বুধবার, ৮ জুলাই ২০১৫
রোজায় হরমোনজনিত রোগের চিকিৎসা
Home Page » সংবাদ শিরোনাম » রোজায় হরমোনজনিত রোগের চিকিৎসাবঙ্গনিউজ ডটকমঃ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আমাদের দেশে সব প্রাপ্তবয়স্ক লোকই রমজান মাসে রোজা রাখে। এ সময় হরমোনজনিত রোগীদের চিকিৎসায় কিছু সাবধানতা, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন হয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে লাখ লাখ হরমোনজনিত রোগীর চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শ হরমোন বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অন্য চিকিৎসকদের ওপরও বর্তায়। আবার এই এক মাস সময়ে প্রায় লক্ষাধিক নতুন রোগীকে প্রথমবারের মতো রোগ শনাক্ত করার প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে রমজানে হরমোনজনিত রোগের চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি ব্যাপক। রোগী ও চিকিৎসকদের মাঝে এ ব্যাপারে আগে থেকেই যথেষ্ট সচেতনতা ও পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। অতীতে রোজার সময় চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শ জানা ও মানার ব্যাপারে অনেক বিতর্ক ছিল আজও আছে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের আরও উন্নতি হলে ভবিষ্যতে তা কমে যাবে আশা করা যায়। রমজানের সময় ডায়াবেটিস চিকিৎসা নিয়ে জনসচেতনতামূলক অনেক প্রোগ্রাম হওয়ার রেওয়াজ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। এ ব্যাপারে রোগী ও চিকিৎসকদের মাঝে ডায়াবেটিসের ব্যাপারে যতটা আগ্রহ দেখা যায় অনান্য হরমোনজনিত রোগের ব্যাপারে ততটা দেখা যায় না। কাজেই ডায়াবেটিসের ব্যাপারে আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে অন্যান্য হরমোনজনিত রোগের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হলো।
হরমোনজনিত রোগের নামের সঙ্গে সর্বসাধারণের পরিচিতি কম থাকাই স্বাভাবিক তবে রোগী ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট অনেকেই নামগুলো বুঝতে পারবেন। হরমোনজনিত রোগসমূহের মধ্যে রোজা পালনে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ রোগ যেমন থাইরটঙ্কি ক্রাইসিস, ইনসুলিনমা, এডিসন ক্রাইসিস, অতিমাত্রার হাইপোথাইরয়েডিসম, টিটানী, পিটুইটারী গ্রন্থির আকস্মিক কার্যকারিতা লোপ, এডরেনাল টিউমারজনিত উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে রোজা পালন অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত রোজা না রাখাই যুক্তিসঙ্গত। আবার সুনিয়ন্ত্রিত হাইপোথাইরয়েডিসম ও সঠিকভাবে শনাক্তকৃত ও চিকিৎসা পাওয়া থাইরয়েডের অন্যান্য রোগ, হাড়ক্ষয়জনিত রোগী, হরমোনের কারণে অবাঞ্ছিত লোম, অতিরিক্ত ওজন, সাধারণ গলগণ্ড ইত্যাদি রোগীর রোজা থাকায় তেমন কোনো ঝুঁকি না থাকায় শুধু চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী ওষুধের মাত্রা ও সেবনের সঠিক সময় ঠিক করে রোজাপালন করা যাবে। রোজায় পিটুইটারি হরমোনের কিছুটা পরিবর্তন হলেও যারা পিটুইটারি ফেইলুরের জন্য ওষুধ সেবন করেন তার পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে ইফতারি ও সেহরির মাঝামাঝি সময়ে ওষুধ সেবন করে ঝুঁকিমুক্তভাবেই রোজা পালন করতে পারবেন। রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের প্রথম করণীয় হলো রোজা শুরুর বেশ আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, রোজা থাকা ঠিক হবে কিনা বা রোজা থাকার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কতটুকু জেনে নেওয়া। ডায়াবেটিস রোগীদের শতকরা নব্বই ভাগই টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী। এদের মধ্যে যাদের রক্তের গ্লুুকোজ শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, মেটফরমিন ও গ্লিপটিন জাতীয় ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং অন্য কোনো সিস্টেমের মারাত্মক সমস্যা নেই তাদের রোজা থাকায় কোনো ঝুঁকি নেই।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, এন্ডোক্রাইনোলজি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৩:৪৯ ৪৩২ বার পঠিত