শনিবার, ২০ জুন ২০১৫
চকবাজারে ইফতারি ঐতিহ্য
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » চকবাজারে ইফতারি ঐতিহ্যবঙ্গনিউজ ডটকমঃ রোজার দিনের বিকেল মানেই ইফতারি আয়োজন। সে আয়োজন যেমন চলে ঘরে, তেমনি বাইরেও। রোজার বিকেলে ঘরে ঘরে রকমারি ইফতারি তৈরি হয়। তবে শহুরে রোজাদারদের আগ্রহ থাকে ঐতিহ্যবাজী কিছু ইফতারির বাজারে। এসব ঐতিহ্যবাহী ইফতারি বাজারের অন্যতম হচ্ছে ঢাকার চকবাজার। রোজার যে কোনো দিন চকবাজারে গেলেই আপনি বিক্রেতাদের মুখে শুনতে পাবেন, ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’। এটি আসলে চকবাজারের ইফতারির ঐতিহ্যগত শ্লোগান। কে সেই বড় বাপ, আর কে সেই পোলা (ছেলে), তা কিন্তু জানে না চকবাজারের কেউ। তবে মুঘল আমল থেকেই ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে চকবাজারের ইফাতারি এখনো শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে।অন্যান্য বছরের মতো এবার রোজার শুরুতেই জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এ ইফতারি বাজার। সরগরম হয়ে উঠেছে পুরান ঢাকার চকবাজার, নাজিমউদ্দিন রোড, চক সার্কুলার রোড, নর্থ-সাউথ রোড, শাহী মসজিদ রোডসহ বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকায় সাজানো হয়েছে শত শত দোকানে রকমারি ইফতারির পসরা। সম্প্রতি চকের ঐতিহ্য যেন আরও বেড়েছে। এখনকার ইফতার সামগ্রীও উৎকৃষ্ট মানের। বংশ পরম্পরায় তৈরি হয় চকের ইফতারি। যুগ যুগ ধরে ইফতার তৈরির একই ধারা এখানে চলে আসছে। সুতি কাবাব, জালি কাবাব তৈরি হয় সেই মুঘল ধাঁচে। আস্ত মুরগির রোস্ট, কবুতর রোস্ট, বঁটি কাবাব, জালিকাবাব, সুতি কাবাবের পাশাপাশি চকবাজারে উঠেছে আস্ত খাসির কাবাবও। রয়েছে নানা ধরনের শরবত আর ফলের পসরা। আম, কাঁঠাল, বাঙ্গি, পেয়ারা, আপেল, নাশপতি সবই আছে সেখানে।চকবাজারে মূলত দুপুর থেকেই শুরু হয় ইফতার বাজারের ভিড়। দুপুর যতো বিকেলের দিকে গড়াতে থাকে ততোই বাড়তে থাকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম। জমে ওঠে রকমারি ইফতার বিক্রির ধুম। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসতেই বাড়তে থাকে বিক্রেতাদের হাঁকডাক। প্রায় ৭৫ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ খাবারটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ৩১টি আইটেম। এ খাবারে ডিম, কলিজা, আলু, মরিচ, গরুর মগজ, মুরগি গোস্তের কুচি, গিলা, সুতি কাবাব, কিমা ডাবলি চিড়া, বুটের ডালসহ ১৫ পদের খাবার ও ১৬ পদের মশলার মিশ্রণ করা হয়। সবার কাছে এই খাবারটি ব্যাপক জনপ্রিয়। মগবাজার থেকে আসা একজন রোজাদার ইমরান বলেন, বড় বাপের পোলায় এ খাবারটি খাবে বলেই এখানে আসতে হয়েছে। এটা সবারই খুব পছন্দের।চকবাজারের ইফতারি দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, এখানে বেগুনি, আলুর চপ, পনিরের পেটিস, সাসলিক, রোল, নারকেলি, ডিম চপ, পাকুড়া, নিমকি, চিকেন টোস্ট, ছোলা, ভেজিটেবল রোল, শিঙ্গাড়া, সমুচা, মুরগি ও গরুর কিমা বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। পাশাপাশি হরেক রকম কাবাবেরও বেশ চাহিদা এখানে। এসবের মধ্য সুতি, কাঠি, জালি, শিক ও নার্গিস ব্যাপক জনপ্রিয় বলে জানান এক কাবাব বিক্রেতা। ঝাল ইফতারের পাশাপাশি মিষ্টি সামগ্রীরও কমতি নেই চকবাজারে। শাহী জিলাপি বিক্রি হচ্ছে বিরামহীন। সব মহলের ক্রেতাদের কাছেই এ জিলাপির বেশ চাহিদা রয়েছে জানান বিক্রেতারা। মিষ্টিসামগ্রীর মধ্যে চকবাজারে পাওয়া যাচ্ছে ছানার মিষ্টি, আমিত্তি, ফিরনি, মিষ্টি শিঙ্গাড়া, মিষ্টি রোল ও রস বড়ি। এ ছাড়াও রয়েছে বাহারি রকমের শরবত। নানান ফল আর মুখরোচক জিনিস দিয়ে তৈরি এসব শরবতের মধ্যে রয়েছে চকের মাঠা, বোরহানি, লাবাং, লাচ্চি, লেবুর শরবত ও কাশ্মিরি শরবত।চকের একটি দোকানে গিয়ে দেখা গেলো নানা আইটেমের ইফতার। এর মধ্যে রয়েছে বড় আকারের আস্ত মুরগির রোস্ট। প্রতিটির দাম ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। এছাড়া তার আরেকটি খাবার ‘আনাম খাসি’ (আস্ত খাসি)। এর দাম সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অন্যান্য পদের মধ্যে তিনি বিক্রি করছেন কোয়েল পাখির রোস্ট, প্রতি পিস ৮০ থেকে ১শ’ টাকা এবং চিংড়ি রোস্ট প্রতি পিস ২শ’ থেকে ২শ’ ৫০ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা বলেন, ‘দামের কারণে নয়, ঐতিহ্যবাহী ইফতারির স্বাদ নিতেই এখানে ছুটে আসা। চকবাজারে ইফতারির যেমন নাম রয়েছে, স্বাদেও অতুলনীয়। তাই সুযোগ পেলেই এখানে ছুটে আসেন ক্রেতারা। তবে এবার ইফতার সামগ্রীর দাম গত বারের থেকে একটু বেশি।’
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৩:৪৬ ৪৭৬ বার পঠিত