মঙ্গলবার, ৭ জুলাই ২০১৫
টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটাই রপ্ত হয়নি
Home Page » এক্সক্লুসিভ » টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটাই রপ্ত হয়নিবঙ্গনিউজ ডটকমঃদলে এখন পারফরমারের অভাব নেই। তবু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টির হার নির্দিষ্ট একজনের ওপর অতি নির্ভরশীলতার পুরনো প্রসঙ্গই ফিরিয়ে নিয়ে এলো আবার। প্রোটিয়াদের এক ঝাঁক টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞের বিপরীতে বাংলাদেশের কেবল একজনকেই এমনটা বলা যায়- সাকিব আল হাসান। আইপিএল, বিগ ব্যাশ কিংবা সিপিএল, কোথায় নেই তিনি! অথচ তাঁর সতীর্থরা বছরজুড়ে টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য হাপিত্যেশ করে মরেন। বাইরে তো নয়ই, দেশেও আপাতত সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের কোনো নিয়মিত আয়োজন নেই।
খেলার সুযোগ অনিয়মিত হওয়ায় অনভ্যস্ত বাংলাদেশ দলের সিংহভাগ ক্রিকেটারও। ব্যতিক্রম সেই সাকিব। তাই সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বড় ব্যবধানে হারের সূত্র ধরে তাঁর ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়টিও এখন আলোচনায়। যদিও তা একদমই মানতে রাজি হলেন না তামিম ইকবালের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করে চলা সৌম্য সরকার, ‘এটা ঠিক যে টি-টোয়েন্টিতে উনি (সাকিব) অনেক অভিজ্ঞ। সব জায়গাতেই খেলেন। উনি ভালো খেললে দলের জন্য অনেক ভালো কিছু আসে। কেননা উনি সব দিক দিয়েই অনেক শক্তিশালী। তবে আমরা যে ওনার ওপরই নির্ভরশীল, তা কিন্তু নয়। এখন দলের প্রায় সবাই পারফর্ম করছে। যে কারণে দল হিসেবে আমাদের ফলাফলও ভালো হচ্ছে।’
বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে প্রথমে পাকিস্তান এবং তারপর ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ছিল সাফল্যের সোনাফলা রোদ। এর মাঝে প্রোটিয়াদের সামনে পড়ে যখন কিছুটা মেঘের আনাগোনা, তখন দায়-দায়িত্ব অনেকটা নিজের ওপর নিয়ে নিতেও দ্বিধা করলেন না এ বাঁহাতি ওপেনার। সাতক্ষীরার এ তরুণ মনে করেন, প্রথম ম্যাচে জয় হাতছাড়া হওয়ার পেছনে তাঁর একটা যোগসূত্র আছে। জেতার জন্য যে টপ অর্ডারের সফল হওয়া খুব জরুরি বলে মনে করেছিলেন, এর আওতায় তো তিনি নিজেও পড়ছেন।
আজ সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের কারো না কারো বড় ইনিংস খেলার দিকে জোর দিচ্ছেন সৌম্য। গতকাল দুপুরে ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দলের প্রতিনিধি হিসেবে এসে সংবাদমাধ্যমকে সে কথা বলেও গেলেন, ‘সাকিব ভাই ম্যাচটি শেষ করে এলে খুব ভালো হতো। আরো ভালো হতো যদি দুই ওপেনারের কেউ সেই দায়িত্বটা পালন করে আসতে পারতেন। তা ছাড়া ওপেনাররা বড় একটা জুটি গড়ে দিয়ে আসলেও পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের জন্য ম্যাচের লাগাম ধরা সহজ হতো।’
কিন্তু সেটি আর হয়েছে কোথায়? ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই পেসার কাগিসো রাবাদার বাউন্সারে চালাতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন সৌম্য। তাঁর ওপেনিং পার্টনার তামিম ইকবাল ফিরেছেন আরো আগে, প্রথম ওভারেই। কাইল অ্যাবটের করা লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ হয়েছেন উইকেটের পেছনে। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে সাকিব অবশ্য দলীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান করে গেছেন, কিন্তু হারের দিনে সেটি খুব সামান্য অবদানই হয়ে থেকেছে। অথচ এঁদের কারো বড় ইনিংসই দলের জয়ের পথ সুগম করে দিতে পারত।
বিশেষ করে বড় একটি ইনিংস পাওনা হয়ে গেছে সৌম্যর কাছ থেকেও। প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া ব্যাটিং দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেকের শুরু থেকেই দৃষ্টি কাড়ছেন তিনি। কিন্তু সেই অর্থে বড় কোনো ইনিংস খুব বেশি নেই তাঁর। কারণ সেট হয়েও আউট হওয়ার দোষে দুষ্ট সৌম্যকে ভাবাচ্ছে এটিও। ১৩ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে গত ২২ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেছেন। তাঁর অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংসে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ও করা গিয়েছিল। কিন্তু এর আগে-পরে মাত্র একটি করে ফিফটি আসলে সৌম্যর সামর্থ্যের সঙ্গে ঠিক মানানসইও নয়।
এ ছাড়া বেশির ভাগ ইনিংসেই সেট হয়ে আউট হওয়া এ ওপেনারও মানছেন যে এতে করে তিনি নিজেকে যেমন, তেমনি বঞ্চিত করছেন দলকেও, ‘সবাই যেমন বুঝতে পারছেন, তেমনি আমিও বুঝতে পারছি যে বিষয়টি আমার জন্য একটু খারাপই হচ্ছে। আমি সেট হয়ে আউট হচ্ছি। এটা আমার চেয়ে দলের জন্যই বেশি খারাপ হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমি নিজেও অনেক খাটছি। কিছু পরিকল্পনা আছে আমার।’
প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে দলীয় পরিকল্পনা সফল না হওয়ার আক্ষেপও শোনা গেল সৌম্যর কণ্ঠে, ‘ফিল্ডিং এবং বোলিংয়ে কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা সফল হয়েছিল। ব্যাটিং পরিকল্পনায়ও কোনো ভুল ছিল না কিন্তু আমরা এর বাস্তবায়নটা করতে পারিনি। পরিকল্পনামতো খেলতে পারলে হয়তো ফল আমাদের পক্ষেই আসত।’ প্রথম ম্যাচের পরিকল্পনাটাও শুনে নিন এ ওপেনারের কাছ থেকে, ‘পরিকল্পনা ছিল প্রথম ৬ ওভারে ৪০-৫০ রান করে রাখলে পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের জন্য সুবিধা হবে।’
সে কারণেই তাড়াহুড়া, কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। চিত্রটা কি আজ বদলাতে পারবে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০০:৫৪ ৩০০ বার পঠিত