মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই ২০১৫
সড়ক দূর্ঘটনায় আর কত কান্না??
Home Page » সারাদেশ » সড়ক দূর্ঘটনায় আর কত কান্না??বঙ্গনিউজ ডটকমঃসকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার পাতা, অনলাইন অথবা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখতেই প্রথমেই চোখে পড়ে মৃত্যু। শুরু হয় তাজা প্রাণ অকাতরে সড়কে বিলিয়ে দিয়ে দিন শুরু এবং রাত্রিতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই মৃত্যুর মিছিল কয়েক ডজনে পরিণত হওয়ার সংবাদ শুনে ঘুমাতে যাওয়া। প্রত্যেকটি দিন অসহায় মানুষের তাজা রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে পিছঢালা পথ। এ মৃত্যুর মিছিল যেন শেষ হবার নয়। রাস্তায় বের হওয়া আর মৃত্যুকে ডেকে কাছে নিয়ে হাতে-হাত রেখে চলা যেন প্রায় এক বিন্দুতে এসে মিশেছে। বাস্তবতা সড়ক-মহাসড়ক যেন আস্ত আজরাঈলেরই প্রতিচ্ছবি।
পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে জন্মস্থানের ভালোবাসার টানে গিয়েছিলাম বাড়িতে, সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আবার সুস্থ শরীরে ভালোভাবে কর্মস্থলে ফিরেও বটে এসছি, তবে বাড়িতে যাওয়া এবং আসার সময় প্রতিটি মুহুর্ত যেন ভয়ে তঠস্থ থাকতে হয়েছে যে কখন দূর্ঘটনা ঘটে যায়। অন্য গাড়ি বাঁশি বাঁজানো অথবা দ্রত চালানোর আওয়াজ শুনলেই মনে হয় এই বুঝি জীবনটা গেল। আর ঠিক এরকম ভাবেই রাস্তায় বের হয়ে প্রায় প্রতিটি মানুষকে বর্তমান সময়ে থাকতে হয় সড়ক দূর্ঘটনার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত।
বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরার দিন দেখলাম রাস্তার পাশে সড়ক দূর্ঘটনা কবলিত দুটি বাসের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অংশ বিশেষ। আর সেই ভয়ানক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৭ জন মানুষ। এই ১৭টি তাজা প্রাণ হারিয়ে গেলেন এক নিমিষেই। পুরো একটি মাস রোযা রাখার পর তাদের কপালে এই দুঃখের আনন্দ লেখা ছিল। তারা পেলেন না আত্নীয়-স্বজন, মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-সন্তানদের আদর ভালোবাসা। আনন্দ ভালোবাসার পরিবর্তে তাদের লাল রক্তে রঞ্জিত হলো মহসড়কের কালো পথ। মুহুর্তেই মহাসড়ক নামের আজরাঈল কেড়ে নিল এতগুলি প্রাণ।
পবিত্র ঈদের এই খুশি মূলত আনন্দে পরিণত না হয়ে অনেক পরিবারেই মেনে এসেছে দু:খ, শোক-মাতম ও কষ্টে ভড়পুর। ঈদের এই কয়েক দিনে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে আড়াইশত মানুষ। যদিও এই হিসেবের চেয়েও অনেক বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন তারপরও মাত্র সাত দিনে আড়াইশত মানুষ প্রাণ হারালে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ গেল ৩৬ জনের। যেখানে প্রতি ঘন্টায় প্রাণ যাচ্ছে প্রায় ২ জন মানুষের। আর এভাবেই পবিত্র ঈদের এই আনন্দ আমাদের সড়ক বিভাগ, ত্রুটিযুক্ত যানবাহন এবং চালকের অদক্ষতায় হারিয়ে যাচ্ছে রঙ্গিন স্বপ্ন বুনে এগিয়ে চলা মানুষগুলোর সকল স্বপ্ন।
