মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১২

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পার্ক হাই !!!

Home Page » বিশ্ব » দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পার্ক হাই !!!
মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১২



শুভ, বঙ্গ-নিউজ ডটকম: পার্ক জেউন হাই বুধবার অনুষ্ঠেয় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে এ পদে নির্বাচিত প্রথম নারী হিসেবে তিনি নারী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জেন্ডার উন্নয়নের মাপকাঠিতে দেশটি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং লাতিন আমেরিকান দেশ সুরিনামের চেয়ে মাত্র একধাপ নিচে অবস্থান করছে।
পার্ক রক্ষণশীল নিউ ফ্রন্টিয়ার পার্টির (এনএফপি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাটিক ইউনাইটেড পার্টি প্রধান মুন জ্যা ইনের সঙ্গে তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ডেমোক্র্যাটিক ইউনাইটেড পার্টি বর্তমানে দেশটির প্রধান বিরোধী দল। মুন যেন নির্বিঘেœ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন সে উদ্দেশ্যে বিরোধী জোটের অন্যতম শরিক ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ পার্টির নেতা লি জুং হি রবিবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু লি সরে দাঁড়ালেও মুন খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। সব মিলিয়ে জনমত এখনও পার্কের নেতৃত্বাধীন নিউ ফ্রন্টিয়ার পার্টির দিকেই ঝোঁকা। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে এনএফপি দলীয় বর্তমান প্রেসিডেন্ট লি মিউং বাক আরেক মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা যায় মুনের চেয়ে খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন পার্ক।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দরিদ্র দেশ থেকে এশিয়ার চতুর্থ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার উত্থান ঘটলেও আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়েনি। পার্লামেন্টে নারী সদস্যের সংখ্যা ১৫ শতাংশ এবং বড় ধরনের দেড় হাজার কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার পদে ১২ শতাংশ নারী রয়েছেন। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে নারীর আয় পুরুষের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। সম্প্রতি নারী নেত্রীদের এক সমাবেশে ৬০ বছর বয়সী পার্ক বলেছেন, ‘সবাই এখন পরিবর্তন ও সংস্কারের দাবি তুলছেন, নারী হিসেবে দেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হতে পারাটা আমাদের এ যাবত অর্জিত সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ও রাজনৈতিক সংস্কার হবে বলে আমি মনে করি। এই সুযোগ গ্রহণ না করে আপনি কখনও নারী সমাজের জন্য বিপ্লব ঘটাতে পারবেন না।’ শাসক এনএফপি তাঁকে ইতোমধ্যেই ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রস্তুত নারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তবে সবাই যে পার্ককে দেশটির ২ কোটি ৪০ লাখ নারীর জন্য একজন মডেল বিবেচনা করেন তা নয়। অনেকে পার্কের মধ্যে তার পিতা সেনাশাসক পার্ক চুং হি’র ছায়া লক্ষ্য করছেন। পার্ক চুং হি ১৯৬২ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় আসেন এবং সেনাবাহিনীর হাতেই তিনি প্রাণ হারান। তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান তিনি দেশটিতে শিল্পায়নের সূচনা ঘটিয়েছিলেন। তাঁর মেয়ে এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, রাজনীতিক হিসেবে পার্কের গত ১৫ বছরে তাঁর বড় কোন অর্জন নেই বা তাঁর ভূমিকা কখনই তেমন উজ্জ্বল ছিল না। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতা প্রতিযোগিতার সময় দলের মধ্যে পার্কের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন লি জ্যা ওহ। লি একবার বলেছিলেন, নারীরা দেশ পরিচালনার কাজে অনুপযুক্ত। এ কাজে আসতে হলে পুরুষদের মতো তাদেরও দু’ বছর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। উল্লেখ্য, দেশটিতে প্রত্যেক পুরুষের দু’ বছর সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। চলতি বছর গোড়ার দিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বে জেন্ডার সমতার যে র‌্যাংকিং প্রকাশ করে তাতে ১৩৫ দেশের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার স্থান ছিল ১০৮-এ। এর একধাপ ওপরে ছিল উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং একধাপ নিচে অপর উপসাগরীয় দেশ কুয়েত।

বাংলাদেশ সময়: ২:৩৭:৫৩   ৫৭৬ বার পঠিত