শনিবার, ২৫ মে ২০১৩

নিউইয়র্কে ২২তম আন্তর্জাতিক বাংলা উত্সব ও বইমেলা শুরু

Home Page » জাতীয় » নিউইয়র্কে ২২তম আন্তর্জাতিক বাংলা উত্সব ও বইমেলা শুরু
শনিবার, ২৫ মে ২০১৩



image_43448.jpegবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বাইরে দমকা হাওয়া, কখনো আবার ঝড়ো বৃষ্টি। কিন্তু তাতেও বাঁধ মানেনি মনেপ্রাণে ষোল আনা বাঙালীর মনপ্রাণ। বিদেশ-বিভূঁইয়ে প্রাণের উত্সবে যোগ দিতে সময়কে একধাপ পেছনে ফেলে প্রবাসী বাঙালীরা স্থানীয় সময় শুক্রবার জড়ো হয়েছিলেন নিউইয়র্কের বাঙালী অধ্যুষিত এস্টোরিয়ার পিএস-১১২ মিলনায়তনে। চার দেয়ালের বাইরের পরিবেশ যাই হোক না কেন, ভেতরে ম্যান্ডালিনের সুরে বিস্ময় বাউল রেজাউল করিমের কণ্ঠে লালনের গান আর বর্ণিল সাজ আর আবহে পুরো স্কুলপ্রাঙ্গণ হয়ে উঠলো যেন একখ– বাংলাদেশ।

ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ৭টা। বিশাল আয়তনের রবীন্দ্র মঞ্চের আলো তখনো জ্বলেনি। প্রধান ফটকের মুখে অপেক্ষমাণ শত বাঙালীর প্রিয়মুখ। বাংলার কবি নির্মলেন্দু গুণ আসবেন। ৭টা বাজার কিছু সময় পরই তিনি এলেন, আর ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান দিলেন নিউইয়র্কের ২২তম আন্তর্জাতিক বাংলা উত্সব ও বইমেলার। মুহূর্তেই আলোকিত হয়ে ওঠলো সব বাঙালীর মনপ্রাণ। শুরু হলো আনন্দোত্সবের, যেন এদিনটির জন্য পুরো বছর অপেক্ষা করেছেন তারা। ফিতা কাটার অনুষ্ঠানের আলোকবর্তিকা শুধু নির্মলেন্দু গুণই নন, সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের কীর্তিমান লেখক আনিসুল হক, আধুনিক সাংবাদিকতার পথিকৃত নাঈমুল ইসলাম খানসহ অনেক গুণীজন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে ছিলেন এবারের উত্সবের আহ্বায়ক নাট্য ব্যক্তিত্ব জামালউদ্দিন হোসেন, আয়োজক প্রতিষ্ঠান মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিত্ সাহা, নাট্যাভিনেত্রী রওশন আরা হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম রেজানূর, মুক্তধারার অন্যতম পরিচালক রুমা সাহা, সাংবাদিক ও গীতিকার জীবন চৌধুরী প্রমুখ।

ফিতা কাটা শেষে রবীন্দ্র মঞ্চের দিকে পা ফেলতেই পুরো হলরুম জুড়েই আলোর ঝলকানি। এসময় অতিথিদের স্বাগত জানান গেলবারের উত্সবের সফল ও প্রথম নারী আহ্বায়ক এবং এবারের উত্সবের অন্যতম উপদেষ্টা সাংবাদিক নাসিমুন নাহার (নিনি ওয়াহেদ)। এরপরই রবীন্দ্র মঞ্চে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানমালা। শুরুতেই জীবন বিশ্বাসের নেতৃত্বে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর ‘জেগে আছি অহর্নিশ’ শীর্ষক গান, অনুপ কুমার দাশের নেতৃত্বে ‘আবহমান বাংলা’ শীর্ষক বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর শিল্পীদের নৃত্য, পরে কাবেরী দাসের পরিচালনায় ‘আমার বাংলাদেশ’ শীর্ষক সঙ্গীত পরিষদের গান সবাইকে দারুণ বিমোহিত করে। এরপরই মঞ্চ আলোকিত করেন অতিথিরা। একে একে তারা প্রজ্জ্বলন করেন মঙ্গলপ্রদীপ। ছিল শুভেচ্ছা বক্তৃতাও। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক আনিসুল হক, প–িত রমেশ মিশ্র, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস এর অধ্যাপক উইনস্টন ই. ল্যাংলে, পিএস-১১২ এর প্রিন্সিপ্যাল র্যাফায়েল ক্যাম্পস গ্যাটজেনস প্রমূখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন উত্সবের আহ্বায়ক জামালউদ্দিন হোসেন।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর শুরু হয় তিন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান ‘একই সূত্রে গাঁথা’। এতে অংশ নেন প–িত রামকানাই দাস, কাবেরী দাস, পারমিতা মুমু ও স্মৃতিকণা দাস। জামাল উদ্দিন হোসেনের রচনা ও নির্দেশনায় অতিথিরা উপভোগ করেন নাটক ‘জাগরণ’। আর এতে অভিনয় করেন জামালউদ্দিন হোসেন ও রওশন আরা হোসেন দম্পতি।

