সালে ছিল ৪২ জন। ২০১২ সালের পরীক্ষায় বহিষ্কৃত হয়েছিল ৬৬ জন।

এদিকে এবারের ফলাফলে সকল বিভাগে জিপিএ৪ থেকে ৫ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ৮ হাজার ৯৯৭ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ১৭৬ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৮২১ জন। জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ পর্যন্ত পেয়েছে মোট ৭ হাজার ৩৮৭ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ৪৭০ জন এবং ছাত্রী ৩ হাজার ৯১৭ জন। জিপিএ-৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ পর্যন্ত নিশ্চিত করেছে ৮ হাজার ৮০৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ১৬৯ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৬৩৬ জন। জিপিএ-২ থেকে ৩ পয়েন্ট পর্যন্ত পেয়েছে ১৮ হাজার ৯৮৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ১৪০ জন এবং ছাত্রী ৯ হাজার ৮৪৩ জন। জিপিএ-১ পয়েন্ট থেকে ২ পয়েন্ট পর্যন্ত পেয়েছে ৪ হাজার ৯৪২ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৩৯২ জন এবং ছাত্রী ২ হাজার ৫৫০ জন।

পাসের হার শূন্য এ ধরনের কলেজের সংখ্যা গতবারের মতো এবারও নেই। ২০১৩ সালে এক্ষেত্রে ১ টি ছিল। আর শতভাগ পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৪টি। গতবার ছিল ৩টি।

ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছেচট্টগ্রাম মহানগরীতে এবার পাসের হার ৭৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গতবার ছিল ৭৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে ছিল ৭৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এক্ষেত্রে গতবারের তুলনায় এবার পাসের হারের ছন্দপতন লক্ষ্যনীয়। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার এবার ৫৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গতবার ছিল ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০১৩ সালে ছিল ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মহানগরসহ এবার চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার ৬৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৭১ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৬২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৭৪ দশমিক ০২ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় এবার পাসের হার এবার ৬৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গতবার ছিল ৭২ দশমিক ০০ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৬২ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এবার রাঙামাটি জেলায় পাসের হার ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। গতবার ৫৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৪৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৫৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় এবার পাসের হার ৫০ দশমিক ১৬ শতাংশ। গতবার ছিল ৬৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৪৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৬২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

বান্দরবান জেলায় এবার পাসের হার ৫৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ। গতবার ৬৫ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০১৩ সালে ছিল ৫৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৬৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৫:০৭   ৩৯৮ বার পঠিত