শনিবার, ৮ আগস্ট ২০১৫

অস্থির সবজির বাজার আশ্বাস নেই পেঁয়াজেও

Home Page » জাতীয় » অস্থির সবজির বাজার আশ্বাস নেই পেঁয়াজেও
শনিবার, ৮ আগস্ট ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ‘করল্লা ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা’। দোকানির ক্রমগত একই ধরনের হাঁকডাক শুনতে শুনতে ত্যাক্ত-বিরক্ত ক্রেতার জোরালো মন্তব্য, ‘যেইডা নিবেন ৮০ টাকা বললেই তো হয়, সবকিছুর নাম মুখে লওনের দরকার কি?’ দোকানির জবাব, ‘এর চাইতে বেশি দামিও আছে, কম দামিও আছে।’
দৃশ্যটি গতকাল সকাল ১০টায় শান্তিনগর বাজারের। সত্যিই ৮০ টাকার কমে মিলছিল না অধিকাংশ সবজি। কিছুটা কমের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিলÑ আলু ২৫ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পটোল ৫৫ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকায়। বিভিন্ন প্রকারের শাক বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। বরবটি ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পেঁয়াজের। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ভারতের বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং সেদেশের সরকার রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দেয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর ভারতে নতুন পেঁয়াজের মওসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সুসংবাদ বা দাম কমার আশ্বাসও দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
বাজারে গতকাল প্রতিটি লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচু ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচকলার হালি ২৪ থেকে ৩০ টাকা, ধনিয়ার কেজি ৫০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের পুঁই শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সমপরিমাণ লালশাক, মুলাশাক কিংবা পাটশাক কিনতে গুনতে হচ্ছে আরও বেশি। প্রতি আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় পালং শাকও যারা কিনতে পারছেন না তাদের ভরসা নালা-নর্দমায় প্রাকৃতিকভাবে গজে ওঠা হেলেঞ্চা শাক। ফেরিওয়ালারা এসব শাকও বিক্রি করছেন ১০ টাকা আঁটি দামে। 
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে মাছের বাজারেও। টানা বর্ষণে দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা পানির নিচে। নদী-নালা, পুকুর-প্রকল্প, হাওরা-বাঁওড়ে পানি থই থই করছে। মাছ ধরার কোনো উপায় নেই। সংবাদ নেই সাগরে ইলিশ ধরতে যাওয়া জেলেদের কাছেও। ফলস্বরূপ বাজারে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে সব ধরনের মাছের। মাঝারি আকারের ইলিশ এখন আর হালিদরে বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতার পকেটের অবস্থা বুঝতে পেরে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন পিস হিসেবে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ এখন এক হাজার টাকার ওপরে। জাটকা ইলিশের কেজি ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ টাকায়। আর আইড়, বোয়াল, কোরাল, বেলে, চিংড়ি, রূপচাঁদা বাইম জাতীয় মাছের দাম এখন ৮০০ টাকার কমে নেই। এক্ষেত্রে মধ্যবিত্তের অবলম্বন কেবলই চাষের মাছে। সেখানেও বেড়েছে দাম। ১৬০ টাকার তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, পাংগাশ ১৩০ থেকে বেড়ে ১৭০ টাকা এবং কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে বেড়ে ৩০০ টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে এক লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ ১২ হাজার টন। অপর দিকে সদ্যবিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ছয় লাখ টনেরও বেশি। 
গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেখানে চার লাখ ৩৯ হাজার ৩১২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল সেখানে গত অর্থবছর (২০১৪-১৫) আমদানি হয়েছে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার টন। অথচ পেঁয়াজ নিয়ে সরকারের অস্বস্তির শেষ নেই। যদিও ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ভারত সরকার ইতোমধ্যে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করেছে। 
ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশী পেঁয়াজের দামও বেড়ে যাওয়ার জন্য এক শ্রেণীর সিন্ডিকেটকে দায়ী করে খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাড়তি মূল্য কৃষক পাচ্ছে না। এ টাকা চলে যায় মজুতদার ও সিন্ডিকেটের পকেটে। দেশী পেঁয়াজ কৃষকের কাছ থেকে অনেক আগেই মজুতদাররা নিয়ে গেছে দাবি করে তারা বলেন, বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্লিপ্ততার সুযোগে সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো বাজার।

বাংলাদেশ সময়: ০:২১:৫৩   ২৫৬ বার পঠিত