রবিবার, ২ আগস্ট ২০১৫
আরেকজন মাশরাফি কি পাবে বাংলাদেশ?
Home Page » ক্রিকেট » আরেকজন মাশরাফি কি পাবে বাংলাদেশ?বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ২০১৪ সালের অক্টোবরে আবার অধিনায়কত্ব পেলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দল তখন হাবুডুবু খাচ্ছে ব্যর্থতার চোরাবালিতে। সেই দলটার চেহারা কমাসের ব্যবধানে পাল্টে গেল ভোজবাজির মতো। জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা সিরিজ জয়। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখা—বাংলাদেশ উপহার দিল একের পর এক বিস্ময়। মাশরাফির ক্রিকেট ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা কথা উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায়।
টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজ জয়। স্বপ্নের মতো সময় কাটছে নিশ্চয়ই। কোনটিকে সবচেয়ে এগিয়ে রাখবেন?
অবশ্যই এটি (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়) বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন। একে একটা ধাপও বলতে পারেন। একে ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অর্জনটা কত বড়, সামনের দিনে আরও পরিষ্কার হবে। সব মিলিয়ে বলব এটা একটা ভালো সময়। খেলোয়াড়েরা ভালো না খেললে একটা দল কখনো জেতে না। এটা পুরো দলেরই কৃতিত্ব। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচিং স্টাফ বা নির্বাচকেরা সব সময়ই প্রচারের বাইরে থেকে যান। তারাই কিন্তু আমাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো তৈরি করে দেন। এখানে সবার অবদানই রয়েছে।
গত বছর যখন পুনরায় অধিনায়কত্ব পেলেন, তখন ছবিটা অন্য রকম ছিল। একের পর এক ব্যর্থতা। তখন কি এই ছবিটা ভাবতে পেরেছিলেন?
সত্যি বলতে না। এত দূরে আমাদের চোখ ছিল না। বিশ্বকাপ বাদে জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে পর্যন্ত ওয়ান-বাই-ওয়ান ম্যাচ খেলে এসেছি। মাঠে নিজেদের দায়িত্ব সবাই ঠিকঠাক করেছে। ভুলগুলো কম হয়েছে বলেই জিতেছি। যেদিন ভুল বেশি হয়েছে হেরেছি।
যখন সাফল্য পান না, ছন্দ ফিরে পেতে প্রেরণা কোথা থেকে নেন?
মানুষের জীবনই এ রকম। মানুষের জীবন সব সময় খারাপ যায় না। আবার সব সময় ভালোও যায় না। ওঠা-নামা থাকবেই। এটা স্বাভাবিকভাবে নিতে হয়। দলের খারাপ সময়ে অনেক সময় পরিবর্তন আনা দরকার হয়ে পড়ে। আবার ভালো সময়ে মানুষ ধাঁধায় পড়ে যায়, রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ে। খারাপ সময়ের চেয়ে ভালো সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে ২০০তম উইকেট পেলেন। চোটের সঙ্গে লড়াই না করতে হলে নামের পাশে উইকেটসংখ্যা তো আরও বেশি হতো…
না, এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। এ নিয়ে যদি ভাবি, তাহলে বলতে হবে বহু আগেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত। প্রথম চোটের পরই কত খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারই তো শেষ হয়ে যায়! সেখানে সাত-আটটা চোটের পরও খেলছি। আর এখন নিজের ক্যারিয়ারের দিকে তাকিয়ে মাঠে নামি না। শুরুর দিনগুলোয় যেভাবে খেলা উপভোগ করেছি, এখনো তা-ই। প্রতিটি ম্যাচের আগে ভাবি, বাংলাদেশ দলের এই জার্সিটা একটা সময় খুলে রাখতে হবে। এ জার্সিতে সম্ভাব্য যা কিছু করার, মাঠেই করতে হবে। খেলা ছাড়ার পর চাইলেও দেশের হয়ে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে কিছু করতে পারব না। এ কারণে ব্যক্তিগত কোনো অর্জন বা চাওয়া-পাওয়ার দিকে তাকিয়ে খেলতে নামি না।
১৪ বছর ক্যারিয়ারে কোনো বিতর্ক নেই। এমন সময় খেলেছেন, চারপাশে নানা প্রলোভন। আপনার আশেপাশের কেউ কেউ সে পথে পাও বাড়িয়েছে। কিন্তু আপনার এমন শুদ্ধ খেলোয়াড়ি জীবনের রহস্য কী?
বলা কঠিন। অন্যায় কাজ যে করিনি, বুক ফুলিয়ে বলতে পারব না। কোনো মানুষ যদি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে, জীবনে কোনো অন্যায় কাজ করেনি, সেটা মিথ্যা বলা হবে। তবে জীবনে একটি দর্শনই মেনে চলার চেষ্টা করেছি, যেখানেই চলাফেরা করি না কেন, মন খুলে চলব। কোথায় কোন কাজটি করা উচিত আর কোনটি উচিত নয়, এতটুকু বোধ-বুদ্ধি নিশ্চয় হয়েছে। এটা সব সময় ধরে রাখার চেষ্টা করি। মানুষের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে, তখন সে অন্যায় করে ফেলে। তবে এটা বলতে পারি, খেলাটার সঙ্গে কখনো অসততা করিনি। খেলতে নামার আগে ভেবেছি, এ মাঠই আমার ঘর। মাঠকে মনেপ্রাণে ভালোবেসেছি। বারবার চোটে পড়েছি খেলতে এসেই। এটা ঠিক, খেলা আমার রুটি-রুজি। জীবনে যা অর্জন করেছি, এ খেলার মাধ্যমেই। এ কারণে খেলাটার প্রতি সব সময়ই সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। তবে যেটা বললেন, হয়তো কোনো বিতর্ক তৈরি হয়নি। কিন্তু বিতর্ক তৈরি হয় এমন কাজ থেকে বিরত রাখার বোধ নিশ্চয় সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী চললে বিশ্বাস করি, বিতর্ক তৈরি হবে না।
এ জীবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কম কথা বলতে হয়নি। সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নটা বেশি উপভোগ করেন?
