সোমবার, ২৭ জুলাই ২০১৫
সবচেয়ে বড় হিরো
Home Page » বিনোদন » সবচেয়ে বড় হিরোএখন পর্যন্ত অভিনয় করেছেন আট শরও বেশি ছবিতে। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতি ঈদে তাঁর অভিনীত কোনো না কোনো ছবি মুক্তি পাচ্ছে। ঢাকাই ছবির খল চরিত্রের অন্যতম সফল অভিনেতা মিশা সওদাগর। এবার ঈদেও মুক্তি পেয়েছে মিশা সওদাগর অভিনীত ছবি ‘লাভ ম্যারেজ’। বিভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরেছেন মনজুর কাদের।
এবার ঈদে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে, তার মধ্যে একটিতে আপনি অভিনয় করেছেন। আপনার ক্যারিয়ারে এমন কোনো ঈদ কি ছিল যেবার ছবি মুক্তি পায়নি?
খলনায়ক হিসেবে আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার ২৩ বছরের। প্রথম সাত বছর ঈদে আমার অভিনীত কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৫ বছর ঈদে আমার অভিনীত কোনো না কোনো ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এমন ঈদও গেছে যেবার মুক্তি পাওয়া সব ছবিতে আমি অভিনয় করেছি।
আপনাকে সবাই খল চরিত্রের অভিনেতা হিসেবেই বেশি চেনেন। নায়ক হওয়ার প্রস্তাব পেলে কী করবেন?
১৯৮৬ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমে নায়ক নির্বাচিত হই। ১৯৮৯ সালে নায়ক হিসেবে ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘চেতনা’ ছবিতে অভিনয় করি। এরপর ‘অমর সঙ্গী’ ছবিতেও আমি নায়ক ছিলাম। ২২ বছর ধরে আমি খল চরিত্রে অভিনয় করছি। এখন যদি কেউ আমাকে নায়ক হিসেবে চান, তাহলে গল্প দেখে সিদ্ধান্ত নেব। প্রধান চরিত্র হলে অবশ্যই করব। মানুষ তথাকথিত নায়ক বলতে যা বোঝায় তা নয়, গল্পের নায়ক হলে অবশ্যই করব। অ্যান্টি হিরো হলেও বেশির ভাগ ছবিতে দর্শকের হাততালি আমার পক্ষে নিয়ে এসেছি।
সিনেমায় আপনি খলনায়ক। বাস্তবে জীবনে মিশা সওদাগর কেমন?
কারও মনে কষ্ট দিয়ে নয়, সবাই যাতে সুন্দরভাবে হাসি-আনন্দে থাকতে পারে সেই চেষ্টাই করি। যেখানে অন্যায় দেখি সেখানে আমি প্রতিবাদী। আমি শান্তির পক্ষে। আমি আমার সন্তানদের সব চাহিদাই পূরণ করি। তাদের কাছে আমি শ্রেষ্ঠ বাবা। স্ত্রীর কাছে আদর্শবান স্বামী। আমার মনে হয়, আমিই সবচেয়ে বড় হিরো, যাকে নিয়ে কোনো স্ক্যান্ডাল নেই।
চলচ্চিত্রে আপনি অশুভ শক্তির পক্ষে। বাস্তবজীবনে শুভ-অশুভর লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমি অবশ্যই জানি যে, বাস্তব জীবনে শুভ-অশুভর লড়াইয়ে শুভর জয় নিশ্চিত হবে। সত্যের জয় অনিবার্য। আমি এটা বিশ্বাস করি। মিথ্যার মস্তিষ্কে বসে আমরা প্রতিনিয়ত সত্যের জয় দেখে আসছি। সামনেও তাই দেখব।
শিল্পী সমিতির মহাসচিব ছিলেন। গত নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। পরাজয়ের কারণ কী বলে মনে করেন?
এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে আমার তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই নির্বাচনী মনোভাব নিয়ে সদস্যদের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ করিনি। অনীহা আর যোগাযোগের অভাবে নির্বাচনে হেরেছি।
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ যোগাযোগের অভাব বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
নির্বাচনের আগে আমি পরিবারের সবাইকে নিয়ে হজে গিয়েছিলাম। তাই সদস্যদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। দেশে ফেরার পর সময় খুব একটা পাইনি। তাই সব প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া আমি কিন্তু নিজে নির্বাচনে দাঁড়াতেও চাইনি।
তাহলে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন কেন?
অনেক সময় অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়। আমার ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে।
কে বা কারা আপনাকে অনুরোধ করেছিলেন?
এটা আমি বলতে পারব না। বলতে চাইও না।
যাই হোক, শিল্পী সমিতির নতুন কমিটির কাজকর্ম আপনার কেমন লাগছে?