আর কত কান্না? আর কত রক্ত? আর কত দু:খ? আর কত শোকের মাতম? আর কত মায়ের কোল খালির দীর্ঘ সারি? এর কোন শেষ আছে কি? এর কি কোন সুরাহা হবে? এর কি কোন বিচার হবে? আর বিচারে আমি কি আমার প্রিয়জনকে ফিরে পাবো? প্রকৃতপক্ষে নিছকই এসব প্রশ্ন এসব জিজ্ঞাসা, এর কোন সদুত্তর কারো কাছেই নেই। যতদিন না পর্যন্ত আমাদের এই বিভাগের যথাযথ কতৃপক্ষ ঘুষ নিয়ে পকেটে টাকা পুরে অবৈধ ত্রুটিযুক্ত যানবাহন ত্রুটিমুক্ত না ঘোষনা করবেন। যতদনি না পর্যন্ত স্কুলের গন্ডিতে না গিয়ে টাকার বিনিময়ে সনদপত্র নিয়ে সেই সনদে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া বন্ধ না হচ্ছে। যতদিন না পর্যন্ত সড়ক মেরামতের টাকায় কাজ না করে বড় বড় পাঞ্জাবি কিনে গায়ে পরে বিশাল বিশাল লেকচার শেষ না হচ্ছে। আর যতদিন পর্যন্ত মূলত এই যথাযথ কতৃপক্ষের ঘুম না ভেঙ্গে উদাসীন থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ কান্নার রোল থামার কোন লক্ষণ খুঁজে পাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব হয়ে উঠবে বলে মনে করা দূহরই বটে।
আমাদের জন্নভূমি এ প্রিয় দেশে এমন হয়তো খুব কম পরিবারই আছেন যাদের কোন না কোন আত্নীয়-স্বজন সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেননি। প্রায় প্রত্যেকেরই কোন প্রিয় মানুষ মহাসড়কে দূর্ঘটনার কড়াল গ্রাসে চলে গেছেন পরপারে। সড়ক দূর্ঘটনার ভয়ানক এই চিত্রের দিকে একটু তাকালে দেখা যায় বাংলাদেশে যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে গত বছর (২০১৪ সাল) ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৮ হাজার ৫৮৯ জন। গড়ে প্রতিদিন ২৪ জন লোক মারা গেছে। এসময় আহত হয়েছে ১৭ হাজার ৫২৪ জন। এছাড়া চলতি বছরের এ পর্যন্ত তাদের পরিসংখ্যানে সারা দেশে ৪ হাজার ২০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত হয়েছে ৫ হাজার ৮৯০ জন। আহতের সংখ্যা ৯ হাজার ২৭১ জন। তাহলে এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে কত মানুষকে অসহায়ের মত জীবন বিলিয়ে দিতে হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন নিমিষেই ধুলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। একটা যুদ্ধেও এত বিশাল জনগোষ্ঠি অসহায়ের মত জীবন বিলিয়ে দেয়ার নজির ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া সত্যি দুস্কর।
পরিশেষে বলতে চাই, “জন্মিলে মরিতে হবে” এই চিরন্তন সত্য আমরা সবাই জানি, মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের সবাইকে ফিরে যেতেই হবে। কিন্তু এই ফেরাটা এভাবে ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে চলে যেতে হবে? দূর্ঘটনায় হাত, পা, চোখ, মুখ অথবা মাথাটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে আমাদের প্রিয়জনদের চলে যেতে হবে যাহা আমাদের মেনে নেওয়া চড়ম দু:খ, যন্ত্রনা, বিস্বাদের। আমরা এইভাবে চলে যেতে চাইনা, ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আমরা চলে যেতে চাই না, আমরা চলে যেতে চাই সুস্থ্-স্বাভাবিকভাবে। আর সড়ক-মহাসড়কের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে অনুরোধ আপনারা আপনাদের লম্বা পকেট ভারি না করে অবৈধ, ত্রুটিযুক্ত যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করার যে সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে সেই নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স প্রদান করুন। আর সম্মানিত দরদী রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের নামে তাদের পকেট না ফুলিয়ে সদুপায়ে রাস্তা মেরামত করুণ। সর্বোপরি দেশ-দরদিরা আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দিন এবং সুস্থ্-স্বাভাবিক ভাবেই চলে যেতে দিন।
-
বাংলাদেশ সময়: ২:৩৪:০০ ২২৭ বার পঠিত