মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০১৫
সমর প্রযুক্তিতে চীনের সাফল্যে যুক্তরাষ্ট্রে অস্বস্তি
Home Page » এক্সক্লুসিভ » সমর প্রযুক্তিতে চীনের সাফল্যে যুক্তরাষ্ট্রে অস্বস্তিবঙ্গনিউজ ডটকমঃ শব্দের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুতগতিতে চলার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরমাণু অস্ত্রবাহী হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র-যানের সফল পরীক্ষা চালিয়ে সামরিক প্রযুক্তিতে আরো একধাপ এগিয়ে গেল চীন। গত রোববার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে সামরিক প্রযুক্তিতে চীনের এই অর্জন নিয়ে অস্বস্তি শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুল কথিত এবং প্রায় দুর্ভেদ্য মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যুহকে ভেদ করতেই চীন পরমাণু অস্ত্রবাহী উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে বলেই মার্কিন প্রশাসনের এই উদ্বেগ। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্রটিকে ডাব্লিউইউ-১৪ বলেও অভিহিত করে। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, গত রোববার পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে। এ ধরনের নিয়মিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরীক্ষা চালানো এই ভূখ-ে স্বাভাবিক ঘটনা। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত ১৮ মাসে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এই আকাশযানের পরীক্ষাগুলো চালিয়েছে বেইজিং। বিশ্বের সমর বিশ্লেষকরা মনে করেন, দক্ষিণ চীনসাগরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রর নাক গলানোর বিরুদ্ধে নিজেদের পরমাণু সক্ষমতা প্রদর্শন করার জন্যই চীনের এই বৈজ্ঞানিক প্রয়াস। প্রসঙ্গত, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে পরপর চারবার অস্ত্রটির পরীক্ষা চালালো চীন।অস্ত্রটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানতে পারবে। এটি ঘণ্টায় সাত হাজার ৬৮০ মাইল বেগে ছুটে যেতে পারবে। চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ফ্যাং চ্যাংলঙের যুক্তরাষ্ট্র সফরের একদিন আগে এ পরীক্ষাটি চালানো হলো। এক সপ্তাহের সফরে চ্যাংলঙের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা রয়েছে। সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টারের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, অ্যাশটন কার্টারের সঙ্গে বৈঠকের সময় দর কষাকষিতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার কৌশলের অংশ হিসেবেই এই মিসাইল-যানের পরীক্ষা চালিয়েছে চীন।মার্কিন সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট দি ওয়াশিংটন ফ্রিবিকন-এর এক প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলেছে, আমাদের নিজস্ব ভূখ-ে এই নির্ধারিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষাগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। এই পরীক্ষাগুলো কোনো দেশকে লক্ষ্যবস্তু করে নয়। ওয়াশিংটন ফ্রিবিকনই চীনের এই মারণাস্ত্র উৎক্ষেপক পরীক্ষার বিষয়ে সর্ব প্রথম খবর প্রকাশ করেছিল। প্রথম পরীক্ষাটি চালানো হয়েছিল ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি। এরপর একই বছরে আরও দু’বার পরীক্ষা চালানো হয়েছিল।এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনই হলো দ্বিতীয় দেশ, যারা মাক ১০-এর চেয়ে বেশি গতির এবং পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম হাইপারসনিক ডেলিভারি ভেহিকল তৈরি ও সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ভারতের তৈরি হাইপারসনিক যানগুলো দ্রুততার সঙ্গে অস্ত্র নিক্ষেপের জন্য তৈরি।মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী ডাব্লিউইউ-১৪ পরমাণু অস্ত্রবাহী এমন একটি যান, যা ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ঠেকাতে তৈরি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাগুলোকেও পরাস্ত করতে সক্ষম। এ ছাড়া চীন এমন একটি হাইপারসনিক অস্ত্র বানাচ্ছে, যাতে উচ্চ প্রযুক্তির স্ক্র্যাম জেট ইঞ্জিন লাগানো থাকবে। পাশাপাশি রাশিয়াও বিদেশি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম নতুন ধরনের হাইপারসনিক অস্ত্র বানানোর কথা নিশ্চিত করেছে।বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো ডাব্লিউইউ-১৪ বা এ-জাতীয় কৌশলী মারণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে সক্ষম নয়। অবশ্য, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, এ ধরনের উচ্চ গতির ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে তাদের হাতে একটিমাত্র অস্ত্র আছে। সেটি হলো মার্কিন সেনাবাহিনীর হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি সম্প্রসারিত পাল্লার সংস্করণ। এদিকে, চীনের এ পরীক্ষার ব্যাপারে অস্বস্তি শুরু হয়েছে যুুক্তরাষ্ট্রে। কারণ, এই আকাশ যানের ক্ষিপ্রতা এবং দ্রুতগামিতার সামনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত মিসাইল রক্ষাব্যুহ তেমন কাজে আসবে না। কারণ উড়ন্ত যানটি একই সঙ্গে পরমাণু এবং প্রচলিত ওয়্যারহেডও ছুড়তে পারে বলে চীনা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আভাস দেয়া হয়েছে। এনডিটিভি, বিজনেস ইনসাইডার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৪:২৭ ১০৪৮ বার পঠিত