বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৫
দুই হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি, বিপাকে ব্যবসায়ীরাঃ
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » দুই হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি, বিপাকে ব্যবসায়ীরাঃবঙ্গনিউজ ডটকমঃ প্রায় দুই হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত তিন মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিক্রি না হওয়ায় গাড়িগুলোর মেয়াদ ইতিমধ্যে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে।
আমদানি নীতি অনুসারে এই গাড়িগুলোতে ব্যাংকঋণ মিলবে না। ফলে গাড়িগুলো নগদ টাকায় বিক্রি ছাড়া অন্য সুযোগ নেই।
কিন্তু বাজারে নগদ টাকায় এতগুলো গাড়ি বিক্রি প্রায় অসম্ভব। এই অবস্থায় গাড়িগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেশ বিপাকেই রয়েছেন।
গাড়ি ব্যবসায়ীদের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচ বছরের বেশি পুরনো গাড়িতে ব্যাংকঋণের সুবিধা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করলেই গাড়িগুলো বিক্রির পথ সুগম হয়।
গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সেক্রেটারি জেনারেল মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর বলেন, ‘আমদানি নীতি মেনে গাড়িগুলো আমদানি করলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেগুলো বিক্রি হয়নি। গত তিন মাসে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কারণে সাড়ে ৩০০ শোরুমে গাড়ি বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আর এই সময়েই গাড়িগুলো পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়। সর্বনাশা রাজনীতির চক্রে পড়ে আমরা বিপুল আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছি, অথচ এর জন্য আমরা কোনোভাবেই দায়ী নই।’
বারভিডা সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের অক্টোবরে দেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে ৮১৪ ইউনিট, নভেম্বরে ১৪১২ ইউনিট এবং ডিসেম্বরে ১৪৭২ ইউনিট। এই তিন মাসে মোট ৩৭০০ ইউনিট গাড়ির মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ১৮৫০ ইউনিট গাড়ি ২০০৯ মডেলের।
চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর এবং গাড়ির শোরুমগুলোতে এসব গাড়ি অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব গাড়ির বেশির ভাগই হচ্ছে ২০০৯ মডেলের সেডান কার। বাকিগুলো হাইয়েস মাইক্রোবাস, পিকআপ ও ছোট ট্রাক।
আমদানি নীতি অনুযায়ী, দেশে পাঁচ বছর পর্যন্ত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির সুযোগ রয়েছে। এগুলোতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট গাড়ির দামের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। পাঁচ বছরের অধিক পুরনো হলে সেগুলোতে ব্যাংকঋণের সুবিধা পাওয়া যায় না। আমদানি নীতির এই ফাঁদে পড়েছে ওই সাড়ে ১৮শ’ ইউনিট গাড়ি।
জাপানের বিখ্যাত গাড়ি রপ্তানিকারক এসিটি কোম্পানির অন্যতম এজেন্ট ও ম্যাক্সিম কার সেন্টারের কর্ণধার সুজাউদ্দিন মামুন বলেন, ‘গাড়ি কিনতে অবচয় (ডেপ্রিসিয়েশন) সুবিধা ও শুল্কহার কম থাকায় পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ির দাম তুলনামূলক কম থাকে। এই কারণে ক্রেতারা ২০০৯ সালের (ছয় বছরের পুরনো) বদলে ২০১০ মডেলের (পাঁচ বছরের পুরনো) গাড়িই কিনতে চাইবেন। কারণ ২০১০ মডেলের গাড়িতে ব্যাংকঋণ সুবিধা মিলবে।
এই অবস্থায় ২০০৯ মডেলের গাড়িগুলো নগদ টাকায় বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
জানা গেছে, বিগত ২০১৪ সালের আগস্টে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের কঠিন শর্ত শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন শর্ত মতে একজন গ্রাহক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মোট দামের ৫০ শতাংশ ব্যাংকঋণ পাবেন, এর আগে এই ঋণের হার ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ।
গত ১৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়। নতুন নির্দেশনায় ক্রেতাদের সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকার গাড়ি কেনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এরপর থেকে দেশের ঝিমিয়ে পড়া গাড়ির বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেই ব্যবসায় ধস নামে।
স্টার অটোমোবাইলসের কর্ণধার মাহবুবুল হক চৌধুরী বলেন, এই গাড়িগুলো বিক্রিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া অসম্ভব। একটি সার্কুলার দিয়ে ব্যাংকঋণ দেওয়া নিশ্চিত করলেই সব জটিলতার নিরসন হয়। এতে ব্যবসায়ীরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির বোঝা থেকে বাঁচবেন। সরকারও যথাসময়ে রাজস্ব পাবেন।
শুল্ক আইনের ৮২ ধারামতে, আমদানি পণ্য বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে খালাস করে নিয়ে যেতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ১৫ দিন সময় দিয়ে নোটিশ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পরও খালাস না হলে সেগুলো তালিকাভুক্ত করে নিলামে তুলে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যে প্রচুর গাড়ি নিলামে তুলেছে কাস্টমস। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একদিকে নিলামের ঝুঁকি রয়েছে, অন্যদিকে নগদ টাকায় ওই গাড়ি যথাসময়ে বিক্রি করতে না পেরে বন্দরে পড়ে থাকার মাশুল গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কাস্টমসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার এস এম শামীমুল আহসান বলেন, ‘নিয়ম-নীতি মেনেই আমরা গাড়িসহ অন্যান্য পণ্য নিলামে তুলছি। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমাদের করণীয় কিছু নেই।’
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৪:২৫ ৩২৯ বার পঠিত