মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট ২০১৫
অ্যান্ড্রয়েডই গলার কাঁটা স্যামসাংয়ের?
Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » অ্যান্ড্রয়েডই গলার কাঁটা স্যামসাংয়ের?রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইলেকট্রনিকস গ্যালাক্সি স্মার্টফোন তৈরি করে সফলতা পেয়েছে। এ ছাড়াও স্মার্টফোনের বাজারে অ্যাপলকে টেক্কা দিয়ে কোটি কোটি ডলার অর্থ উপার্জন করেছে।
অবশ্য বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামনের দিনগুলো স্যামসাংয়ের জন্য আর সুখকর থাকবে না। চীনের মোবাইল ফোন নির্মাতা হুয়াই ও শিয়াওমি এখন স্যামসাংয়ের পেছনে ছুটছে। মিড রেঞ্জ বা মধ্যম সারির স্মার্টফোন তৈরি করে স্যামসাংকে ধরতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠান দুটি। এই তীব্র প্রতিযোগিতার কারণেই মোবাইল ফোনের দাম কমাতে এবং মুনাফা কম করতে একরকম বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্যামসাংকে এই বাস্তবতার মুখে আনার জন্য দায়ী মনে করা হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকেই। বছরের পর বছর ধরে একই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম আঁকড়ে পড়ে রয়েছে স্যামসাং। যেখানে একই অ্যান্ড্রয়েড দিয়ে সাশ্রয়ী দামে ফোন তৈরি করছে স্যামসাংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বীরা সেখানে স্যামসাংয়ের অ্যান্ড্রয়েডচালিত ফোন কিনতে হচ্ছে বেশি অর্থ খরচ করে।
তাইপের বিশ্লেষক বেন থম্পসন বলেন, ‘প্রিমিয়াম অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাতাদের দেয়ালে কবেই লেখা হয়ে গেছে যে, সাশ্রয়ী দামের ফোনগুলোতে যখন যথেষ্ট ভালো মানের হার্ডওয়্যার দেওয়া হচ্ছে তখন মানুষ আর বেশি দাম দিয়ে তাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনবে না।’
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ বছরে এপ্রিলে গ্যালাক্সি এস ৬ নামের নতুন ফোন বাজারে আনলেও বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমে গেছে স্যামসাংয়ের। যদিও এখনো স্মার্টফোনের বাজারের শীর্ষস্থান স্যামসাং দখল করে রেখেছে তবু এই ক্ষেত্র থেকে সবচেয়ে বেশি লাভ করছে অ্যাপল। লাভের অঙ্কে বাজার বিশ্লেষকেদের পূর্বাভাস হয়তো অ্যাপল পূরণ করতে পারেনি তবে স্মার্টফোনের বাজারের ৯০ শতাংশ মুনাফাই যাচ্ছে আইফোন নির্মাতাদের পকেটে।
গত সপ্তাহে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, লাভ ও বাজার দখল ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাবে তারা। এ জন্য বড় মাপের স্ক্রিনযুক্ত নতুন স্মার্টফোন আনা হবে যার দাম হবে হাতের নাগালে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, লাভের দিক হিসাব করলে শুধু হার্ডওয়্যার দিয়ে অ্যাপলকে ধরতে স্যামসাংকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। একমাত্র বড় ধরনের কোনো প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন দিয়ে মন জয় করতে না পারলে তা সম্ভব নয়।
আইবিকে সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক লি সিউং-ইউ বলেন, ‘অনেকে ভাবেন ভালো হার্ডওয়্যার দিয়ে ভালোভাবে তৈরি ফোন বিক্রি হবে বেশি। কিন্তু গ্যালাক্সি এস ৬ সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে।
