রবিবার, ২৪ মে ২০১৫
সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবার বন্ধ হতে যাচ্ছে !!
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবার বন্ধ হতে যাচ্ছে !!বিশেষ প্রতিনিধিঃযেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমনই ইঙ্গিত দিলেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা। তারা বলেছেন, পুলিশের অত্যাচারে তারা অতিষ্ট। রাস্তা-ঘাটে তারা ডাকাতি বন্ধ করতে পারে না, কিন্তু কোন ঘটনা ঘটলেই বাদ-বিচার ছাড়াই দায় চাপিয়ে দেয় পরিবহন শ্রমিকদের উপর। তারা বলেছেন, রাস্তা-ঘাটে কোন অপরাধের দায় নিতে চায় না পুলিশ। অথচ তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে অপরাধের ঘটনা ঘটছে। পরিবহন সেক্টর থেকে বলা হয়েছে, আগামীকাল সোমবার থেকে দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের মধুখালীতে গত ১৮ মে রাতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
যাত্রীবেশী ডাকাতদল বাস যাত্রীদের সাত হাজার ২০০ মার্কিন ডলার, ২২ হাজার ভারতীয় রূপি, ১৬ ভরি স্বর্ণালংকার, প্রায় ৪ লাখ টাকা এবং ২৫ টি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। ডাকাতদল রাজবাড়ী থেকে ডাকাতি শুরু করে। মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি-পরিতিপুর আলতু খান জুট মিলের কাছে নেমে যায়। পরিবহন সূত্র জানায়, দুর্বৃত্তরা বাসের চালক হেলপারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে গাড়ী থেকে নেমে যায়। ঘটনার পর চালক গাড়ী চালিয়ে মধুখালী থানার সামনে যায়। সেখানে চালক আয়নাল এবং হেলপার সাকিল থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো তাদেরকে আটক করে। তাদেরকে মুক্ত করার জন্য ওই পরিবহনের চেকার থানায় গেলে তাকেও পুলিশ আটক করে। এব্যাপারে মধুখালী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেছেন, যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে আটক করা হয়েছে।
কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলেছেন, গাড়ীর চালক-হেলপার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তারা থানায় মামলা দায়েরের জন্য যেতো না। এদিকে, ঘটনার পর থেকে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছে এবং মঙ্গলবার থেকে অবরোধ কর্মসূচী পালন করছে। এদিকে, রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় পুলিশ দ্রুত বিচার আইনে আরো একটি মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে চেকার রবিউলকে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলেছে, তাদের অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
এদিকে অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তির মধ্যে। টানা ৫ দিনে তারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেকের জরুরী থাকার পরেও তারা ঘর-বাড়িতে যেতে পারছেন না। আবার কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে বিকল্প পথে বাড়ি ফিরছেন। এদিকে, গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়ার হুমকী দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে যশোর বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ হুমকি দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে আটক শ্রমিকদের মুক্তি ও ‘দোষী পুলিশ’ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সারা বাংলাদেশে পরিবহন ধর্মঘট শুরু করা হবে। সম্মেলনে খুলনা বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আলী আকবার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাদেক হোসেন ও খুলনা বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক আজিজুল আলম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।
পরিবহন ধর্মঘটকে শ্রমিকদের ‘যৌক্তিক আন্দোলন’ দাবি করে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতা আলী আকবার বলেন, “এ আন্দোলন থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকাসহ সব বিভাগের মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চলছে।” বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুস্তুম আলী খান বলেন, রাস্তায় ডাকাতি হলেই পুলিশ চালক হেলপারকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তিনি বলেন, যারা ভিকটিম তাদেরকেই পুলিশ হয়রানী করে। রুস্তুম আলী বলেন, সড়ক মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশের দায়িত্ব রয়েছে। পুলিশ সেই দায়িত্ব পালন করছে না। উল্টো ভিকটিমদেরকে হয়রানী করছে, তাদেরকে গ্রেফতার করছে। তিনি বলেন, ডাকাতি হলেও পুলিশ অনেক সময় চুরির মামলা নেয়। অপর এক পরিবহ নেতা বলেছেন, আমরা কেউ শ্রমিকের কল্যাণে কাজ করছি না। একারণেই এই পরিস্থিতি। বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ওসমান আলী বলেন, ধর্মঘট আরো চলবে।
আগামী সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গেও পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘটনায় উত্তরবঙ্গেও ধর্মঘট শুরু হবে। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। তিন দফার মধ্যে রয়েছে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের নিঃস্বর্ত জামিন, ফরিদপুরের এসপি এবং মধুখালী থানার ওসিকে প্রত্যাহার এবং এই ডাকাতির ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তপূর্বক আসল ঘটনা উদঘাটন ও দোষীদের গ্রেফতার করা। এদিকে, ফরিদপুরের এসপি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৬:৫৬ ৪৬৪ বার পঠিত