পৃথিবীতে একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে ভালো লাগার প্রশ্ন হতে পারে—‘ভাই কেমন আছেন?’
নিজে সাংবাদিক হলে মাশরাফিকে প্রথম কোন প্রশ্নটা করতেন?
ম্যাচ হারলে বলতাম, কেন ম্যাচ হারলেন কারণ বলেন (হাসি)। আর জিতলে বলতাম, আপনার অনুভূতি কী (আবার হাসি)। আর খেলা না থাকলে জিজ্ঞেস করতাম, সময় কাটছে কীভাবে?
কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে?
নিজের নয়, সব খেলোয়াড়দের মনের কথাই বলব। খারাপ সময়ে খেলোয়াড়ের মনের অবস্থা কেউ বুঝতে চায় না। এটা মিডিয়াতেই বেশি দেখা যায়। তখন খেলোয়াড়ের মনে হয় যেন মরুভূমিতে চলে এসেছে! তাঁর পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই! বলব না, এ সময় খেলোয়াড়ের পক্ষ নেওয়া হোক। বলব না, তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা না হোক। তবে তার সমস্যাটা গঠনমূলকভাবে তুলে ধরা কিংবা দারুণ কিছু পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এ সময়ে একচেটিয়া সমালোচনা হলে ফেসবুক কিংবা এমন নানা মাধ্যম হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটা আরও সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা, ভাবা দরকার।
মানুষ আপনাকে এত ভালোবাসে কেন?
আমি মানুষকে ভালোবাসি, সেটা জানি। মানুষের দোয়ায় এখনো খেলে যাচ্ছি। আর দোয়া মানেই তো ভালোবাসা।
তবে সে ভালোবাসার পরিমাণটা আপনার প্রতি বেশি!
কীভাবে বুঝলেন?
সামগ্রিক চিত্র তো তা-ই বলে।
এসব বুঝতে না চাওয়াই ভালো। যখন বুঝতে যাবেন, মনে একপ্রকার আত্মতুষ্টি ভর করবে। আর আত্মতুষ্টি মানুষের অধঃপতনের প্রথম কারণ। সবার কাছে দোয়া চাই। সেটা খেলোয়াড়ি হোক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে।
সব বাবার মতোই নিশ্চয় সন্তানদের ভীষণ ভালোবাসেন। ওদের মধ্যে কী স্বপ্ন দেখেন?
আল্লাহ যা কপালে রেখেছে তাই হবে। তবে স্বপ্ন দেখি, মনুষ্যত্ব যেন ঠিক থাকে। সৎ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলে। টাকা-পয়সার প্রয়োজন আছে। তবে টাকা-পয়সাকে যেন বড় না ভাবে। ভাবলে অসততা চলে আসতে পারে। আমরা একান্নবর্তী পরিবার। সবাইকে নিয়ে যেন মিলেমিশে থাকতে পারে, এটাই চাওয়া।
ক্রিকেট থেকে সবচেয়ে বড় পাওয়া
বাংলাদেশের হয়ে খেলি আর মানুষের ভালোবাসা—এ দুটোই বড় পাওয়া।
জুতা-ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার আগে বাংলাদেশকে কোন পর্যায়ে দেখে যেতে চান?
কবে তুলে রাখব বলতে পারছি না। দল যেন এ অবস্থান থেকে আরও ওপরে যেতে পারে, দেখে যেতে চাই।
সংবাদমাধ্যমে আপনার অবসরভাবনা নিয়ে সংবাদ এসেছে। সত্যি কি অবসর ভাবনা চলে এসেছে?
২০১৯ বিশ্বকাপের পর অবসর (মৃদু হাসি)! পরিষ্কার উত্তর হচ্ছে, এখনো খেলাকে উপভোগ করছি। শারীরিকভাবে ফিট আছি। বয়স ৩২। কাজেই অবসর নিয়ে ভাবার প্রশ্ন আসে না। সামর্থ্য অনুযায়ী দলকে আরও সেবা দিতে চাই। অবশ্য পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়লে কিছু করার নেই। তবে ইচ্ছে, ভালো সময়ে থেকেই দলকে বিদায় জানানো।
আরেকজন মাশরাফি কি পাবে বাংলাদেশ?
এখন কত মাশরাফি দেশে! আসলে অনেক ভালো খেলোয়াড় আসছে জাতীয় দলে। তবে প্রত্যাশা, তারা যেন ১০-১২ বছর ধারাবাহিক পারফর্ম করে খেলে যায়। এখন বিশ্বে অনেক বড় বড় টুর্নামেন্ট হচ্ছে। সেগুলোতে আমাদের খেলোয়াড়েরা খেলুক। তবে ভারসাম্য বজায় রেখে বাংলাদেশকেই যেন সেরাটা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০০:০৬ ৩৬৩ বার পঠিত