মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই ২০১৫
‘মিসাইলম্যান’এ পি জে আব্দুল কালাম আর নেই
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ‘মিসাইলম্যান’এ পি জে আব্দুল কালাম আর নেইবঙ্গনিউজ ডটকমঃ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেও কথা বলতে ও শোনাতেই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালাম, সেই বক্তৃতা অনুষ্ঠান থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।
৮৪ বছর বয়সে সোমবার মারা যান ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি, যাকে তার দেশের মানুষ ‘মিসাইলম্যান’ নামেই ডাকতেন।
গত দুই দশকে এক কোটি ৮০ লাখ তরুণের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা গত বছর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
বিষয়টি উঠে এসেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শোক বার্তায়ও। এক টুইটে তিনি লিখেছেন, “ড. কালাম মানুষের সঙ্গ উপভোগ করতেন…. তিনি ছাত্রদের ভালোবাসতেন, শেষ সময়টিও তাদের সঙ্গেই ছিলেন তিনি।”
সোমবার সন্ধ্যায় মেঘালয়ের শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন কালাম, সেখানেই হঠাৎ ঢলে পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে।
কিন্তু ততক্ষণে শেষ, কিছুক্ষণের মধ্যে ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতির হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
কালামের মৃত্যুর খবর শুনে শিলংয়ের অনেক মানুষ বেথানি হাসপাতালের সামনে ভিড় জমান, তাদের মুখে ছিল ‘কালাম অমর রাহে’ স্লোগান।
ওই হাসপাতাল থেকে মরদেহ নেওয়া হয় সামরিক হাসপাতালে। সেখান থেকে মঙ্গলবার মরদেহ নয়া দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান মেঘালয়ের উপ মুখ্যমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লালু।
ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি ছিলেন ড. কালাম, দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত, পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ খেতাব।
তার মৃত্যুতে আগামী সাত দিন জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে ভারত সরকার।
অকৃতদার এই বিজ্ঞানী একাধিকবার এসেছিলেন বাংলাদেশে। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক জানিয়েছেন।
একই সংস্কৃতি এবং একই ঐতিহ্যের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলে মনে করতেন এ পি জে কালাম।
১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর তামিলনাড়ুর একটি ছোট শহরে জন্ম কালামের। শহর ছোট্ট হলেও বড় স্বপ্ন নিয়েই পৃথিবীর পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি।
গত বছর ঢাকা সফরের সময় তরুণদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেছিলেন, সবগুলো স্বপ্ন অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত থামা যাবে না।
“স্বপ্নকে হতে হবে বিশাল। জীবনে ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ একটি অপরাধ।”
স্বচ্ছলতার শৈশব ছিল না কালামের, খাবার জোটাতে আট বছর বয়সে যে খবরের কাগজও বিক্রি করতে হয়েছিল, তাও বাংলাদেশের তরুণদের বলেছিলেন তিনি।
পরে বিজ্ঞানী হিসেবে নাম কুড়ালেও সেই শৈশবে পারস্যের কবি জালালউদ্দিন রুমির একটি কবিতাই কালামের হৃদয়ে স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিল, যে কবিতাটি গত বছর ঢাকার তরুণদের আবৃত্তি করে শোনান তিনি।
“আমি সম্ভাবনা নিয়ে জন্মেছি। আমি জন্মেছি মঙ্গল আর বিশ্বাস নিয়ে। আমি এসেছি স্বপ্ন নিয়ে। মহৎ লক্ষ্য নিয়েই আমার জন্ম। হামাগুড়ির জীবন আমার জন্য নয়, কারণ আমি ডানা নিয়ে এসেছি। আমি উড়ব, উড়ব, আমি উড়বই।”
সেই স্বপ্নের পথে ছুটে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে ভারতের প্রথম মহাকাশ যান এসএলভি-৩ তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখেন কালাম। ওই মহাকাশ যান দিয়েই ১৯৮০ সালে ভারত প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র রোহিনী উৎক্ষেপণ করে।
ভারতের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা (স্ট্র্যাটেজিক মিসাইল সিস্টেমস) এবং ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষায়ও প্রধান ভূমিকা রাখেন এই বিজ্ঞানী।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় কাজ করেন।
অবশ্য পরে নিজেকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচারে যুক্ত করেন কালাম।
“পারমাণবিক শক্তি তখন অমঙ্গলের, যখন তা মানব উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্র ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা হয়,” ঢাকায় গত বছর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন তিনি।
কালামের লেখা ২৯টি বইয়ের মধ্যে ‘উইংস অব ফায়ার’ এ ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তার জীবনের ঘটনাক্রম উঠে এসেছে। বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।
ওই সাফল্যের অনুপ্রেরণায় তিনি লেখেন ‘টার্নিং পয়েন্টস’ নামে আরেকটি বই, যাতে নিজের সফলতার পথে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিনি তুলে আনেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৩:২৬ ১১৬২ বার পঠিত