বুধবার, ৮ জুলাই ২০১৫

গম দেখতে খারাপ হলেও খেতে ভালো সংসদে খাদ্যমন্ত্রী

Home Page » প্রথমপাতা » গম দেখতে খারাপ হলেও খেতে ভালো সংসদে খাদ্যমন্ত্রী
বুধবার, ৮ জুলাই ২০১৫



বঙ্গনিউজ ডটকমঃ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, ব্রাজিল থেকে আনা ওই গম দেখতে খারাপ। তবে গুণগতমান ভালো। মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমানের এ সম্পর্কিত এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
সম্পূরক প্রশ্নে পীর ফজলুর রহমান বলেন, পচা গম নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। সাংসদরা তাদের এলাকায় এই গম ঢুকতে দিচ্ছেন না। পচা গম আমদানির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে কিনা?
জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কাগজে যে সব ছবি আসছে, এগুলোর কোনো ভিত্তি নাই।
পোকার কথা বলা হচ্ছে, যে ছবি আসছে, এই ছবির সঙ্গে আমাদের গুদামের গমের কোনো সাদৃশ্য নাই। এই ছবি আমাদের গমের ছবি না।’
‘অনেকেই বলে থাকেন, পোকা খাওয়া গম। পরিচর্যা না করলে পোকা যে কোনো গুদামে, আপনার বাড়িতে রাখেন, চাল রাখেন, গম রাখেন, সুষ্ঠু পরিচর্যা না করেন, ওষুধ না দেন, সেখানেও পোকা ধরবে।’
গম আমদানির প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই গম আমদানি করে খাদ্য অধিদপ্তর। আন্তর্জাতিক টেন্ডারে বলাই থাকে, ইসরাইল ছাড়া যে কোনো দেশের সঙ্গে টেন্ডার করা যাবে। টেন্ডারের ভিত্তিতে সর্বনিম্ন দরদাতাকে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে পারচেজ কমিটি পাস করে। পরে বিল পর্যন্ত পরিশোধ করে খাদ্য অধিদপ্তর। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বিল পরিশোধের পর্যন্ত আসে না। ফাইনাল বিল পর্যন্ত খাদ্যমন্ত্রীরা চেকও করে না। সমস্ত কিছু করে খাদ্য অধিদপ্তর।’
একটি পত্রিকায় তার ‘বিকৃত’ ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে অভিযোগ করে গণমাধ্যমের কাছে কামরুলের প্রশ্ন, ‘আপনাদের কাছে কি নমুনা আছে? আপনারা পরীক্ষা করুন। আপনাদের কাছে কি প্রমাণ আছে, এই মিথ্যা ভিত্তিহীন কথা বলার। পত্রিকাগুলো বলছে, এটা নিম্নমানের। কিন্তু এটা ল্যাবরেটরি টেস্টে প্রমাণিত, এই গম খাওয়ার উপযোগী। ব্রাজিলের গমটা দেখতে খারাপ, কেউ পছন্দ করবে না। কিন্তু গুণগতমান তো ঠিক আছে। গুণগতমান ঠিক থাকলে আপনি কেন প্রশ্ন করবেন?’
ব্রাজিলের গম নিয়ে আপত্তি ওঠার পর নমুনা বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয় বলে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবারো বলছি, এটা অধিদপ্তরের বিষয়। চার মাস পরে পরীক্ষা করেও দেখা যায়, এই গমের গুণগতমান নষ্ট হয় নাই, ঠিক আছে। পত্রপত্রিকায় নিউজ আসছে, পচা গম, গন্ধযুক্ত গম। এটার কোনো ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, আমদানি করা দুই লাখ টন গমের মধ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯২৬ টন বিলি হয়ে গেছে। এই বিলি-বণ্টনের চার মাসে কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি।
গম নিয়ে অস্বস্তিকর খবরগুলো ১০-১৫ দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টে একজন মামলা করেছেন, সেই মামলা পরিচালনা করেছেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খোকন। অধিদপ্তর, পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়েছে। প্রি-শিপমেন্ট সনদেও বলা হয়েছে ফিট ফর হিউম্যান কনজাম্পশন।’
গম নিয়ে একটি রাজনৈতিক মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিত্তিহীন কথা বলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করতে চাইলে আমি সহযোগিতা করব। মনের সাথে মাধুরী মিশিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাবার্তা বলবেন না।
‘তারা বলছে, পুলিশ, বিডিআর আর আর্মি সবাই না-কি এই গমের বিরুদ্ধে বলছে। আমাদের কাছে তো বিডিআর, আর্মি ও পুলিশ থেকে কোনো কথাবার্তা আসে নাই। কেবল পুলিশ থেকে একটা চিঠি এসেছে। ওয়ারান্টি পরিবর্তন আনার জন্য।
‘আমাদের বিধান হচ্ছে, গুদামে যেটা আগে এসেছে, সেটা আগে বের হবে। যেটা পরে এসেছে সেটা পরে বের হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, এটার মান ঠিকই আছে, সুতরাং আমরা ওয়ারেন্টি পরিবর্তন করব না।’
‘পুলিশের কাছ থেকে বা বিডিআরের কাছ থেকে এই পচা গম খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে, আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে_ এ রকম কোনো কথাবার্তা, চিঠি আসছে বলে আমি শুনি নাই।
‘আমি পত্রিকাওয়ালাদের বিনয়ের সঙ্গে বলব, ভিত্তিহীন কথাবার্তা না বলা থেকে বিরত থাকুন। সাংসদদের বলব, এই কথাগুলোর কোনো ভিত্তি নাই। এগুলো আমলে নেয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।’
সম্প্রতি একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই গম ‘নষ্ট ও পচা’। পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে ওই গম বিতরণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশ আপত্তিও তুলেছে।
পুলিশের আপত্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি তদন্তের নির্দেশ দিলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর এ নিয়ে ‘লুকোচুরি’ শুরু করে বলে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
‘পচা গম’ আমদানির অভিযোগ ওঠার পর বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়।
তবে ওই গম ‘পচা নয়’ দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী এর আগেও সংসদে কথা বলেন।
এরপর ‘নিম্ন মানের’ গম আমদানি ও সরবরাহের অভিযোগ দুদককে দিয়ে তদন্তের আদেশ চেয়ে পাভেল মিয়া নামে এক আইনজীবী ২৮ জুন এই রিট আবেদন করেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি করে ৩০ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়। ওই গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কিনা, সে বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
ওই রিটের আদেশ অনুসারে ব্রাজিল থেকে চারশ কোটি টাকায় আমদানি করা গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী বলে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। -

বাংলাদেশ সময়: ২১:০২:৪৩   ৩৩৯ বার পঠিত