রবিবার, ৫ জুলাই ২০১৫
মানুষ ‘সহকর্মীকে’ পিষে মারল যন্ত্রমানুষ
Home Page » বিবিধ » মানুষ ‘সহকর্মীকে’ পিষে মারল যন্ত্রমানুষবঙ্গনিউজ ডটকমঃ যন্ত্রমানবের হাতে ‘খুন’ হল মানুষ!
কোনও কল্পবি়জ্ঞানের কাহিনি নয়। ফিল্মের প্রেক্ষাপটও নয়। জার্মানির কাসেল শহরের কাছে ফক্সভাগেন-এর এক কারখানায় এমনটাই ঘটল আজ। ২১ বছরের এক যুবককে ধাতুর পাতের উপর ফেলে পিষে দিল তাঁরই ‘সহকর্মী’ যন্ত্রমানব।
যন্ত্রের হাতে মানুষ খুন, হাজারো গল্প-উপন্যাসে এমনটা শোনা যায় বটে। কিন্তু বাস্তবে এ কাহিনি অমিল। সত্যজিৎ রায়ের ছোট গল্প ‘অনুকূল’-এ বাড়ির চাকর অনুকূলের গায়ে হাত তুলেছিলেন খিটখিটে বদমেজাজি অতিথি। যন্ত্রমানুষ অনুকূল তাঁর গায়ে শক দিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান অতিথি।
যন্ত্র-মানুষের লড়াইয়ের গল্প নিয়ে রয়েছে হলিউডের ছবি ‘টার্মিনেটর’। আছে ‘ম্যাট্রিক্স’-ও। এ গল্পে যন্ত্রের হাতে পরাধীন পৃথিবী। মানুষ বিপ্লবী। ‘আই রোবট’ ছবিতে খুন হয়ে যান এক রোবট প্রস্তুতকারী সংস্থার স্রষ্টা। তদন্তে দেখা যায় তাঁকে খুন করেছিল তাঁরই তৈরি যন্ত্রমানুষটি। উদ্দেশ্য ছিল, যে মানুষের খাটনি কমাতে তারা কাজ করে, তাদেরই ক্রীতদাস বানিয়ে ফেলা। বলিউডেও রয়েছে রজনীকান্তের ‘রোবট’, শাহরুখ খানের ‘রা-ওয়ান’।
কিন্তু বাস্তবে এমন নজির কোথায়! খরচ বাঁচাতে ইলেকট্রনিক্স কিংবা ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো ক্রমেই রোবট-কর্মীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। তাতে উৎপাদনও বাড়ছে। একঘেয়ে নিয়মমাফিক কাজগুলো যন্ত্রের উপর ছেড়ে দিয়ে শুধু মাথা খাটানোর কাজ সারতে নিয়োগ করা হচ্ছে মানুষকে। এই সময়ে এমন ঘটনায় স্তম্ভিত অনেকেই। যন্ত্র কি তবে সত্যি সত্যি বুদ্ধিতে টেক্কা দিচ্ছে মানুষকে? নানা মহলে দানা বেঁধেছে ভয়।
ফক্সভাগেন কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, রোবটের কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। দায়ী ওই যুবকই। সংস্থার মুখপাত্র হেইকো হিলউইগের কথায়, ‘‘রোবটের ক্ষেত্রে কিছু প্রোগ্রাম আগে থেকে সেট করা থাকে। সেই অনুযায়ী কাজ করে সে। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।’’ তিনি জানান, এমনিতেই এ ধরনের কাজে রোবটকে খাঁচার মধ্যে রাখা হয়। যাতে কোনও ভাবেই সে মানুষের কাছাকাছি না চলে আসে। কিন্তু আজ কাজ করার সময় রোবটের খাঁচায় ঢুকে পড়েন ছেলেটি। বিপত্তি বাধে তাতেই। হিলউইগ বলেন, ‘‘সাধারণত যন্ত্রাংশ নিয়ে ওই রোবট যা করে থাকে, আজও তাই করেছে। ওই যুবক রোবটের খুব কাছে চলে গিয়েছিল। ফলে ভুল নির্দেশ যায় তার কাছে। তাই সে ধাতুর পাতের উপর ফেলে পিষে দেয় যুবককে।’’
কিন্তু দুর্ঘটনার সময় তো আরও কর্মীরা ছিলেন! তাঁরা কেন রোবটটিকে থামানোর চেষ্টা করলেন না? সদুত্তর মেলেনি। ঘটনার সময় থাকা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি সংবাদমাধ্যমকে। সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই ঘটনাকে নতুন কিছু বলতে নারাজ। প্রযুক্তি বিশারদ পল স্যাফো-র মতে, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। ‘‘কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সময়টা। ঠিক যখন মানুষের কাজ কেড়ে নিচ্ছে যন্ত্র, তখনই ঘটল এই ঘটনা।’’ ষড়যন্ত্রের ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। গত বছরই ফক্সভাগেন জানিয়েছিল, খরচ কমাতে আরও উন্নত মানের যন্ত্রমানব নিয়োগের কথা ভাবছে তারা। মানুষের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে সেই সব রোবট। ফলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে, গুঞ্জন ছিল কারখানায়। ওই পরিকল্পনা রুখতেই কি এই ‘দুর্ঘটনা’? উঠছে সেই প্রশ্নও।
বাংলাদেশ সময়: ১:৫৬:১৮ ২০৩ বার পঠিত