এরপর বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গণের উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিংবদন্তী জামালউদ্দিন হোসেনকে সম্মাননা প্রদান করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের মিনিস্টার (কালচারাল) ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মমতাজউদ্্দীন আহমদ। শেষে অঞ্জনা রায়ের সেতারের সুর সবাইকে দারুণ তৃপ্ত করে। অনুষ্ঠানস্থলে এনে দেয় অন্যরতম আবহ। যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম রেজানূর সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

এদিকে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উত্সব ও বইমেলা চলবে রবিবার পর্যন্ত। নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই উত্সবে প্রতি বছরের মতো এবারো বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অনেক লেখক, সাহিত্যিক, কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী যোগ দিয়েছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে উত্সবের সর্বশেষ প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন উত্সবের আহ্বায়ক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দীন হোসেন। তিনি জানান, এবারের উত্সবে যোগ দিচ্ছেন কবি শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণ, আনিসুল হক, বিনয় হাজরা, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মমতাজউদদীন আহমদ, ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, ড. আলী রীয়াজ, জ্যোতির্ময় দত্ত, মীনাক্ষি দত্ত, অর্ভিন ঘোষ, সব্যসাচী ঘোষ দস্তিদার, দ্বিজেন ভট্টাচার্য, আলোলিকা মুখোপাধ্যায়সহ অনেকেই। তিনি আরো জানান, উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত কবি লেখক-সাহিত্যিকদের একটি মিলনমেলায় পরিণত হবে এই উত্সব ও বইমেলা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, প্রবাসে এ ধরনের আয়োজনে যোগ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তিনি বলেন, এ মেলা সারা বিশ্বে বাঙালীর উপস্থিতিকে আরো সরব করবে।

১৯৯২ সালে মুক্তধারা নিউইয়র্ক ও বাঙালীর চেতনা মঞ্চ জাতিসংঘের সামনে শহীদ মিনার স্থাপন করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বাংলা একাডেমীর আদলে আমেরিকায় বইমেলার শুরু করে। ১৯৯৭ সাল থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এ মেলার আয়োজন করে আসছে।

এবছর বইমেলায় বাংলাদেশ থেকে আগামী প্রকাশনী, অনন্যা, সময় প্রকাশন, বিদ্যাপ্রকাশ, শিখা প্রকাশনী, বাংলাপ্রকাশ, স্টুডেন্ট ওয়েজ, নজরুল ইন্সটিটিউট, প্রথমা এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আনন্দ পাবলিশার্স, সাহিত্যম, পত্রভারতী ও বিশ্বভারতী যোগ দিচ্ছে। নিউইয়র্কের মুক্তধারা এবং লেবুভাই ফাউন্ডেশনও বইমেলায় যোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশের ফুল নিয়ে এবছর মেলায় আলোকচিত্র প্রদর্শনী করছেন সাংবাদিক মোকাররম হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক নাসিমুন নাহার নিনি, নাট্যাভিনেত্রী রওশন আরা হোসেন, সংগঠক ফাহিম রেজানূর, সাংবাদিক আমান-উদ-দৌলা, জীবন চৌধুরী ও ইউসুফ সা’দ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:০১:৪১   ৫৬৬ বার পঠিত