শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

মিশরে বিচারের নামে প্রহসন

Home Page » বিশ্ব » মিশরে বিচারের নামে প্রহসন
শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৫



69.jpgবঙ্গনিউজ ডটকমঃ একনায়ক শাসিত দেশে বিচারের প্রহসন অভিনব নয়। মিশরের গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির কুড়ি বছর কারাদণ্ডের আদেশ এই প্রহসনের একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
মুসলিম ব্রাদারহুড দলের নেতা মুরসি ছিলেন মিশরের সমগ্র ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। কিন্তু যে গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়া এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নির্ঘণ্ট নির্ধারিত হয়, তাহা হোসনি মুবারকের কয়েক দশকব্যাপী সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধেই আলোড়িত হইয়াছিল।
মুবারক ক্ষমতাচ্যুত ও কারাবন্দি হইলেও তাহার অনুগত সামরিক বাহিনী দেশের নির্বাচিত রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের নিকটে আত্মসমর্পণ করে নাই। ওই বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল ফাতা আল-সিসি মুরসি-বিরোধী বিক্ষোভের সুযোগে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাদখল করেন এবং মুরসিসহ সমগ্র ব্রাদারহুড নেতৃত্বকে কারান্তরিন করেন। অতঃপর এই বিচারের প্রহসন ও তাহার দণ্ডাদেশ।
ইতিপূর্বে কয়েক হাজার ব্রাদারহুড সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে, কয়েক ডজন নেতাকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হইয়াছে। আল-সিসি স্পষ্টতই মুসলিম ব্রাদারহুডকে মিশর হইতে উচ্ছেদ করিতে বদ্ধপরিকর।
এ কথাও সত্য যে, সামরিক স্বৈরাচারের দীর্ঘ পর্ব জুড়িয়া মিশরে এই সংগঠনই বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজের মাধ্যমে সমাজের আপামর জনসাধারণের কাছের মানুষ হইয়া উঠিয়াছিল। আরব বসন্তের ধাক্কায় স্বৈরতন্ত্র-বিরোধী গণ-আন্দোলন যখন গণতান্ত্রিক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ রচনা করে, তখন এই ব্রাদারহুডই মিশরবাসীর প্রথম পছন্দের দল হইয়া ওঠে।
সামরিক বাহিনী, বিচারবিভাগ এবং সামরিক আমলাতন্ত্রের কায়েমি স্বার্থের সহিত নির্বাচিত ব্রাদারহুড নেতৃত্বের সংঘাত তাই স্বাভাবিক ছিল। ইহাও সত্য যে, প্রেসিডেন্ট মুরসি দ্রুত নিজের হাতে যাবতীয় সাংবিধানিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করিতেছিলেন, যাহার বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ ক্রমশ বাড়িতেছিল।
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদকে ঘিরিয়া মুরসির সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষে নিরাপত্তা রক্ষীরা মুরসির পক্ষেই হস্তক্ষেপ করে, কিছু বিক্ষোভকারী নিহতও হন। সেই ঘটনার পিছনে তাহার উস্কানির দায়েই আদালত তাহাকে কারাদণ্ড দিয়াছে।
কিন্তু বিচারের পদ্ধতি, অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া, ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’ রূপে শনাক্ত করা- এই সবই মিশরবাসীকে বিচলিত করিতেছে।
দেশের নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি নিন্দায় সরব। মুরসিকে গদিচ্যুত করার পর একটি নির্বাচনী প্রহসনের আয়োজন করিয়া ফিল্ড মার্শাল আল-সিসি ৯৬ শতাংশ ভোটে প্রেসিডেন্ট ‘নির্বাচিত’ হন।
ওই নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল না, তাহা মিশরবাসীমাত্রেই জানেন। গত জানুয়ারি হইতে আল-সিসির জঙ্গি শাহি ১২০০-র বেশি বিরোধীকে ‘প্রাণদণ্ড’ দিয়াছে।
এত কিছুর পরেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তিন সপ্তাহ আগেই বার্ষিক ১৩০ কোটি ডলারের স্থগিত সামরিক সাহায্য পুনরায় চালু করিয়াছেন। মার্কিন সমরাস্ত্রে বলীয়ান মিশর ইতিমধ্যেই লিবিয়া ও সিনাই উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করিয়াছে, ইয়েমেনে হুথি গেরিলাদের শায়েস্তা করিতে সৌদি বিমানহানায় শরিকও হইয়াছে।
গণতন্ত্রের প্রতি ওয়াশিংটনের অনুরাগে যে স্বার্থবুদ্ধির খাদ ভূরিপরিমাণে মিশিয়া থাকে, তাহা অবশ্য অজানা ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ১২:০৮:০৭   ৩১৪ বার পঠিত