বুধবার, ২৯ জুলাই ২০১৫

শিশু নাজিম উদ্দিন হত্যা মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুল গ্রেপ্তার

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » শিশু নাজিম উদ্দিন হত্যা মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুল গ্রেপ্তার
বুধবার, ২৯ জুলাই ২০১৫



mu.jpeg  বঙ্গনিউজ ডটকমঃ শিশু নাজিম উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যার পর হাত-পা বেঁধে লাশ নদে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গত সোমবার গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র‍্যাব বলছে, সাইফুল ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী।
গত ১২ এপ্রিল রাজধানীর খিলক্ষেতের মাস্তুল এলাকায় কবুতর চুরির অভিযোগে নাজিমকে (১৪) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে হাত-পা বেঁধে লাশ বালু নদে ফেলে দেওয়া হয়। শিশুটি নদের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ে খুনিরা। হত্যাকাণ্ডের এই দৃশ্য ১৩ জুলাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
র‍্যাব-১-এর কর্মকর্তারা বলেন, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে প্রচার হলে র্যাবের গোয়েন্দা দল এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুলসহ হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ২৩ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। এর ভিত্তিতে র‍্যাব-১-এর একটি দল রূপগঞ্জে সাইফুলের (২৬) শ্বশুরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
নাজিমের বাসা রাজধানীর নাখালপাড়ায়। সে একই এলাকার পিকআপ ভ্যানের চালক রাজনের সহকারী। ১১ এপ্রিল রাজনের সঙ্গে বেড়ানোর কথা বলে নাজিম বাসা থেকে বের হয়। পরে বাসায় না ফেরায় পরিবারের লোকজন রাজনের কাছে জানতে পারে, কবুতর চোর সন্দেহে নাজিমকে মাস্তুল গ্রামে লোকজন পিটিয়েছে।
র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল র‍্যাবকে বলেছেন, চার ভাই ইসমাইল, নাসির উদ্দিন, ইউনুছ ও ইব্রাহিম মাস্তুল গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের বাসায় কবুতর চুরির সন্দেহে ১২ এপ্রিল তাঁরা নাজিমকে আটক করে। পরে রাত তিনটার দিকে স্থানীয় মসজিদের মাইক থেকে গরুচোর আটকের ঘোষণা দেওয়া হয়। উত্তেজিত জনতা নাজিমকে পিটুনি দিয়ে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের সামনে প্রায় নিস্তেজ অবস্থায় ফেলে রাখে।
সাইফুল বলেন, এরপর তিনি, সজীব, নয়ন, সালাউদ্দিন ও আবদুস সালামসহ কয়েকজন নাজিমকে আবারও পেটান। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে মুমূর্ষু নাজিমকে তাঁরা নদে ডুবিয়ে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। একপর্যায়ে ওই চায়ের দোকানের সামনে পড়ে থাকা নাজিমকে একটি ভ্যানগাড়িতে করে বালু নদের পাড়ে নিয়ে পানিতে ফেলে দেন।
র‍্যাব-১-এর পরিচালক তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, সেদিনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নদীতে ফেলে দেওয়ার আগে নাজিমের শরীরে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে লাথি দিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পানিতে ফেলে দেওয়ার পরও নাজিম কিছুক্ষণ পানিতে ভেসে ছিল। পরে তাকে টেনেহিঁচড়ে নদীর পাড়ে তোলা হয়। তারপর সাইফুল ও সালাম তার হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে আবার নদীতে ফেলে দেন। এরপর নাজিম পানিতে ডুবে যায়। ১৭ এপ্রিল ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নাজিমের লাশ ভেসে ওঠে। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে তার লাশ নারায়ণগঞ্জে দাফন করা হয়।
র্যা বের এই পরিচালক বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুল এজাহারভুক্ত আসামি। নাজিম হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ২৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
র‍্যাব জানায়, খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ১৮ এপ্রিল নাজিমের মা-বাবা রূপগঞ্জ থানায় যান। পুলিশের তুলে রাখা ছবি দেখে তাঁরা নাজিমকে শনাক্ত করেন। স্থানীয় এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ঘটনা শুনে নাজিমের বাবা খিলক্ষেত থানায় সাতজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরপর পুলিশ রাজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫২:১৭   ৩৩৮ বার পঠিত