মঙ্গলবার, ৭ জুলাই ২০১৫
হার্নিয়া রোগ ও চিকিৎসা
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » হার্নিয়া রোগ ও চিকিৎসাবঙ্গনিউজ ডটকমঃ যদি আপনার কোনো কুঁচকিতে ব্যথা হয় কিংবা ফোলা দেখতে পান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। এ ফোলা বেশি দেখা যাবে যখন আপনি দাঁড়াবেন। সাধারণত আক্রান্ত অনুভব করতে পারবেন।
আপনি শুয়ে পড়লে হার্নিয়া আপনাআপনি মিলিয়ে যাবে অথবা আপনি হাত দিয়ে হালকা চেয়ে পেটে ঢুকিয়ে দিতে পারবেন। যদি তা না হয় তাহলে জায়গাটিতে বরফের সেক দিলে ফোলা কমে গিয়ে হার্নিয়া চলে যায়। শোয়ার সময় মাথার তুলনায় কোমর উঁচু করে শুতে হবে।
যদি আপনি হার্নিয়া ঢোকাতে না পারেন তাহলে বুঝতে হবে অন্ত্রের অংশ পেটের দেয়ালে আটকে গেছে। এটি একটি মারাত্মক অবস্থা। এ ক্ষেত্রে জরুরিভাবে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। এ পর্যায়ে বমি বমি ভাব বমি অথবা জ্বর হতে পারে এবং হার্নিয়া লাল, বেগুনি অথবা কালো হয়ে যেতে পারে। যদি এ ধরনের কোনো চিহ্ন বা উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
রোগ নির্ণয় : সাধারণ শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে ইনগুইনাল হার্নিয়া নির্ণয় করা হয়। আপনার চিকিৎসক আপনাকে আপনার উপসর্গগুলো জানতে চাইবেন, তারপর কুঁচকি এলাকার ফোলাটি পরীক্ষা করে দেখবেন। যেহেতু কাশি দিলে হার্নিয়া অধিক স্পর্শ হয়ে দেখা দেয়, তাই কাশি দেয়াটাও আপনার পরীক্ষার একটা অংশ হতে পারে।
জটিলতা : অপারেশনের মাধ্যমে হার্নিয়া ঠিক না করলে ক্রমে হার্নিয়া বড় হতে থাকে। বড় হার্নিয়া চার পাশের ‘টিস্যুর ওপর চাপ প্রয়োগ করে পুরুষের ক্ষেত্রে হার্নিয়া অ-থলি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এবং ব্যথা ও ফোলা সৃষ্টি করে। তবে ইনগুইনাল হার্নিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক জটিলতা হলো যখন অন্ত্রের অংশ পেটের দেয়ালের দুর্বল জায়গায় আটকে যায়। এ সময় প্রচ- ব্যথা হয়। বমি বমি ভাব ও বমি হয় এবং পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়, কিংবা বায়ু চলাচল করতে পারে না।
এ ক্ষেত্রে আটকে পড়া অংশে রক্ত চলাচল কমে যায় এ অবস্থাকে বলে স্ট্রাংগুলেশন যার কারণে আক্রান্ত অন্ত্রের টিস্যুর মৃত্যু ঘটাতে পারে। স্ট্রাংগুলেটেড হার্নিয়া একটি জীবনমরণ সমস্যা, এ ক্ষেত্রে জরুরি অপারেশন প্রয়োজন।
চিকিৎসা : যদি আপনার হার্নিয়া ছোট থাকে এবং আপনার কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করে তাহলে আপনার চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করার কথাও বলতে পারেন। কিন্তু হার্নিয়া যদি বড় হতে থাকে এবং ব্যথা হয় তাহলে অস্বস্তি দূর করতেও মারাত্মক জটিলতা প্রতিরোধ করতে সাধারণত অপারেশনের প্রয়োজন হয়। হার্নিয়ার দুই ধরনের সাধারণ অপারেশন করা হয়।
হার্নিয়োব্যাফি : এ পদ্ধতিতে আপনার সার্জন আপনার কুঁচকিতে একটা ইনসিশন দিয়ে বেরিয়ে আসা অন্ত্রকে ঠেলে পেটের মধ্যে ফেরত পাঠিয়ে দেবেন। তারপর দুর্বল বা ছেঁড়া মাংসপেশি সেলাই করে ঠিক করে দেবেন। অপারেশনের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনি চলাফেরা করতে পারবেন। তবে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে আপনার চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
হার্নিয়োপ্লাস্টি : এ পদ্ধতিতে আপনার সার্জন কুঁচকি এলাকায় এক টুকরো সিনথেটিক মেম লাগিয়ে দেন। সেলাই, ক্লিপ অথবা স্টাপল করে এটাকে সাধারণত দীর্ঘজীবী রাখা হয়। হার্নিয়ার ওপরে একটা একক লম্বা ইনসিশন দিয়েও হার্নিয়োপ্লাস্টি করা যেতে পারে। বর্তমানে ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে ছোট ছোট কয়েকটি ইনসিশন দিয়ে হার্নিয়োপ্লাস্টি করা হয়।
প্রতিরোধ : যদি আপনার জন্মগত ত্রুটি থাকে যার কারণে ইনগুইনাল হার্নিয়া হতে পারে সেটা আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন না, তবে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনার পেটের মাংসপেশি ও কলার টান কমাতে পারবেন_
_ স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন! যদি আপনার স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে বেশি থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যায়াম ও খাদ্যগ্রহণ করুন।
_উচ্চ অাঁশ সমৃদ্ধ খাবার খান : টাটকা ফল, শাক-সবজি এবং সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
_ভারী বস্তু উত্তোলনে সতর্ক হন। পারতপক্ষে ভারী বস্তু উত্তোলন করবেন না। যদি একান্তই উত্তোলন করতে হয় তাহলে সর্বদা হাঁটু ভাঁজ করে শুরু করবেন, কখনো কোমর বাঁকাবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ২০:০৯:৪৪ ৩৫৮ বার পঠিত