বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০১৫
বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৪-১৫) রাজস্ব লক্ষ্য অর্জন করেছে এনবিআর
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৪-১৫) রাজস্ব লক্ষ্য অর্জন করেছে এনবিআরবঙ্গনিউজ ডটকমঃ সেহ্রির পরপরই বুধবার ভোরে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুক খুলতেই চোখে পড়ল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের নিজের একটি স্ট্যাটাস। তিনি সেখানে লিখলেন, বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৪-১৫) রাজস্ব লক্ষ্য অর্জন করেছে এনবিআর। এ জন্য শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানান। তারপর থেকেই তাঁর স্ট্যাটাসে বাড়তে থাকল ‘লাইক’-এর সংখ্যা।
এরপর গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে লক্ষ্য অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদায়ী অর্থবছরের ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। এটি সাময়িক হিসাব। গত অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে।
তবে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ায় অর্থবছরের শেষ দিকে তা ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো কমিয়ে দেওয়া হয়। তবে এবারই নয়, এর আগেও দুবার লক্ষ্য অর্জন করেছিল এনবিআর। ২০১১-১২ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্য অর্জিত হয়েছিল।
সদ্য গত অর্থবছরের ১০ মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়ে ছিল এনবিআরও। হঠাৎ করে কীভাবে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল ব্রিফিংয়ে সে প্রশ্ন করা হয়। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের জবাব, ‘এটা কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়, এটা বাস্তবতা। আপনি যদি আপনার সম্পদের ওপর ভালো ধারণা পোষণ করেন, আস্থা রাখেন তাহলে ইতিবাচক ফল আসবেই।’
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ২৩৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা; যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।
স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন করের (মূসক) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৪৮ হাজার ৬৩৮ কোটি ১ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর আয়কর ও ভ্রমণ কর হিসেবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৪৯ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। আদায় বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংশয় ছিল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি না। তবে আমরা এনবিআরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের কর্মীরা দলগতভাবে কাজ করেছে। উদ্ভাবনী কার্যকলাপের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে।’ তিনি জানান, মাঠপর্যায়ের কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাঁদের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ আরও বাড়বে।
নজিবুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আমরা বলেছি কমপ্লায়েন্সের ওপর জোর দিতে। আর আইনের বাস্তবায়ন যেন কোনোভাবেই হয়রানির পর্যায়ে না যায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’
২০১৫-১৬ অর্থবছর গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। এই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এনবিআরকে জনবান্ধব সংস্থা হিসেবে উল্লেখ করে এর চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘বিশাল এই লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করতে পারব।’
এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী, এ জন্য কয়েকটি বিষয়ে জোর দেবে সংস্থাটি। এর একটি হলো জরিপ কার্যক্রম জোরদার করা। করের আওতায় বাইরে আছে কিন্তু কর দিতে সক্ষম এমন লোক খুঁজে বের করা হবে জরিপের মাধ্যমে। আরেকটি হলো, সমস্যাকেন্দ্রিক অর্থনীতি। এ খাতে বিনিয়োগের জন্য সরকার বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা রেখেছে। এ খাতে বিনিয়োগ হলে সেটাও রাজস্ব আদায়ের একটি বড় উৎস হয়ে উঠবে। আবার সরকার পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালকে কার্যকর করবে।
ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়, এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে তা সদ্য গত অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কতটুকু বাস্তবসম্মত? জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০১০-১১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তাহলে এই অর্থবছরে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়া তো অসম্ভব নয়। এটা কোনো উচ্চাভিলাষ নয়। এটা সঠিক বাস্তবতা।’
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে রাজস্ব ঘাটতি পূরণে এনবিআর বড় বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অগ্রিম আয়কর আদায় করে থাকে। এবারও কি তাই হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে নজিবুর রহমান বলেন, ‘এবার কোনো অগ্রিম আয়কর নেওয়া হয়নি। এমন কোনো তাগিদও ছিল না।’
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৫:৫৬ ৩৫৩ বার পঠিত