শনিবার, ২৩ মে ২০১৫
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ২৬ কিশোরী!
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ২৬ কিশোরী!বঙ্গনিউজ ডটকমঃ জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম কানিল। সেই গ্রামের ২৬ কিশোরী বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তাদের সবার বয়স ১০ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তারা গ্রামের হাসনা খানকে সঙ্গে নিয়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে দল বেঁধেছে। কানিল গ্রামের সেলিম খানের কিশোরী কন্যা আফরীন খানকে (১৭) দলপতি করে এরই মধ্যে দলে নাম লিখিয়েছে শারমীন, আঞ্জু, বিউটি, আসমা, নূরুন্নাহার, ইসমত আরা, শায়লা আক্তার, মুন্নী, নূপুর, দিয়া ইসলাম, ঈশিতা, লাকী, মণি, বিলকিস, আফরোজা, তানজিমা, ঝর্ণা, মনিরা, কল্পনা, সাথী, স্বপ্না, নীনা, প্রিয়া, কামরুন্নাহার ও জমিলা। দরিদ্র পরিবারের এই কিশোরীরা ঘোষণা দিয়েছে, নিজেরা বাল্যবিবাহ করবে না, আর গ্রামে অন্য কোনো কিশোরীর বাল্যবিবাহ হতে দেবে না। তারা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে, বাল্যবিবাহ মানেই তাদের দুঃসহ জীবন আর সুন্দর স্বপ্নের করুণ মৃত্যু।
প্রতিবাদী ওই ২৬ কিশোরীর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে জামালপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এরই মধ্যে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে হাসনা খানকে ‘গ্রাম্য দূত’ নিয়োগ করেছেন। একইভাবে জেলার অন্য ছয়টি উপজেলায়ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একটি করে আদর্শ গ্রামও গঠন করে দিয়েছেন তিনি। প্রত্যেক আদর্শ গ্রামেই কাজ করছে একজন করে দূত। হাসনা খানের মতোই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে তারাও সমাজে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এগিয়ে আসার জন্য পুলিশ সুপার জেলার প্রতিটি গ্রামে পাঁচজন করে বিশিষ্টজনকে চিঠি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, মোড়ল, নারীনেত্রী এবং উদ্যোগী মানুষ। চিকিত্সাবিজ্ঞানের উদ্ধৃতি দিয়ে বাল্যবিবাহের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে পুলিশ সুপার নজরুল ইসলামের লেখা মোট আট হাজার চিঠি পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কানিল গ্রামের ওই ২৬ কিশোরীর আহ্বান দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছে গোটা জেলার গ্রামবাসীকে। পুলিশ সুপার ও ওই কিশোরীদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম বিদ্যুত্ এরই মধ্যে মসজিদের ইমাম, স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে নিয়ে ‘সামাজিক সুরক্ষা কমিটি’ গঠন করেছেন।
জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা মহিলা বিষয়ক অফিসারসহ সাত শতাধিক শিক্ষক, দেড় হাজার শিক্ষার্থী এবং দুই হাজার কমিউনিটি পুলিশ সদস্যকে নিয়ে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। এ কাজে সার্বিক সহায়তা করছেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের জেন্ডার অফিসার আকলিমা জেসমিন। বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করার জন্য পুলিশ সুপার ও কানিল গ্রামের ওই ২৬ কিশোরীর প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। এরই মধ্যে এ উদ্যোগের সফলতা পেতে শুরু করেছে জেলাবাসী। গত কয়েক দিনে পুলিশ সুপারের মোবাইল ফোনে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে বহু তথ্য নানা স্থান থেকে আসতে শুরু করেছে। আর এ তথ্যের ভিত্তিতে গত এক সপ্তাহে সাতটি বাল্যবিবাহ পণ্ড করে দিতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১:০৬:১৬ ৫২২ বার পঠিত