বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০১৫
ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও সন্ত্রাস উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাধা প্রধানমন্ত্রীঃ আফ্রো-এশিয়ান-আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনে
Home Page » প্রথমপাতা » ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও সন্ত্রাস উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাধা প্রধানমন্ত্রীঃ আফ্রো-এশিয়ান-আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনেবঙ্গনিউজ ডটকমঃ ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও সন্ত্রাস উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাধা উল্লেখ করে এসবের মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া দক্ষিণ-দক্ষিণ দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও জোরদার করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এশিয়ান-আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
জাকার্তার বালাই সিদাং কনভেশন সেন্টারে এ সম্মেলনে ৩৪টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ১০৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
বক্তব্যে ২০১৫ সাল পরবর্তী উন্নয়ন সূচিতে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমত, ক্ষুধা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে; দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থার মোকাবেলা করতে হবে; এবং তৃতীয়ত, ঘনিষ্ঠ ও টেকসই সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
এসব লক্ষ্য পূরণে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে আফ্রো-এশীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ বিশ্ব গড়ে তুলতে এবং সার্বিকভাবে বিশ্বে সম্মিলিত ও দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ গতিশীল সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি।”
তিনি বলেন, ‘এশিয়া-আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের পথ যারা প্রশস্ত করে দিয়ে গেছেন এ সম্মেলনের ৬০তম বার্ষিকীতে সেই বিচক্ষণ নেতাদের স্মরণ করছি আমি। তারাই বিশ্বকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনের সুতোয় গেঁথে গেছেন। তারা লড়াই করে গেছেন উপনিবেশবাদ, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা সবসময়ই একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে কোনো যুদ্ধ, সংঘাত ও ধ্বংস থাকবে না। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের জন্য লড়েছিলেন। একইসঙ্গে মানবতার কল্যাণ ও শান্তির জন্য বিশ্বের সবগুলো রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় উৎসাহী ছিলেন। এই প্রত্যয়ে থেকেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন সত্ত্বেও এখনও বিশ্বের ২.২ বিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। ৮০০ মিলিয়নেরও মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধায় ভুগছে এবং ২০০ মিলিয়নেরও মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দয় শিকার হচ্ছে। তাই গণবান্ধব, দরিদ্রবান্ধব ও বিশ্ববান্ধব কৌশলে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ জয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় অর্থনীতির দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।’
দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও ধরিত্রী রক্ষায় ‘সাউথ-সাউথ’ সহযোগিতার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথাও তুলে ধরেন তিনি।
২০১৫ সাল উত্তর উন্নয়ন সূচি নির্ধারণে আগামী মাসে ঢাকায় ‘সাউথ সাউথ অ্যান্ড ট্রাইঙ্গুলার কোঅপারেশন ইন দ্য কনটেক্সট অফ দ্য পোস্ট-২০১৫ ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের কথা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিষয়টি ‘কোনো দেশের একার কাজ নয়’ মন্তব্য করে এক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতে, বিশেষত দক্ষিণের দেশগুলোর সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের মোট জিডিপির অর্ধেক আসে দক্ষিণের দেশগুলো থেকে। বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের অর্ধেক আসে এসব দেশ থেকে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেক হয় এ অংশ থেকে।’
‘তাই টেকসই উন্নয়ন এবং দক্ষিণের দেশগুলোর বিপদ সামাল দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের জন্য সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন জরুরি।’
উন্নয়নে গতি, শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন, সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থা দমন, মানবপাচার রোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বের দক্ষিণভাগের দেশগুলোর পারস্পারিক সহযোগিতা ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও মেয়াদ পূর্তির আগেই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য, ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন তিনি।
“ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি) আমাদের অর্থনীতি ও সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমরা আমাদের ক্রমবর্ধমান তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে আরও বেশি বিনিয়োগ করছি,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অভিবাসনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রসঙ্গ টেনে এক্ষেত্রে সাউথ-সাউথ সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী করা, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও নারী ক্ষমতায়ন এবং অপরাধীর ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’ বন্ধের জন্য তার সরকার কাজ করছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
এশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলনের প্রথম সমাবেশ ১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়াতেই হয়েছিল ‘বান্দুং সম্মেলন’ নামে। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি সুকর্নর উদ্যোগে সেই সম্মেলনের প্রভাবে দুই বৃহৎ বিশ্ব জোটের বাইরে পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছিল জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)।
৬০ বছর পূর্তিতে ইন্দোনেশিয়াই এবারের সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসেবে রয়েছে।
১৯ থেকে ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আশিয়ান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, আফ্রিকান ইউনিয়ন, আরব লীগ ও সাউথ সেন্টারসহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হোটেল থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে বালাই সিদাং জাকার্তা সম্মেলন কেন্দ্রে নিয়ে নিয়ে আসা হয়।
সম্মেলন কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান। এরপর বিভিন্ন দেশের নেতাদের ছবি তোলার পর্ব শেষে অন্যদের সঙ্গে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার পর প্রথম পর্বে চীনসহ কয়েকটি দেশের নেতারা ভাষণ দেন। মধ্যাহ্নবিরতির পর দ্বিতীয় সেশন শুরুর পরপরই বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৩:২৫ ৩০৫ বার পঠিত