সোমবার, ২৯ জুন ২০১৫
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাদ দিতে নতুন ফন্দি!
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাদ দিতে নতুন ফন্দি!বঙ্গনিউজ ডটকমঃ রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের জন্য আয়োজন করেছে অভিনব এক পরীক্ষার। আগামীকাল মঙ্গলবার এ পরীক্ষা হবে। শিক্ষকরা বলছেন, তাঁদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষায় পাস করলে চাকরি টিকবে, নইলে বিদায় নিতে হবে। সব শিক্ষকের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিষয় ভাগ ও নম্বর বণ্টন করে শিক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এমনকি ৩০ বছর ধরে চাকরি করছেন এমন শিক্ষকদেরও বসতে হচ্ছে পরীক্ষায়।
শিক্ষকদের অভিযোগ, আসলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাদ দিতে কর্তৃপক্ষ নতুন এই ফাঁদ পেতেছে। এরই অংশ হিসেবে এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। সম্প্রতি এই স্কুলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সময় একেকজনের কাছ থেকে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এবার এই পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের মধ্য থেকে কিছু শিক্ষককে বাদ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। তাহলে আবার নতুন নিয়োগ দেওয়ার নামে টাকা নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
মাউশি সূত্র জানায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন কোনো পরীক্ষা নেওয়ার বিধান নেই। আর কোনো স্কুল তা নিতেও পারে না। যদি কোনো শিক্ষক কোনো বিষয়ে দুর্বল থাকেন তাহলে তাঁর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। আর প্রশিক্ষণের বিষয়ও হতে হবে তিনি যে বিষয়ে পড়ান তা-ই। একজন শিক্ষকের শেষ পড়ালেখার সঙ্গে প্রশিক্ষণেরও কোনো যোগসূত্র থাকা সঠিক নয়। আর ঘোষণা দিয়ে শিক্ষকদের পরীক্ষা নেওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটিই স্কুল পরিচালনা করে। কিন্তু হঠাৎ করেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এ ধরনের পরীক্ষা নিলে আমরা খোঁজখবর নেব। আর কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দেওয়া হয় শিক্ষকদের। তাতে বলা হয়, গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩০ জুন (মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শেওড়াপাড়া শাখায় টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট টেস্ট পরীক্ষা হবে। সব শিক্ষককে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। পরীক্ষার মানও বণ্টন করা হয়েছে। শিক্ষকদের শেষ ডিগ্রিতে অধ্যয়নের বিষয়ভিত্তিক ৮০ নম্বর ও সাধারণ জ্ঞান থাকবে ২০ নম্বরের। সৃজনশীল, বহু নির্বাচনী, এক বাক্যে ও এক কথায় উত্তর এবং সনাতনসহ যেকোনো ধরনের প্রশ্ন হতে পারে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষকরা নিজ নিজ শিফটের সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন।
নাম প্রকাশ না করে স্কুলের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘আমি ডিগ্রি পাস করেছি ১৯৮৫ সালে। এখন পড়াই মাধ্যমিকে। ওই সময়ে কোন বিষয় ছিল তাই তো মনে নেই। আর ওই বিষয়গুলোর পরীক্ষা কিভাবে দেব? কেউ হয়তো ডিগ্রি পাস, কেউ অনার্স, আবার কেউ মাস্টার্স পাস। কিন্তু সবার জন্য তো আলাদা প্রশ্ন করা হবে না। এর পরও এই স্কুলে চাকরি করতে হলে পরীক্ষায় বসতেই হবে। শিক্ষকদের এমন অপমান মনে হয় আর কোথাও করা হয়নি। আর আমি যদি ছাত্রদের পড়াতেই না পারতাম তাহলে ৩০ বছর ধরে চাকরি করছি কিভাবে?’
জানা যায়, মনিপুর স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। বর্তমানে এই স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারটি শাখায় ৬০০ শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। হঠাৎ করেই এ ধরনের অভিনব পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভ কাজ করছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানে কথায় কথায় চাকরি চলে যাওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
এসব বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেনের মোবাইল ফোনে গতকাল রবিবার একাধিকবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অন্য শিক্ষকরাও চাকরির ভয়ে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের পরীক্ষা নিয়ে বাদ দেওয়ার কোনো উপায় নেই। হয়তো একটি স্কুল নানাভাবে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে পারে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৫:০১ ৩৭৫ বার পঠিত