বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০১৫
প্রথমবারের মতো দেশে শিশু বাজেট
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » প্রথমবারের মতো দেশে শিশু বাজেটবঙ্গনিউজ ডটকমঃ আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো দেশে শিশু বাজেট করবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে এটি হবে পরীক্ষামূলক শিশু বাজেট।
সচিবালয়ে গতকাল বুধবার শিশু অধিকারের ওপর সংসদীয় ককাসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান। সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, উম্মে রাজিয়া, সেভ দ্য চিলড্রেনের জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক চৌধুরী মোহাম্মদ তৈয়ব তাজাম্মুল প্রমুখ।
সভায় অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু। জনগোষ্ঠী ১৬ কোটি ধরলে সে হিসেবে শিশুর সংখ্যা হবে ৬ কোটি ৪০ লাখ।
বক্তাদের দাবি-শিশুদের জন্য বাজেট নিয়ে একটি মন্ত্রণালয় কাজ করলে বরাদ্দ ও তদারকি করতে সুবিধা হবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কী রকম আচরণ করতে হবে ও কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে, এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা।
বক্তারা আরও বলেন, যেহেতু শিশুদের উদ্দেশে বিনিয়োগ উচ্চ অর্থনৈতিক মুনাফা হিসেবে ফিরে আসে, সেহেতু শিশু বাজেট হচ্ছে অর্থনীতির ওপর ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের প্রভাব মূল্যায়নের একটি হাতিয়ার। একই সঙ্গে এটা সরকার শিশু অধিকার ও সুবিধা নিশ্চিত করতে নীতি-অঙ্গীকার পালনে কতটুকু কাজ করছে তা মূল্যায়নেরও উপায়।
বক্তারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে শিশুরা বাজেট আলোচনা করতে চায় বলে জানান। শুনে হাসলেও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মত দেননি।
চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘স্বতন্ত্র শিশু বাজেট প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে তা উপস্থাপনের আশা রাখি।’ শিশুদের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চলতি অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে অর্থমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘আমরা শিশু-কিশোরদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ বাড়াব।’
গতকালের সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, শিশু বাজেট মানে হচ্ছে শিশু অধিকারের বাজেট। বাজেট যেভাবে প্রণয়ন করা হয়, তা কতটা শিশুদের জন্য তা চিহ্নিত করা মুশকিল। এ ক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা হলো শিশুর সংজ্ঞা। আইনে আছে ১৮ বছরের নিচে যারা, তারা সবাই শিশু।
তবে অর্থমন্ত্রী ‘সত্যিকারের শিশু’ বলতে চান ১৮ বছরেরও অর্ধেক বয়সীদের। তিনি বলেন, ‘৯ বছর পর্যন্ত শিশুরা অন্যের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এরপর এদের কিছু বুদ্ধিসুদ্ধি হয় এবং নিজের মতো চলতে পারে। এরাই হলো সত্যিকারের শিশু।’
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শিশুদের জন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে নির্দিষ্ট করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘বরাদ্দই যথেষ্ট নয়, এ অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ হবে, তার তদারকিও থাকতে হবে।’
বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শিশুদের জন্য যে খরচ করা হচ্ছে, তারও মূল্যায়ন চান ফজলে রাব্বী মিয়া। শিশুদের জন্য বিনা মূল্যে যে বই দেওয়া হচ্ছে, তার তেমন প্রচারণা নেই বলে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
অর্থমন্ত্রী জানান, বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় শিশুদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তবে আগামীবার শিশুদের জন্য স্বতন্ত্র বাজেট হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়ার কৌশল অর্জন করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাবটি পছন্দ করেছেন বলে বৈঠকেই জানিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী।
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন শিশু বাজেটের রূপরেখার একটি খসড়া গতকালই অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছে। ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, বসনিয়া, হারজেগোবিনা, চীন, ইকুয়েডর, ঘানা, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশেই শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩০:৪১ ৩৩৩ বার পঠিত