বুধবার, ৮ জুলাই ২০১৫
বরফ মানব ওটজির ভয়ঙ্কর অভিশাপ ও ৭ জনের মৃত্যু!
Home Page » প্রথমপাতা » বরফ মানব ওটজির ভয়ঙ্কর অভিশাপ ও ৭ জনের মৃত্যু!বঙ্গনিউজ ডটকমঃওটজি! প্রাকৃতিকভাবেই মমিতে পরিণত হওয়া এই ব্যক্তি খুব সম্ভবত ৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জীবিত ছিল। ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এটি অস্ট্রিয়া ও ইতালির সীমান্তের মধ্যবর্তী সিমিলাউন পর্বতে পাওয়া যায়। ওটজির মমিটিই এখন পর্যন্ত ইয়োরোপের সবচেয়ে প্রাচীন মমি হিসেবে গণ্য করা হয় এই মমি ও মমির সাথে পাওয়া বিভিন্ন জিনিস ইতালির দক্ষিণ টিরলে অবস্থিত South Tyrol Museum of Archaeology in Bolzano-তে রাখা হয়েছে।
১৯৯১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জার্মানির নুরেমবার্গ থেকে আসা দুই পর্যটক হেলমুট ও ওরিকা সিমন ওটজির দেহটি খুঁজে পান। তারা ভেবেছিলেন, এই দেহটি হয়তো কোন হতভাগ্য পর্বতারোহীর হবে যে পাহাড়ে চড়তে গিয়ে মারা গিয়েছিল। পরের দিন একজন পুলিশ অফিসার ও পর্বত এলাকার রক্ষণাবেক্ষণকারী মিলে ড্রিল মেশিন ও বরফ কাটার কুঠার দিয়ে মমিটি বরফের আচ্ছাদন থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এরপরের দিন আটটি পর্বতারোহী দল সেই জায়গাটিতে আসে। ২২ সেপ্টেম্বর মমিটিকে পুরোপুরি উদ্ধার করা হয় ও পাঠিয়ে দেয়া হয় University of Innsbruck-তে।
ওটজির মমি কি অভিশপ্ত? এই প্রশ্ন উঠে তখনোই যখন ওটজির দেহ আবিষ্কার, বরফের নিচ থেকে উঠিয়ে আনা ও পরে তার মমি নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের অনেকের অস্বাভাবিকভাবে একই বছরে মৃত্যু হয়। ৬৩ বছর বয়সে যদি কেউ মারা যায়, তবে সেটিকে স্বাভাবিক ধরে নেয়া যায়। কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি হন একজন বিজ্ঞানী যিনি ৫,৩০০ বছর আগের বরফে জমে যাওয়া এক মৃত সৈনিকের মমি আবিষ্কারের সাথে জড়িত, তখন কি সবার মনে কিছুটা অস্বাভাবিক প্রশ্ন উঠতে পারে? আর সেই একই বছর সেই মমির সাথে সম্পর্কিত আরো সাতজন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু কি কোন ভয়াবহ অভিশাপের ইঙ্গিত বহন করে?
আমেরিকান বংশদ্ভূত মলিকুলার প্রত্নতত্ত্ববিদ টম লয়কে তার ব্রিজবেনের বাসায় হঠাতই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনাটি ঘটে ওটজিকে নিয়ে তার লেখা বইটি চূড়ান্ত রূপ পাবার মাত্র ২ সপ্তাহ আগে। বরফ মানব ওটজির মমি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন আরেক প্রত্নতত্ত্ববিদ, কুইন’সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের পরিচালক। আর এই গবেষণা শুরুর পর পরই তিনি রক্তের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হন, যেটি টানা ১২ বছর ধরে তাকে ভোগাতে থাকে।
হেলমুট সিমন(৬৭), যিনি প্রথম ওটজির দেহ দেখতে পান,হাইকিং এ বেড়িয়ে প্রবল তুষারপাতের কবলে পড়ে মারা যান। ঠিক সেই জায়গাটিতে, যেখানে ওটজিকে তিনি পেয়েছিলেন। সিমনের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের মাত্র এক ঘণ্টার মাথায় যিনি সিমনের দেহ উদ্ধারের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই ডিয়েটার ওয়ারনেকে(৪৫) এক আকস্মিক হার্ট এটাকে মারা যান। এরপর এপ্রিলে প্রত্নতত্ত্ববিদ কনরাড স্প্লিন্ডার(৫৫) মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে ভুগে মারা যান। তিনিই প্রথম ওটজির দেহ পরীক্ষা করেছিলেন। ওটজিকে পরীক্ষাকারী ফরেনসিক টিমের প্রধান রেইনার হেন (৬৪) যখন ওটজিকে নিয়ে একটি বক্তব্য প্রদানের জন্য যাচ্ছিলেন, তখন এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।
পর্বতারোহী কার্ট ফ্রিটজ ( ৫২) যিনি হেনকে ওটজির মমির সন্ধান দিয়েছিলেন, পর্বতারোহণের সময় তুষারধ্বসের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। ওটজিকে তার বরফাচ্ছাদিত সমাধি তেকে ওঠানোর ছবিধারণকারী অস্ট্রিয়ান সাংবাদিক রেইনার হোয়েযল (৪৭) মারা যান মস্তিষ্কের টিউমারে আক্রান্ত হয়ে।
টম লয়ের এক সহকর্মী বলেন, “লয় এসব অভিশাপে বিশ্বাস করতেন না।“ তিনি বলেন,”এসব কুসংস্কার। যারা মারা যাচ্ছে এটার সাথে কোন অভিশাপের সম্পর্ক নেই।“ আসলেই কি? সবগুলো মৃত্যুই কি কাকতালীয়? বিজ্ঞানের কাছে এর কী কোন ব্যাখ্যা আছে?
ইতালির South Tyrol Archaeological Museum in Bolzano-র হিমাগারে ওটজির দেহ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৫:৫৭:০৫ ৩১২ বার পঠিত