মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০১৫

সংশোধনীসহ অর্থবিল-২০১৫ পাস

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » সংশোধনীসহ অর্থবিল-২০১৫ পাস
মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০১৫



abul.jpgবঙ্গনিউজ ডটকমঃ  তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্যে রপ্তানিমূল্যের উপর প্রস্তাবিত উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ কয়েকটি সংশোধনীসহ অর্থবিল-২০১৫ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর মূসক (ভ্যাট) ১০ শতাংশের বদলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দুটি বিষয়সহ বেশ কিছু প্রস্তাবে পরিবর্তন আনতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অনুরোধ জানান।

বাজেট নিয়ে সমাপনী বক্তৃতা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমার প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সব বিষয়ে পরিবর্তন করার প্রস্তাব করেছেন সেগুলো অবশ্যই সংশোধন হবে।”

পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশান এরশাদের উপস্থিতিতে অর্থ বিল পাস হয়।

গত ৪ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সঙ্গে এই অর্থবিল উত্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সোমবার সকালে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রথমে দুজন সংসদ সদস্য বক্তৃতা দেন। তারপর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বক্তৃতা করেন।

পরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় কয়েকটি প্রস্তাবে সংশোধনী আনতে বলেন।

এরপর অর্থমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো গ্রহণ করে ‘সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনে আনীত অর্থবিল-২০১৫’ সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

মঙ্গলবার পাস হবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট, যা আগামী ১ জুলাই নতুন অর্থবছরের শুরুতে কার্যকর হবে।

গত ১ জুন বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ৪ জুন সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার এই বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেটের উপর অলোচনার শেষে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মোট ২১৯ জন সংসদ সদস্য ৫৭ ঘণ্টা আলোচনা করেছেন।

বাজেট প্রস্তাবে সংশোধনী

বিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে তৈরি পোশাকের রপ্তানিমূল্যের উপর শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য পণ্যে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হত। ৪ জুন অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন, তাতে রপ্তানি আয়ের উপর ১ শতাংশ উৎসে কর কাটার কথা বলা হয়।

বাজেটের নিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তা কমিয়ে সব ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখে অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “এ বছর এই সুযোগ দেন, আগামীতে ভালো করলে আপনি বাড়াবেন।”

এতোদিন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূসক প্রযোজ্য থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর কোনো মূসক ছিল না। এবার বাজেটে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যও ১০ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

বিএনপির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাও উচ্চাশিক্ষায় কর আরোপের এই প্রস্তাবের সমালোচনা করে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তা প্রত্যাহার করতে না বললেও ১০ শতাংশের বদলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব করেন।

এছাড়া সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ খাতে গবেষণা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেন সরকারপ্রধান।

তিনি ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে সব ধরনের আমদানি শুল্কসহ সব শুল্ক-কর প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের প্রতিষেধক, ভেষজ ও হারবাল ওষুধের কাঁচামালেও ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পোল্ট্রি ও মৎস্য শিল্প দেশে আমিষের চাহিদা মেটাতে অবদান রাখছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অর্থমন্ত্রী পোল্ট্রি শিল্পের আয় থেকে কর কাটার প্রস্তাব করেছেন। আমি অনুরোধ করব ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত করা হোক। এরপর ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ করা হোক।”

মৎস্য শিল্পের আয়কেও একইভাবে বিবেচনা করার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত বাজেটে পোল্ট্রি শিল্পের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় থেকে ৩ শতাংশ, ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা ১০ শতাংশ এবং ২০ লাখ টাকার উপরের আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে কর আদায়ের প্রস্তাব করেছিলেন। একই ধরনের প্রস্তাব ছিল মৎস্য খাতেও।

প্রস্তাবিত অর্থ বিলে এলাকাভেদে ন্যূনতম করের ভিন্নতা প্রত্যাহার করে সব এলাকায় ন্যূনতম কর ৪ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হলেও সব শেষে তা রাখা সম্ভব হয়নি।

বিভিন্ন মহলের সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ‘গ্রামীণ ও শহুরে করদাতাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায়’ নিয়ে সিটি করপোরেশন এবং এর বাইরের করদাতাদের জন্য আগের মতো তিন স্তরের কাঠামো করা হয়েছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের করদাতাদের জন্য ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ৪ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশনের বাইরের করদাতাদের জন্য ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে।

কোনো ভবন বা বাড়ি বা এর কোনো ইউনিট নির্মাণকালে নির্মাণসামগ্রী বাকিতে কেনা হলে পরবর্তী বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল বাজেট প্রস্তাবে। তবে পাস হওয়া অর্থ বিলে বলা হয়েছে, অন্য সবার ক্ষেত্রে এক বছরের এই বাধ্য-বাধকতা থাকলেও রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।

বাজেটে মুহিত আন্তর্জাতিক শিক্ষা কারিকুলাম অনুসরণকারী ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের টিআইএন সনদ দাখিল করা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছিলেন। পাস হওয়া অর্থবিলে বলা হয়েছে, কেবল সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের পৌর এলাকায় ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে এ নিয়ম খাটবে।

বাজেটে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে নতুন করে শুকনো মরিচ, তেলবীজ, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্য তেল, চাল, চালের খুদ, গম, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ২ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর প্রস্তাব করলেও ‘জনস্বার্থে’ অর্থবিল থেকে তা বাদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি জানান, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ছাড়া) ৪০ শতাংশ হারে আয়কর দেবে। এছাড়া যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, তাদের বেলায় এই করহার হবে ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে নতুন ব্যাংক, অর্থাৎ যেসব বেসরকারি ব্যাংক ২০১৩ সালে নিবন্ধন নিয়েছে সেগুলোর করহার ৪০ শতাংশই হবে।

সম্পূর্ণ প্রস্তুত মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। ডিশ অ্যান্টেনার কেবল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। বই আমদানিতে চলমান ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:২৬:০৫   ২৯৭ বার পঠিত