মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০১৫

মামলায় কাবু বিএনপি

Home Page » জাতীয় » মামলায় কাবু বিএনপি
মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০১৫



20130127-192317_89019.jpgবঙ্গনিউজ ডটকমঃ বিশ হাজারেরও বেশি মামলায় পাঁচ লক্ষাধিক আসামি নিয়ে কাবু হয়ে পড়েছে বিএনপি। মামলায় জর্জরিত হয়ে ‘সেঞ্চুরি’ পার করেছেন অনেক নেতা। খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৮ মামলার খড়গ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। সচল হয়েছে নাইকো ও গ্যাটকো মামলাও। বিএনপি এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন বেশ শঙ্কায়।

দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অন্তত অর্ধশত মামলা। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৮৩টি মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে। অবশ্য তিনি সব মামলায় জামিন পেয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তার মুক্তির সম্ভাবনাও রয়েছে। আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে ষষ্ঠবারের মতো জেল খাটছেন বিএনপির ক্লিন ইমেজের এই নেতা।জানা যায়, গত দুই বছরে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সারা দেশে অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজনৈতিক এসব মামলার বিচার প্রক্রিয়াও চলছে দ্রুতগতিতে। ফলে সাজা আতঙ্ক বিরাজ করছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। গ্রেফতারের ভয়ে নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ এখনো আত্মগোপনে। মামলার ঘানি টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। অবশ্য আইনিভাবে মোকাবিলা করে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করছেন অনেকে।বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অভিযোগ, জিয়া পরিবারসহ সিনিয়র নেতাদের নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই সরকার প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এসব মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা নিয়ে বিএনপিতে নানাভাবে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। উদ্দেশ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাদের সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা। এ ছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন যাতে গড়ে উঠতে না পারে সে জন্য বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টিরও পাঁয়তারা চলছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে একাধিকবার এ চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সরকার সফল হয়নি। একইভাবে ২০-দলীয় জোটের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস সৃষ্টির অপকৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে।পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে নাশকতার অভিযোগেই ১ হাজার ৭৭৫টি মামলা দায়ের হয়। বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ১৮ হাজার ৩৮ জনকে গ্রেফতার করে। মামলাগুলোর মধ্যে ১২০টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপির ৪০টি এবং অন্যান্য মহানগর এলাকার ৮০টি। জানা গেছে, নাশকতার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে চার্জশিট দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোয় পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে ব্যস্ত রাখতেই প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন মামলায় জড়াচ্ছে। রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে চেয়ারপারসনসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। জিয়া পরিবারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেই কৌশল নিয়েছে সরকার। কিন্তু তাদের এ উদ্দেশ্য সফল হবে না।’ বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। সরকার বিএনপি জোটের আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নতুন নতুন মামলায় জড়াচ্ছে।’ জানা যায়, হাইকমান্ডসহ দলের উল্লেখযোগ্য নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে চার শতাধিক মামলা। জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় অর্ধশত মামলা। আসামিদের অনেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার নতুন মামলায় গ্রেফতারের আতঙ্কে গাঢাকা দিয়েছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। এসব মামলায় গাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুর, জানমালের ক্ষতি, নাশকতার হুকুম দেওয়া, বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, দুর্নীতি, মানহানি, রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যাচেষ্টা, নাশকতা সৃষ্টি বা চেষ্টা, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেক মামলায় কিছুসংখ্যক আসামির নাম উল্লেখ থাকলেও বেশির ভাগেই অজ্ঞাতনামা আসামি। সূত্রমতে, মামলার ঘানি টানতে গিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা নিঃস্বপ্রায়। আবার মামলার আসামি হলে দল থেকে নেতা-কর্মীরা তেমন কোনো সাপোর্ট বিশেষ করে আইনি সহায়তা পান না। এর প্রভাব পড়ছে সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোসাদ্দেক আলী ফালু, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভী, গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সিলেটের মেয়র আরিফুল হকসহ অনেকে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন ও নস্যাৎ করতে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে নেতা-কর্মীদের একের পর এক মামলায় জড়াচ্ছে। সিনিয়র নেতাদেরও মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নামান্তর। এটা অগণতান্ত্রিক আচরণ। সরকারকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩২:৫৫   ৩৪৯ বার পঠিত