রবিবার, ২১ জুন ২০১৫
জয় দেখছে বাংলাদেশ
Home Page » এক্সক্লুসিভ » জয় দেখছে বাংলাদেশবঙ্গনিউজ ডটকমঃ ভারতীয়রা অবাক। বিস্ময়াভিভূত! বাংলাদেশের মানুষের বিস্ময়ের মাত্রাও কী কম! পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিতে অভিষেকেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। শহীদ আফ্রিদি আর মোহাম্মদ হাফিজের দুটি উইকেট তুলে নিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান জানান দিয়েছিলেন নিজের বোলিং প্রতিভার। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকের প্রথম দুটি ম্যাচেই ভারতীয়দের চোখের জল-নাকের জল একাকার করে তুলে নিলেন ১১ উইকেট। প্রথম ওয়ানডেতে তাঁর ৫ উইকেট বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল ৭৯ রানের বিশাল জয়। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিয়েছেন ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের রাস্তাটি।
বাঁ হাতি পেসার, বিস্ময়-বালক মুস্তাফিজেই কুপোকাত ভারতীয় ব্যাটিং। ১০ ওভার বল করে ৪৩ রান দিয়ে তাঁর তুলে নেওয়া ৬ উইকেটেই ২০০ রানে শেষ ভারতীয় দল। বৃষ্টির কারণে দুই ঘন্টার কাছাকাছি বন্ধ থাকা খেলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৪৭ ওভারে কমিয়ে নিয়ে আসা এই ম্যাচে অবশ্য ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য বাংলাদেশকে করতে হবে ৪৭ ওভারে ২০০ রান।
টসে জিতে ভারত ব্যাট করতে নামার পর সবার মনেই ছিল আশঙ্কার কালো মেঘ। শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের যন্ত্রণা ভুলতে না আবার চড়াও হয় বাংলাদেশি বোলিংয়ের ওপর। কিন্তু আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ তো আর এক নয়। এই বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জটা নিল। আর নিয়েই উল্টো আক্রমণে বাংলাদেশের বোলাররা।
ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই মুস্তাফিজের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিলেন রোহিত শর্মা। সাব্বির রহমানের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরা ক্যাচটা ছিল দুর্দান্তই। শূন্য রানে রোহিত শর্মার মতো ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপের মুখে থাকা ভারতীয় ব্যাটিংকে অবশ্য এ যাত্রায় উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন শিখর ধাওয়ান আর বিরাট কোহলি। নিজেদের মধ্যে ৭৪ রান তুলে যখন ভয়ংকর হয়ে উঠছেন, ঠিক তখনই আঘাত এলো নাসির হোসেনের তরফ থেকে। প্রয়োজনের সময় এই নাসির যে দলের গুরুত্বপূর্ণ বোলিং অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন, তার স্বাক্ষর রেখে কোহলিকে তিনি ফেললেন এলবির ফাঁদে।
কোহলির বিদায়ের পর উইকেটে এলেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে জুটি বেঁধে আবারও হুমকি দিলেন বাংলাদেশকে। কিন্তু নাসিরের পরের শিকার ৫৩ রানে ব্যাট করতে থাকা ধাওয়ান।
নাসির আজ কিন্তু বল করেছেন অসাধারণই। নিজের দশ ওভারের কোটায় তিনি রান দিয়েছেন মাত্র ৩৩! নাসিরের এই দশ ওভারই যে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ওপর চাপটা তৈরি করে দিয়ে যায়, সে গল্পটা ইনিংসের পরের অংশের।
এই অংশে ছোট্ট একটা ভূমিকা রুবেল হোসেনের। অজিঙ্কা রাহানের জায়গায় মাঠে নামা আম্বাতি রাইডুকে নাসিরের সহায়তায় ফিরিয়ে ভারতের চাপের মাত্রাটা আরও বড় করেন রুবেল হোসেন।
আম্বাতির বিদায়ের পর সুরেশ রায়না আর ধোনি মিলে ভারতকে সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার লড়াই চালিয়েছিলেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৫৩ রান তুলে বাংলাদেশকেও বাধ্য করেছিলেন নতুন কোনো স্ট্র্যাটেজি ভাবতে। কিন্তু মাশরাফির স্ট্র্যাটেজি হিসেবে এই জায়গায় যে বাজিমাত করবেন ১৯ বছরের এক তরুণ, সেটা কী ধোনি ভেবেছিলেন।
ইনিংসের এই পর্যায় পুরোটাই মুস্তাফিজের। প্রথমে সুরেশ রায়নাকে দিয়ে শুরু। এরপর পরপর দুই বলে ফেরত পাঠালেন মহেন্দ্র সিং ধোনি আর অক্ষর প্যাটেলকে। আগের ম্যাচে ধোনির ধাক্কা খেয়েছিলেন। কিন্তু ধোনিকে তুলে নিতে পারেননি। আজ আগের দিনের ধাক্কার প্রতিশোধ তিনি নিলেন অভিজ্ঞ ধোনিকে দারুণ এক স্লোয়ারে বোকা বানিয়ে। অশ্নিও শিকার হলেন তাঁর অসাধারণ বোলিংয়ে। ১০২ রানে ২ উইকেট হারানো ভারত এই এক মুস্তাফিজের কারণেই পরের ছয় উইকেট হারায় খুব অল্প ব্যবধানে। আড়াইশ বা তার চেয়ে বেশি সংগ্রহের লক্ষ্যে থাকা ভারতের ইনিংস হাপিত্যেশ করে মরছে রান দুই শ পার করার জন্য।
ভারত ১৯৬ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বসার পর বৃষ্টি এসে বন্ধ করে দেয় খেলা। প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হলে প্রথম বলেই রবীন্দ্র জাদেজাকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। রুবেল বাকি কাজটা করেন ভারতের রান যখন সবে দুশোর কোটা ছুঁয়েছে।
মুস্তাফিজময় ভারতীয় ইনিংসে আজ প্রায় সকলেই পার্শ্ব চরিত্র। বাকি চারটি উইকেট নাসির আর রুবেল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।
ভাবা যায়, ভারতকে মাত্র ২০০ রানে প্যাকেট করে দেওয়ার দিনে উইকেটশূন্য মাশরাফি-সাকিব!
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৯:৫৬ ৩৫১ বার পঠিত