সোমবার, ৩ আগস্ট ২০১৫
রাবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : হল কমিটি স্থগিত
Home Page » প্রথমপাতা » রাবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : হল কমিটি স্থগিতবঙ্গনিউজ ডটকমঃ সিট দখলকে কেন্দ্র করে রাজশহী বিশ^বিদ্যালয় (রাবি) সৈয়দ আমীর আলী হলে গভীর রাতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৪ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতরা হলেন, হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকত হোসাইন (অর্থনীতি-মাস্টার্স), হাসিবুর রহমান হাসিব (সমাজকর্ম-চতুর্থ বর্ষ), মাসুদ (অর্থনীতি-তৃতীয় বর্ষ), আশরাফুল (বাংলা-প্রথম বর্ষ)। এ ঘটনার রোববার দুপুরে হল কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, আমীর আলী হলের ২০৫ নম্বর কক্ষে থাকতেন সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল আলম। হাসিবকে ওই কক্ষে তুলেছিল ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন। ঈদের পরে ক্যাম্পাসে এসে শনিবার রাত ১১টার দিকে ইমনকে না জানিয়ে হাসিব ভালো কক্ষ পাওয়ায় ২১৩ তে চলে যান। হলের সাধারণ সম্পাদক সৈকত হোসাইন হাসিব নামের শিক্ষার্থীর ইচ্ছাতেই তিনি ২০৫ নম্বর কক্ষ থেকে ২১৩ নম্বর কক্ষে স্থানান্তর করেন। কিন্তু এ ঘটনায় ক্ষীপ্ত হয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান সজল ও সাবেক বহিস্কৃত সভাপতি অস্ত্রধারী শামসুজ্জামান ইমন জোরপূর্বক ওই শিক্ষার্থীকে ধরে ২০৫ নং কক্ষে আটকে রাখে এবং ব্যাপক মারধর করে। পরে সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্যরা হাসিবকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে সভাপতি সজল ও বহিস্কৃত অস্ত্রধারী ইমনের নেতৃত্বে লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রনিয়ে তাদের উপর হামলা করে। এসময় বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের নেতাকর্মীদের মারধর করে। এতে সাধারণ সম্পাদক সৈকত, মাসুদ ও আশরাফুল গুরুতর আহত হয়।
হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকত হোসাইন বলেন, ‘হাসিব নামের শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে গেলে সজল, ইমন, কাহার, বাধনসহ আরো অনেকে আমিসহ আমার কর্মীদের মারধর করে।’ তবে হল ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হাসান সজল বলেন, ‘সৈকত হাসিবকে জোরপূর্বক মারধর করে ২১৩ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। পরে আমরা উদ্ধার করতে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।’
সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার পরে পুলিশের ফোন পেয়ে হলে আসি, পরে পুলিশের মাধ্যমে দুই পক্ষকে শান্ত করি এবং আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেই। বর্তমানে হলের পরিবেশ শান্ত রয়েছে।’
নগরীর মতিহার থানার ওসি হুমায়ূন কবির বলেন, হলে মারামারি ঘটনা শোনার পর রাতেই পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে আবারও মারামারির আশঙ্কায় হল গেটে তিন গাড়ি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
হল কমিটি স্থগিত:
গত শনিবার রাতে সিট দখলকে কেন্দ্র করে সৈয়দ আমীর আলী হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার পর ঐ হলের কমিটি স্থগিত করে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। জানতে চাইলে এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব বলেন, হলে একটু সমস্যা হয়েছে। তাই সমস্যা সমাধানের জন্য হল কমিটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
অস্ত্রধারী ক্যাডার ইমন সক্রিয়:
গত ২রা ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ফিল্ম স্টাইলে গুলি চালানোর পর ছাত্রলীগের এই নেতা ক্যাম্পাসে ব্যাপক পরিচিত হয়ে ওঠে। অস্ত্র হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর গুলী ছোঁড়ার চিত্র বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘ দিন আতœগোপনে থাকার পর আবারো ফিরে আসে ক্যাম্পাসে। বহিস্কৃত এই নেতা স্বরুপে সৈয়দ আমীর আলী হলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে হলের সিট বানিজ্য ব্যাপক ভাবে করতে থাকে।
ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীকে ছাত্রলীগের মারধোর
রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ে (রাবি) প্রেমিকার সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে বাধা দেয়ায় এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে রাবি ছাত্রলীগের কর্মী রেজাউল করিম রাজু। রোববার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার রাবি ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী মাহমুদুল হাসান আসিফ আন্তঃর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের চারতলায় ছাত্রলীগ কর্মী রাজুকে একজন মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী আসিফ তাদেরকে সেখান থেকে উঠে যেতে বলেন। এরপর রাজু আসিফকে নানা রকম হুমকি দেয়। একপর্যায়ে রাজু তার অন্য বন্ধুদের ডেকে এনে আসিফকে চড়-থাপ্পড় মারে। এরপর তারা সেখান থেকে চলে যায়।
মারধরের ঘটনা স্বীকার করে আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, ‘আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে যখন বসে ছিলাম তখন আসিফ আমার থেকে ছোট হয়েও আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করে। আর তাছাড়া আমি কোনো বিব্রতকর অবস্থায় ছিলাম না। আসিফ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করায় তাকে আমি একটা চড় মেরেছি।’ মারধরের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহ মখদুম হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কিরণও সাথে ছিলো বলে জানান তিনি।
এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. তারিকুল হাসানকে জানালে তিনি এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহ-সভাপতি তাশনুভা তাহরীন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ৩:৪৩:০৭ ২৯৯ বার পঠিত