বুধবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৫

তারেক রহমানকে ‘ওয়ান্টেড’ ঘোষণা করল ইন্টারপোল

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » তারেক রহমানকে ‘ওয়ান্টেড’ ঘোষণা করল ইন্টারপোল
বুধবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৫



tarique-red-notice-ed.jpgবঙ্গনিউজ ডটকমঃ একুশ অগাস্ট গ্রেনেড মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে ‘ওয়ান্টেড’ ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন- ইন্টারপোল ।
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক গত ছয় বছর ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বৈধতা হারানোয় তিনি এখন শরণার্থী হিসেবে দেশটিতে অবস্থান করছেন বলে ঢাকা ও লন্ডনের বিভিন্ন সূত্রের খবর।

ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য খুঁজছে।

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) দায়িত্বে থাকা সহকারী মহা পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় চার মাস আগে তারেকের বিষয়ে জানিয়ে ইন্টারপোলকে নোটিস জারির অনুরোধ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী তারা নোটিস জারি করেছে।”

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি তারেক।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাই যে ওই হামলার লক্ষ্য ছিল- তা পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।ওই মামলার ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৯ জনই পলাতক। এছাড়া জরুরি অবস্থার সময় দায়ের হওয়া দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অন্তত ১২টি মামলায় তারেক আসামি।সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির কয়েক ডজন মামলাতেও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আইনের দৃষ্টিতে ‘পলাতক’ থাকায় বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে তারেকের কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি প্রচার বা প্রকাশের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।ইন্টারপোল কবে তারেকের নাম তাদের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় তুলেছে ওয়েবসাইটে তার উল্লেখ নেই। তবে এ তালিকায় থাকা ৬৭ জন বাংলাদেশির মধ্যে তার নামই সবার শেষে রয়েছে।

এর আগে পলাতক যুদ্ধাপরাধী আবদুল জব্বারের নামেও ‘রেড নোটিস’ জারি করেছে ইন্টারপোল।নোটিসে তারেকের উচ্চতা, চুল ও চোখের রঙের সঙ্গে জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৬৭ সালের ২০ নভেম্বর। তিনি বাংলা ও ইংরেজির সঙ্গে উর্দু ভাষাও জানেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইন্টারপোলের আট ধরনের নোটিসের মধ্যে রেড নোটিস জারির অর্থ হলো ওই ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও বিচার বিভাগ বিচারের মুখোমুখি করতে অথবা দণ্ড কার্যকর করার জন্য খুঁজছে।সদস্য দেশগুলো ইন্টারপোলের মাধ্যমে পলাতক আসামির সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করতে পারে। তারেক যেহেতু যুক্তরাজ্যে আছেন, সেহেতু বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এবং ব্রিটিশ সরকার তা খতিয়ে দেখে সন্তুষ্ট হলে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।

অবশ্য সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকারেই তার বিচার শুরু করবে। আর তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হলে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রয়োজন হবে।সহকারী মহা পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান ভূইয়া বলেন, “যুক্তরাজ্য সরকার তাকে গ্রেপ্তার করলে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নির্ভর করবে দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগের ওপর। সেটি ইন্টারপোলের বিষয় নয়।”

২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার কথা বলে লন্ডন পাড়ি দিলেও সেখানে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করে আসছিলেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার।

এর অংশ হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সর্বশেষ অবস্থান জানাতে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনেও চিঠি দেওয়া হয়।১৯৫৮ সালে গৃহীত শরণার্থী সনদের ওপর ভিত্তি করে তারেকের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কথাও যুক্তরাজ্যের কাছে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ সরকার। ওই সনদ অনুযায়ী শরণার্থী যে দেশে থাকে সেখানে কোনো রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশ নিতে পারে না।

ঢাকা ও লন্ডনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, তারেক ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে যাওয়ার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে তার পাসপোর্ট সর্বশেষ নবায়ন করেন। তার মেয়াদ ২০১৩ সালে শেষ হয়েছে।এরপর তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করতে কখনোই লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেননি। তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্টও পাননি বলে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।ধারণা করা হচ্ছে, গত ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর এ কারণেই তারেক কুয়ালালামপুরে যেতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৪০:৫৪   ৩৭০ বার পঠিত