শিল্পী সমিতির নতুন কমিটির মেয়াদ ছয় মাস পার হতে চলছে। ১১ জুলাইয়ের ইফতার আয়োজন ছাড়া নতুন কমিটি তো এখন পর্যন্ত সেভাবে কোনো কাজই করেনি। আগে কমিটি কাজ করুক তারপর না হয় আলোচনা সমালোচনা করি। আমি দোয়া করি, নতুন কমিটি ভালোভাবে কাজ করুক। যেহেতু আমি সমিতিতে নেই, তাই ওদের বিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণে শিল্পী সমিতি কী করছে বলে আপনি মনে করেন? আর কী করা উচিত বলে আপনার মনে হয়?
শিল্পীদের কল্যাণে শিল্পী সমিতির উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এই যেমন, আমি যখন সাধারণ সম্পাদক ছিলাম তখন নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ঈদ ভাতা দিয়েছি। কমিটির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি চালানোর জন্য অনেক টাকার দরকার। সেই টাকা সমিতির ফান্ডে আদৌ আছে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। শিল্পী সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ছয় শর বেশি। সমিতির সব সদস্যকে বাধ্যতামূলকভাবে চাঁদা দিতে হবে। আবার যেসব শিল্পী আর্থিকভাবে বেশি সচ্ছল তাঁদের আরও বেশি অবদান রাখা উচিত। বিপুলসংখ্যক সদস্যের সংগঠন শুধু প্রেসিডেন্ট আর মহাসচিবের একার পক্ষে চালানো সম্ভব না। আমি চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিল্পী সমিতি কাজ করুক। একার পক্ষে কারওরই কিছু করার নেই।
আপনার দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে সফল নায়ক কে?
আগে নিয়মিতভাবে ব্যবসাসফল ছবির দেখা পাওয়া গেলেও এখন সেই চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। তারপরও কয়েক বছর ধরে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সফল নায়ক হলেন শাকিব খান। তবে ইদানীং আরিফিন শুভ উঠে আসছেন। তাঁর মধ্যে অন্যরকম একটা ব্যাপার আছে। ঢাকাই ছবির সুপারস্টার হওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা তাঁর আছে।
আপনি এখনো ঢাকাই ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করে চলছেন। আপনার পর খলনায়ক হিসেবে কাকে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় মনে হয়?
আমি কাউকেই দেখছি না। কেন জানি মনে হয়, খল চরিত্রে অভিনয়ের বীজ সেভাবে কেউই বপন করতে পারছে না। আমি চলচ্চিত্রে আসার আগে হুমায়ূন ফরীদি, রাজিব, এটিএম শামসুজ্জামানরা খল চরিত্রে অভিনয় করতেন। আমাকে তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। বলতে পারেন, তখন চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি খল চরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের দিয়ে গরম ছিল। এখন খল চরিত্রে অভিনয় করছেন অমিত হাসান, রুবেল, আলেকজান্ডার বো প্রমুখ। আমি আসলে কার নাম বলব বুঝে উঠতে পারছি না। তবে নতুনদের আমি স্বাগত জানাই।
এখন পর্যন্ত আপনার অভিনীত ছবির সংখ্যা কত?
আনুমানিক আট শর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছি।
কোন ছবিতে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হয়েছেন?
বদিউল আলম খোকনের ‘দানব’ ছবিতে অভিনয় করে আমি সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হয়েছি। এই ছবির নায়ক ছিলেন মান্না। আমার চরিত্রটিও ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার প্রথম ছবি কোনটি?
আমার প্রথম ছবি ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘চেতনা’। এ ছবির জন্য আমি কোনো পারিশ্রমিক পাইনি। তবে মোটেও মন খারাপ হয়নি। ছবিতে অভিনয় করতে পারার বিষয়টাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের।
ছোটবেলায় জীবনের লক্ষ্য কী ছিল?
ছোটবেলায় আমি ফুটবলার হতে চেয়েছিলাম।
কার অনুপ্রেরণায় চলচ্চিত্রে এলেন?
আমার মা আর বন্ধু মেজবাহউদ্দিন আহমেদ চাইতেন, আমি যেন চলচ্চিত্রে কাজ করি। একটা সময়ে আমার অনুপ্রেরণা ছিলেন হুমায়ূন ফরীদি।
আপনার স্ত্রী শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। দুজনের পেশা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় কী?
ছবির কাজের ব্যাপারে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা পাই। সে আমার অভিনয়ের সবচেয়ে বড় সমালোচক। কোনো ছবির প্রস্তাব পেলে তাঁর সঙ্গে প্রথম আলোচনা করি। আমার স্ত্রী শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকায় আমি সত্যিই অনেক বেশি গর্বিত।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৬:৪৮ ৩৩৬ বার পঠিত
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]