মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০১৫

মিয়ানমারে বাংলাদেশের লক্ষাধিক মোবাইল সংযোগ

Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » মিয়ানমারে বাংলাদেশের লক্ষাধিক মোবাইল সংযোগ
মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০১৫



1434405437mtnews.jpgবঙ্গনিউজ ডটকমঃ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মিয়ানমারে এখন বাংলাদেশি মোবাইল সংযোগ ছড়িয়ে গেছে। লক্ষাধিক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশি মোবাইল কোম্পানির সংযোগ যত্রতত্র ব্যবহার করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। আর এরই কল্যাণে বাংলাদেশের সীমান্ত টেকনাফের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার যোগাযোগ সহজ হয়েছে।

 

এতে ইয়াবা পাচার, মানব পাচারসহ অন্য চোরাকারবারিরা খুব সহজেই বাংলাদেশের সঙ্গে এসব মারাত্মক পাচারের কার্যক্রম করে বেড়াচ্ছে। আর এর সঙ্গে দেশের কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে মিয়ানমারে। দেশের সীমান্তে স্থাপিত মোবাইল ফোনের টাওয়ারের নেটওয়ার্ক মিয়ানমারের মংডুর ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এতে মানব পাচার, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং চোরাকারবারিরা মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে সীমান্তে নানা অপরাধ সংঘটিত করছে।

সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সংযোগ (সিডিএমএ) ছাড়া অন্য কোনো সংযোগ ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো রোমিং সংযোগ চুক্তি নেই। এর পরও মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী থেকে শুরু করে সেখানকার লক্ষাধিক নাগরিক বাংলাদেশের মোবাইল সংযোগ অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। এতে দৈনিক তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকার মোবাইল ব্যালেন্স রিচার্জের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে মিয়ানমারে।

মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকায় বাংলাদেশি বিভিন্ন অপারেটরের সংযোগ সহজলভ্য হওয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি সুবিধা ভোগ করছে মানব পাচারকারী, ইয়াবা পাচারকারী ও চোরাকারবারিরা। এ দেশের মাদক সিন্ডিকেট ও চোরাকারবারিদের সঙ্গে মুহূর্তে তারা সংযোগ চালিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য মংডু, টাউনশিপ, ফয়েজিপাড়া, সিকদারপাড়া, বলিবাজার, কাউয়ারবিল, তিনমাইল, চারমাইল, উকিলপাড়া, আশেক্যাপাড়া, মেরুলা, উদং, কাহারিপাড়া ও মংডুটাউনশিপ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী আলীতাংজু পর্যন্ত বাংলাদেশের সংযোগ অবাধে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী কয়েক লাখ মিয়ানমারের নাগরিক অনায়াসে মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে তথ্য পাচার ও নানা অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, টেকনাফ উপজেলায় বাংলাদেশের মোবাইল সংযোগ দানকারী অপারেটরদের (গ্রামীণফোন, রবি, সিটিসেল, এয়ারটেল, বাংলালিংক, টেলিটক) সরকারি সীমানা নির্ধারণ ও নজরদারি না থাকায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে লক্ষাধিক সংযোগ (সিমকার্ড) অবৈধভাবে ব্যবহার করছে দেশটির নাগরিকরা। এতে তারা ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অনায়াসে বাংলাদেশের গোপন তথ্য পাচারের পাশাপাশি ইয়াবা, মানব পাচার, চোরাচালানসহ বিকাশের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করছে।

অন্যদিকে টেকনাফ উপজেলার আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার মোবাইল রিচার্জ ও বিকাশে টাকা লেনদেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারা অপারেটরদের কাছে টেকনাফের গ্রাহকদের চারগুণ বাড়তি চাহিদা দেখিয়ে সিম ও ব্যালেন্স রিচার্জ সংগ্রহ করে মিয়ানমারে অবৈধভাবে পাচার করছে। তারা বিভিন্ন মেলা ও উৎসবের নাম দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে সিমকার্ড।

এ ছাড়া কিছু অসাধু সিম এজেন্ট স্টুডিও ও ফটোকপিয়ারদের কাছ থেকে শ’ হিসাবে ছবি এবং আইডি কার্ডের কপি কিনে নামে-বেনামে তথ্য ফরম পূরণ করে মিয়ানমারের নাগরিকদের কাছে সিম বিক্রি করছে বলে জানা গেছে। টেকনাফে মোবাইল ব্যবহারকারী কয়েকজন যুবক অভিযোগ করে বলেন, এখানে যেসব ভিটিএস টাওয়ার বসানো হয়েছে তা স্থানীয় গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু অপারেটরের সঙ্গে আঁতাত করে স্থানীয় বিভিন্ন এজেন্ট চারগুণ সিম ও মোবাইল ব্যালেন্স রিচার্জ এনে অবৈধভাবে মিয়ানমারে পাচার করছে। আর পথে পথে ভোগান্তি পোহাচ্ছি সাধারণ গ্রাহকরা।

অতিরিক্ত সংযোগের ফলে মিনিট পার হতে না হতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ক্রস কানেকশন হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশের সব মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, সীমান্তে মোবাইল ফোন টাওয়ার থাকার কারণে মানব পাচার, ইয়াবা পাচারসহ সহজেই বিভিন্ন অপরাধ করছে রোহিঙ্গারা।

এ ছাড়া তারা বিকাশের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে সীমান্তের ওপারে। বিজিবির ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, সীমান্ত-লাগোয়া মোবাইল ফোন টাওয়ারের বিষয়ে শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে সংযোগদাতা অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৭:২৭   ৪১৩ বার পঠিত