বুধবার, ৮ এপ্রিল ২০১৫
প্রতীক ছাড়া প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » প্রতীক ছাড়া প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকনবঙ্গ নিউজ ডটকমঃ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতীক ছাড়া প্রচারের প্রথম দিনেই মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন।
বিএনপির কাউকে প্রচারে দেখা না গেলেও দলটির নেতা ও মেয়রপ্রার্থী আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, দল থেকে সমর্থন পাওয়া মির্জা আব্বাস প্রকাশ্যে এলে ৯ এপ্রিলের পর মাঠে নামবেন তারা।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে অপ্রকাশ্যে থাকা মির্জা আব্বাসের প্রচারে সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার আফরোজা আব্বাস স্বামীর হয়ে প্রচারে নামবেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী প্রবেশমুখে পথসভা করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন সাঈদ খোকন।
সেখানে সমবেতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ঢাকা সিটি করপোরেশন একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটা মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন যাবৎ এই সেবা ঝিমিয়ে পড়েছে। এ কারণে মানুষকে নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে।
“আমি যদি আপনাদের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হতে পারি তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে আবার সেবা সংস্থা হিসাবে গড়ে তুলব।”
ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের কথা স্মরণ করে তার ছেলে খোকন বলেন, “আমার বাবা মানুষের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। আমিও মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করব।”
হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করার কারণও ব্যাখ্যা করেন সাইদ খোকন।
তিনি বলেন, “এই ফ্লাইওভার জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সাক্ষী হয়ে আছে, সঙ্গে আমার বাবার আত্মত্যাগেরও সাক্ষী হয়ে আছে।
“এখান থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে আমি বলতে চাই- ঢাকাবাসী আসুন, উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত হোন। আমি আমার পিতার আদর্শের অনুসারী হিসাবে ঢাকার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে চাই।
“আপনারা এখানে যারা আছেন, তারা ঢাকাবাসীর কাছে আমার জন্য ভোট চাইবেন।”
মেয়র নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনে নাগরিক সেবা পেতে বিড়ম্বনার অবসান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “এই যেমন আমরা বিভিন্ন সনদ আনতে সিটি করপোরেশনে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়ি। আমি মেয়র হলে এসব থাকবে না।
টোল কাউন্টারের পাশে সাঈদ খোকনের প্রচারণা শুরুর এই আনুষ্ঠানিকতার সময় ফ্লাইওভার থেকে গাড়ি বেরোনো কিছুক্ষণের জন্য আটকে যায়। পরে ফ্লাইওভারের বাইরের ফটকের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন সাঈদ খোকন ও তার সঙ্গীরা। সেখানেও কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি আটকে যায়।
পরে ফ্লাইওভারের পশ্চিমপাশে চাঁনখারপুলে এসে প্রচারণা চালান খোকন। বিকালে গুলিস্তানের ২৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির চার নেতা ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে প্রার্থিতায় রয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। নাশকতার মামলার আসামি আব্বাসকে এখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের পাশাপাশি বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনও প্রার্থী হয়েছেন। কাজী আবুল বাশার নামে এক প্রার্থীও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এই প্রার্থীদের কাউকেই এদিন নির্বাচনী প্রচারে দেখা যায়নি।
কেন প্রচারণায় নামেননি জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পার্টির তরফ থেকে অন্য একজন প্রার্থীর সম্ভাব্যতার কথা বলা হয়েছে। আজ আমি প্রার্থী হিসাবে থাকলেও জনগণের কাছে ভুল ম্যাসেজ দেওয়া এড়াতে আমি নামছি না। আমরা একটি ইউনিফর্ম মেসেজ দিতে চাই।
“আমি কেন প্রচারণা চালাব- কারণ আমি একটি ইঙ্গিত পেয়েছি। আমাদের তিনজন কোনো না কোনোভাবে নামতেন, তাহলে কী বার্তা যেত?”
“আমি তো ব্যক্তিগতভাবে বাজারঘাটও করতে যাচ্ছি না। বাজারে গেলে কেউ হয়তো সালাম দিবে; দোকানদার বলবে, ভাই আপনি দাঁড়াইছেন খুশি হয়েছি। ৯ তারিখের আগে বাজারেও যাব না।”
তিনি বলেন, “মির্জা আব্বাস ভাইয়ের কথা বলা হচ্ছে। তিনি আমার সিনিয়র, স্থায়ী কমিটির সদস্য। শত নাগরিক কমিটির পক্ষে তাকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে দলের একটি অনুমোদন আছে বলে আমি মনে করি।
“যাই হোক মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন পার হয়ে যায়নি। প্রত্যাহারের সময়সীমার মধ্যেই অনুমোদিত প্রার্থীর পক্ষে দলের সবাই পুরো শক্তি নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
“আমাদের এখানে যারা মনোনয়নপত্র নিয়েছেন, জমা দিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই দলের দায়িত্বশীল নেতা। সুতরাং দলের শৃঙ্খলা সবাই রক্ষা করবেন।”
প্রচারণায় না নেমে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা কোন কৌশলে এগোচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে কী কৌশল নেওয়া হয়েছে, সেটা এমাজউদ্দিন সাহেব বলতে পারবেন। কারণ প্রার্থী উনি ঘোষণা করেছেন।”
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনী প্রচারণার প্রতি মুহূর্ত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে কাজটা শুধু পোস্টার-হ্যান্ডবিলে সীমাবদ্ধ নয়।
“নির্বাচনী চিন্তা-ভাবনার অংশীদারদের মধ্যে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক নিশ্চয়ই হচ্ছে।
“উনি (আব্বাস) নিশ্চয়ই দৃশ্যমাণ হবেন তাড়াতাড়ি। কৌশল নিশ্চয়ই আছে। নির্বাচন কিভাবে করবেন, সেই ছক নিশ্চয়ই তৈরি করবেন, গ্রাউন্ড ওয়ার্ক হচ্ছে। ৯ তারিখের পর থেকে হয়তো প্রকাশ্য ভোট চাওয়ার ব্যাপারটা শুরু হবে।”
রাতে মির্জা আব্বাসের প্রচার সেল থেকে জানানো হয়, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় খিলগাঁও থানার শান্তিপুর স্কুলের সামনে থেকে এই গণসংযোগ শুরু করবেন আফরোজা আব্বাস।
স্বামীর পক্ষে বাসাবো-মাদারটেক, বৌদ্ধমন্দির এলাকা, বাসাবো এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শাহবাগ এলাকায় গণসংযোগ করবেন আফরোজা।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাইফুদ্দিন মিলন। বুধবার থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কারাবন্দি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও তা বাতিল হয়ে যায়।
ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন। তিনি এখন আর এ দলটিতে নেই।
বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজও ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী। সিপিবিও তাকে সমর্খন দিয়েছে।
মেয়র পদে এই সিটি কর্পোরেশনের ২৬ জন প্রার্থীর অন্যরা হলেন- আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ, মো. আব্দুল খালেক, মো. জাহিদুর রহমান, আবু নাছের মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, মো. বাহারানে সুলতান বাহার, এএসএম আকরাম, শাহীন খান, দিলীপ ভদ্র, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. বাবুল সরদার চাখারী, মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী, আবদুর রহমান, মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, মশিউর রহমান, মো. ইমতিয়াজ আলম, মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও মোহাম্মদ আয়ুব হুসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৩:৪৩ ৩৩৮ বার পঠিত