লি সিউং ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এ বছরে স্যামসাংয়ের লাভের পরিমাণ বর্তমানে ১০ দশমিক ছয় শতাংশ থেকে কমে নয় দশমিক তিন শতাংশে নেমে আসবে যা ২০১০ সালে গ্যালাক্সি ফোন বাজারে আনার পর থেকে সর্বনিম্ন হবে।
দাম কমানো
গত সপ্তাহে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ প্রান্তিক আয় ঘোষণার সময় জানিয়েছিল, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে আয় বাড়াতে গ্যালাক্সি এস ৬ ও এস ৬ এজ মডেলের দামে ‘যথাযথ সমন্বয়’ করা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে এস ৬ এজের দাম প্রায় ৮৫ ডলার কমিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের বাজারেও গতকাল সোমবার বিশেষ অফারে সীমিত সময়ের জন্য এস ৬ সহ কয়েকটি মডেলের স্মার্টফোনের দাম কমিয়েছে স্যামসাং মোবাইল বাংলাদেশ।
স্যামসাং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিশেষ অফারে ফ্ল্যাগশিপ ও মিড-রেঞ্জের কয়েকটি মডেলের ফোনের দাম আগের চেয়ে কম রাখা হবে। এর মধ্যে রয়েছে গ্যালাক্সি এস ৬ ও নোট ৪। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৬ এখন পাওয়া যাবে ৪৪ হাজার ৯০০ টাকায়। এপ্রিলে উদ্বোধনের সময় এর দাম ছিল ৬৯ হাজার ৯০০ টাকা। ৮০ হাজার টাকা দামের গ্যালাক্সি নোট ৪ এখন পাওয়া যাবে ৫০ হাজার টাকায়।
মিড রেঞ্জ বা মধ্যম সারির ফোনগুলোর ক্ষেত্রেও দাম কমিয়েছে স্যামসাং। ১৯ হাজার ৯০০ টাকা দামের গ্যালাক্সি গ্র্যান্ড প্রাইম এখন পাওয়া যাবে ১৪ হাজার ৯০০ টাকায়। সাত হাজার ৯৯০ টাকা দামের গ্যালাক্সি এস নেক্সট পাওয়া যাবে ছয় হাজার ৯৯০ টাকায়। টাইজেন অপারেটিং সিস্টেমচালিত জেড ১ স্মার্টফোনটিরও দাম কমিয়েছে স্যামসাং। ছয় হাজার ৯০০ টাকা দামের ফোনটি এখন পাওয়া পাবে পাঁচ হাজার ৯৯০ টাকায়। গ্যালাক্সি কোর টু এখন কেনা যাবে নয় হাজার ৯৯০ টাকায়।
দাম কমানো প্রসঙ্গে এক বিজ্ঞপ্তিতে স্যামসাং মোবাইল বাংলাদেশের মোবাইল বিভাগের প্রধান হাসান মেহেদী বলেন, ‘সর্বশেষ প্রযুক্তি সুবিধার পণ্য ক্রেতাদের হাতে এনে দিয়ে মোবাইল ইন্টারনেট বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে স্যামসাং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিটি গ্রাহক যেন চমৎকার স্মার্টফোন অভিজ্ঞতা পান তা নিশ্চিত করতে চাই আমরা। আমরা সাশ্রয়ী দামে উন্নত পণ্য বা ডিভাইস দিতে প্রস্তুত। এ ধরনের অফারের ফলে সাশ্রয়ী দামে উন্নত প্রযুক্তির স্মার্টফোন হাতে পাবেন গ্রাহকেরা।’
বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতার করতে পারে এমন মিড রেঞ্জ ও লো এন্ডের ফোন উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা করছে স্যামসাং।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান নমুরা বলছে, গত বছরে স্মার্টফোনের বাজার ছিল ২৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৭ সাল নাগাদ বেড়ে ৩১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। এই বড় স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের বড় সুবিধা হচ্ছে তারা ফোন তৈরির পাশাপাশি স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশও তৈরি করে। এই ক্ষেত্রটি থেকেই এখন স্যামসাং সবচেয়ে বেশি আয় করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৩:২৫ ৪৩৭ বার পঠিত