মঙ্গলবার, ২ জুন ২০১৫
রানা প্লাজার রানাসহ ৪১ আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » রানা প্লাজার রানাসহ ৪১ আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগবঙ্গনিউজ ডটকমঃ রানা প্লাজা ধসের দুই বছরের বেশি সময় পর দুই মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ, যার একটিতে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর ইমারত বিধি না মেনে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে অন্য মামলায় রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর জানান।সোমবার দুপুরে তিনি অভিযোগপত্র দুটি ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে জমা দেন। অভিযোগপত্র দুটি আগামী ২৮ জুন বিচারকের সামনে উপস্থাপন করা হবে।ওইদিন তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়না জারির বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল জানান।
ইমরাত আইনের মামলাটির বিচার হবে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে। আর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হবে হত্যা মামলার বিচার।২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যন্ড সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ভেঙে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরও হাজারখানেক শ্রমিক যারা ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
বাংলাদেশের ওই ঘটনা সে সময় আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। দেশে কারখানার অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এলে সরকার ও মালিকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। সোহেল রানাসহ ২১ জনকে এজাহারে আসামি করা হয়।
তবে তদন্ত শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানোসহ দণ্ডবিধির ৩০২, ৩২৬, ৩২৫, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৬৫, ৪৭১, ২১২, ১১৪, ১০৯, ৩৪ ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন। অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, “২৩ এপ্রিল রানা প্লাজায় ফাটল ধরার পর ঝুঁকি জেনেও শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। কাজ না করলে চাকরিচ্যুতির হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এটা আসলেণ ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা। এ কারণেই অভিযোগপত্রে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।” অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
ইমারত বিধি না মেনে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে রানাসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় অন্য মামলাটি করেন রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ।ভবনের নকশায় ত্রুটি, অনুমোদন না নিয়ে উপরের দিকে সম্প্রসারণ, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের তথ্যও তদন্তে উঠে আসে।
১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনের ১২ ধারায় দেওয়া এ মামলার অভিযোগপত্রে মোট ১৮ জনকে আসামি করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ দুই বছর শাস্তি হতে পারে।দুই মামলা মিলিয়ে মোট ৪২ জন আসামির মধ্যে রানাসহ চারজন বর্তমানে কারাগারে। হত্যা মামলায় ২৫ জন এবং অন্য মামলায় সাতজন পলাতক রয়েছেন; বাকিরা জামিনে।হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৯৪ জন এবং ইমারত বিধির মামলায় ১৩৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এই ৪২ জনের মধ্যে রানা, তার বাবা আবদুল খালেক ওরফে কুলু খালেক ও মা মর্জিনা বেগমসহ ১৭ জন দুই মামলাতেই আসামি।
দুই মামলার এজাহারে সাভারের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সরদারের নাম এলেও ‘সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায়’ অভিযোগপত্রে তার নাম যুক্ত করা হয়নি বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণ কর।
এছাড়া ‘অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায়’ প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী এমতেমাম হোসেন, সহপ্রকৌশলী আলম মিয়া, আব্দুল মান্নান, রাসেল আহমেদ, আলমগীর হোসেন, রানা প্লাজায় থাকা ফ্যান্টম টেকের অন্যতম মালিক ডেভিড মেয়ের রেকো এবং তন্ময় হাউজিং কোম্পানির চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম বাবুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আসামিদের মধ্যে ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, সোহেল রানার মা মর্জিনা বেগম, সাভারের পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটন লিমিটেডের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, নিউওয়েব স্ট্রাইপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার কামাল, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কমকর্তা উত্তম কুমার রায়, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ও নান্টু কন্ট্রাকটর উভয় মামলার আসামি।
বাকি আসামিরা হলেন- আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. মধু, অনিল দাস, মো. শাহ আলম ওরফে মিঠু, মো. আবুল হাসান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের সাবেক উপ-প্রধান পরিদর্শক মো. আব্দুস সামাদ, উপ-প্রধান পরিদর্শক মো. জামশেদুর রহমান, উপ-প্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, পরিদর্শক (প্রকৌশল) মো. ইউসুফ আলী, পরিদর্শক (প্রকৌশল) মো. মহিদুল ইসলাম, ইমারত পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন, ইথার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মো. আতাউর রহমান, মো. আব্দুস সালাম, বিদ্যুৎ মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, মো. আব্দুল হামিদ, আব্দুল মজিদ, মো. আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, মো. ইউসুফ আলী, তসলিম ও মাহবুল আলম।
আসামিদের মধ্যে মোট ১৬ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে আবদুল খালেক, রেফাতউল্লাহ, অনিল দাস, শাহ আলম ও আবুল হাসান, মোহাম্মদ আলী খান ও রাকিবুল হাসান জামিন পান । অভিযোগপত্রে পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৩:৩১ ৩২৯ বার পঠিত