বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০১৫
১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠনের আবেদনবঙ্গনিউজ ডটকমঃ দেশের ১৫ শিল্প গ্রুপের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৃহৎ ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালার আওতায় এ আবেদন করা হয়। শিল্প গ্রুপগুলোর পক্ষে ঋণদাতা ব্যাংকই এ আবেদন করেছে। গত মঙ্গলবার ছিল আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন।
এসব গ্রুপের মালিকানার সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন ব্যবসায়ী নেতা ও দেশের আলোচিত ঋণখেলাপিদের পরিবারের সদস্যও। তবে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে খেলাপির পরিমাণ কত তা জানা যায়নি। কয়েকটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ডিসেম্বরে বৃহৎ ঋণ পুনর্গঠনের একটি নীতিমালা তৈরি করে দেয়। ওই নীতিমালার আওতায় এখন বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, একক গ্রুপ হিসেবে সর্বোচ্চ ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করা হয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের পক্ষে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সাত ব্যাংক এ গ্রুপটির প্রায় ৪ হাজার ৯৫১ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করেছে। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। বেক্সিমকো ও সালমান এফ রহমান দেশের ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজারে খুবই আলোচিত নাম। এ গ্রুপটি এর আগেও একাধিকবার খেলাপি ঋণের বিপরীতে নানা ধরনের সুবিধা নিয়েছে।
বেক্সিমকোর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১ হাজার ৪১২ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করা হয়েছে যমুনা গ্রুপের জন্য। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আটটি ব্যাংক যমুনা গ্রুপের এ ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন জানিয়েছে। এ শিল্প গ্রুপটির চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম।
আবেদনকারীদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৪ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন জানানো হয়েছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের এননটেক্স গ্রুপ নামের এক প্রতিষ্ঠানের জন্য। জনতা ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির এ বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য। সংগঠনটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়। তবে এননটেক্স গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে এটির কর্মকাণ্ড শুরু হয়।
ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করা অন্য ১২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিকদার গ্রুপের ৬৮৬ কোটি, থার্মেক্সের প্রায় ৬৬৭ কোটি, কেয়ার প্রায় ৮৭৯ কোটি, এস এ গ্রুপের প্রায় ৭১৯ কোটি, আব্দুল মোনেমের প্রায় ৪৯৭ কোটি, বিআর স্পিনিংয়ের ৪৭৩ কোটি, রতনপুর গ্রুপের ৪৩৫ কোটি, ইব্রাহিম গ্রুপের ৩৪০ কোটি, নাসা গ্রুপের ২০০ কোটি, গিভেন্সির ৬০ কোটি, দেশবন্ধুর প্রায় ৫৭ কোটি এবং ক্যান-অ্যাম প্রায় ১৫ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করেছে।
জানা গেছে, বিআর স্পিনিংয়ের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুর রহমান বর্তমানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও দেশের বহুল আলোচিত ঋণখেলাপি ফজলুর রহমানের ভাই। নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার, যিনি বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান। শিকদার গ্রুপ রাজনৈতিকভাবে বেশ প্রভাবশালী ও বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে জড়িত।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার ঋণ জনতা ব্যাংকের। আর অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ ১ হাজার ১১৪ কোটি ও সোনালীর প্রায় ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।
ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা অনুযায়ী, এক বা একাধিক ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে এ ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবে। গত জানুয়ারি ব্যাংক এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। তার আওতায় ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন চাওয়া হয়।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক বা একাধিক ব্যাংক মিলিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠানের ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে, সেই ঋণই পুনর্গঠন সুবিধার জন্য বিবেচিত হবে। ৫০০ কোটি টাকার কম ঋণকে এ নীতিমালার আওতায় বিবেচনার সুযোগ নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালার আলোকে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ। নীতিমালা অনুযায়ী, মেয়াদি ঋণ পুনর্গঠন হবে সর্বোচ্চ ১২ বছরের জন্য। আর তলবি ও চলমান ঋণ পুনর্গঠন হবে ছয় বছরের জন্য। এক হাজার কোটি টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রে এককালীন বা ডাউন পেমেন্ট করতে হবে ২ শতাংশ হারে। আর এক হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে এককালীন জমা দিতে হবে ১ শতাংশ হারে। একজন গ্রাহক একবারই এ সুবিধা পাবেন। তবে প্রতারণা ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এ সুবিধা পাবেন না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, বৃহৎ ঋণ পুনর্গঠনের যে নীতিমালা করা হয়েছে, সেটি মোটামুটি ঠিকই আছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে, ঋণ পুনর্গঠনের পর অন্ততপক্ষে দুই বছর নতুন করে যাতে কোনো ঋণ না পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ওই দুই বছর প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা পরিশোধের অবস্থা পর্যালোচনা করেই তাদের নতুন ঋণের অনুমতি দিতে হবে।
এদিকে ১৫ শিল্প গ্রুপের জন্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসরকারি যেসব ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন জানিয়েছে সেসব ব্যাংক হলো ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এক্সিম ব্যাংক, ইউসিবিএল, আইএফআইসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ডাচ্-বাংলা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, পূবালী, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, আল-আরাফাহ্, প্রাইম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইসলামী ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংক বিডিবিএল।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:৫৩ ৪৩২ বার পঠিত