শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০১৫

এনবিআর সদস্যকে গুলির পেছনে !

Home Page » প্রথমপাতা » এনবিআর সদস্যকে গুলির পেছনে !
শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০১৫



Picture201437982667বঙ্গনিউজ ডটকমঃরাজধানীর বনানীতে এনবিআর সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদারকে গুলি করার পেছনে এক চিহ্নিত গডফাদার জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ওই গডফাদারের নির্দেশেই ভাড়াটিয়া কিলাররা তার ওপর হামলা চালায়। তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ এ বিষয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে।

এনবিআর সদস্যকে যারা গুলি করেছিল তাদের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  এ কথা জানান।

গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা এনামুল হক হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেনের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার প্রায় তিন মাস পর রাজধানীর উত্তরা, কুড়িল ও ডেমরা থেকে পাঁচ হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, একজন রাজনৈতিক গডফাদারের নির্দেশে তারা এনবিআর সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ জন্য তারা তিন মাস আগে থেকে জাহাঙ্গীরের অফিস ও বাসার আশপাশে নজরদারি শুরু করে। এনবিআর সদস্যের ছবি হামলাকারীদের কাছে আগেই সরবরাহ করা হয়।

এনামুল হক বলেন, হত্যার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা গেছে। গডফাদার সম্পর্কেও মোটামুটি ধারণা পাওয়া গেছে। তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় গডফাদার গ্রেফতার হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে সবকিছু জানানো হবে।

এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. স্নিগ্ধ আক্তার হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  বলেন, তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃতদের নাম এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে আটককৃতরা এরই মধ্যে হামলার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আবারও তাদের রিমান্ডে আনা হতে পারে।

সহকারী কমিশনার আরো বলেন, যারা এনবিআর সদস্যকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেছিল তারা প্রফেশনাল কিলার। এর মধ্যে দুজন সম্প্রতি জেল খেটে বের হয়েছে। এদের একজন পাঁচ বছর ও আরেকজন দুই বছর জেল খাটার পর মুক্ত হয়।

এ ছাড়া তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। পেশাগত শত্রুতার জের ধরে এনবিআরের ওই কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়। এ ঘটনার মূল হোতাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বনানীর ২ নম্বর সড়কের কাস্টমস অফিসার্স কোয়ার্টারের ভেতরের ফাঁকা জায়গায় হাঁটাহাঁটির সময় ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার গুলিবিদ্ধ হন। সন্ধ্যার দিকে একটি প্রাইভেট কারযোগে চার-পাঁচজন যুবক ওই কোয়ার্টার এলাকায় ঢুকে জাহাঙ্গীর হোসেনকে লক্ষ্য করে অতর্কিত গুলি করে। একটি গুলি জাহাঙ্গীর হোসেনের কোমরের নিচে বিদ্ধ হয়।
এ সময় কোয়ার্টারের দারোয়ানরা দ্রুত গেট বন্ধ করে দিলে দারোয়ানদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রাইভেট কারে করেই পালিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। জাহাঙ্গীর হোসেনকে দ্রুত উদ্ধার করে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উল্লেখ্য, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে গত দু বছর ধরে শাহজালাল বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের শাহপরান বিমানবন্দরে একাধিক অভিযানে বেশ কয়েকটি সোনার চালান আটক করা হয়। ওই সব আটকের সূত্র ধরে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চোরাচালানি চক্রের একাধিক সদস্য গ্রেফতারও হয়।

পুলিশ জানায়, সবশেষ গত ৫ মার্চ শুল্ক গোয়েন্দার ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে ২০ কোটি টাকা মূল্যমানের অবৈধ প্রসাধনী আটক করা হয়। এসব ঘটনায় চোরাকারবারি চক্র শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ওই কর্মকর্তাকে টার্গেট করে গুলি করতে পারে বলে পুলিশের সন্দেহ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই শেখ শাহীন মিয়া জানান, মামলাটি গোয়েন্দা বিভাগে হস্তান্তরের আগে গুলিবিদ্ধ এনবিআর কর্মকর্তার পরিবার ও কর্মস্থলের লোকজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছিল। বনানীর ওই কাস্টমস কোয়ার্টার এলাকায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও (সিসিটিভি) ছিল না। তাই অন্যান্য উপায়ে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হয়েছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার এনবিআরের বৃহত্তর করদাতা ইউনিটের মূসক নীতি দপ্তরের সদস্য। কর্মস্থল বা পারিবারিকভাবে তার কোনো শত্রু আছে বলে জানা যায়নি।

সবশেষ, জাহাঙ্গীর হোসেনকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার প্রায় তিন মাস পর বাসায় নেওয়া হয়। এর আগে একই হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার কোমরের নিচে বিদ্ধ এক রাউন্ড গুলি বের করা হয়। এখন কারো সঙ্গে দেখা করতে নিষেধ আছে তার।

মামলার বাদী এনবিআর কর্মকর্তার ছেলে মশিউর রহমান হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, তার বাবার সঙ্গে প্রকাশ্যে কারও সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে বলে মনে করছেন না তারা। ঠিক কী কারণে তাকে গুলি করা হয়েছে পরিবারের সদস্যরা কেউ অনুমান করতে পারছেন না। তারা পুলিশি তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। অপারেশনের পর তিন মাস  হাঁটাচলায় বেশ সমস্যা হয়েছে। তবে এখন তার বাবার অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে বলে জানান মশিউর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৮:২৫   ২৬১ বার পঠিত