শুক্রবার, ২৬ জুন ২০১৫
জাল নোট ঠেকাতে চিরুনি অভিযান
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » জাল নোট ঠেকাতে চিরুনি অভিযানবঙ্গনিউজ ডটকমঃ ঈদ সামনে রেখে জাল নোটের বিস্তার ঠেকাতে এবং সরবরাহকারী চক্রের মূলোৎপাটনে চিরুনি অভিযানে নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক, র্যাব, পুলিশ ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ জন্য ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের বিপণিবিতানগুলোতে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা ঢোকানোর আগে তা জাল কি না শনাক্তকারী মেশিন দিয়ে যাচাই করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর পরও কোনো ব্যাংকের এটিএম বুথে জাল টাকা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেই সে দায় নিতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যেসব নিরাপত্তা সংস্থা এটিএম বুথে নোট সরবরাহে সহায়তা দিয়ে থাকে তাদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে এ-সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ ছাড়া জাল নোট-সংক্রান্ত মামলার কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সেগুলোকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, শিগগিরই সারা দেশের বিপণিবিতানে প্রকাশ্যে ও গোপনে জাল নোট শনাক্তকারী টিম পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে র্যাব, পুলিশ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর সমন্বয়ে একটি সেল গঠনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এদিকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনো ব্যাংকের এটিএম বুথে জাল নোট পাওয়া গেলে এখন থেকে সে ব্যাংককেই তার দায়ভার নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহককে হয়রানি করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অবশ্য তাদের চুক্তিভুক্ত নোট সরবরাহকারী বা সেবাদানকারী নিরাপত্তা সংস্থাকে দায়ী করতে পারবে। তবে এটিএম বুথে টাকা লোড দেওয়ার আগে (ফিডিংয়ের সময়) সব নোট যাচাই করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনে সব নোট যাচাই করতে হবে। এ ছাড়া জাল নোট চেনার উপায় এবং এ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বাজারে জাল নোটের বিস্তার ঠেকাতে এবং এ-সংক্রান্ত মামলার বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে তা ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এ অপরাধের শাস্তি ও জেল-জরিমানা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এতে জাল টাকার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির বিধান বাড়িয়ে ১০ বছর করা হতে পারে। এ-সংক্রান্ত ১০ হাজারেরও বেশি মামলা বর্তমানে হাইকোর্টসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে ঝুলে আছে। আইনি দুর্বলতা ও নানা জটিলতার কারণে এসব মামলার কার্যক্রম শেষ করতে পারছে না সরকার। সূত্রমতে, জাল নোট ছাপানো, সরবরাহ, বিস্তারে জড়িতদের তাৎক্ষণিক বিচার করতে এ প্রক্রিয়াকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনতে সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা জাল নোটের মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। নিষ্পত্তির আগেই আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবার এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। ফলে একদিকে জাল নোটের বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না, অন্যদিকে জড়িতদেরও বিচার হচ্ছে না বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রস্তাবে বলা হয়, বিশেষ করে ঈদ ও পূজাকে উপলক্ষ করে কয়েকটি চক্র রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জাল টাকার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। এ ধরনের ২১টি চক্রকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া সারা দেশে আরও শতাধিক চক্র জাল নোটের সঙ্গে জড়িত। সূত্রমতে, সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাল নোট ধরা পড়লে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এর বাইরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেসব ঘটনা ঘটে, ক্যাশ কর্মকর্তারা তা সঙ্গে সঙ্গে মেশিনের মাধ্যমে নষ্ট করে ফেলেন। ফলে সেসব জাল নোটের হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসে না। এসব ঘটনায় মামলাও হয় কদাচিৎ।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রগুলো বলছে, জাল টাকার বিস্তার রোধে ঢাকা শহরসহ সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, এমনকি গ্রামেগঞ্জে স্থাপিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ ধরনের অপরাধের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করতে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। তা শিগগিরই শুরু হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৫:২৫ ৪২৯ বার পঠিত