শুক্রবার, ৩ এপ্রিল ২০১৫
ইয়েমেনে সৌদির ‘প্রেস্টিজ’ হুমকির মুখে
Home Page » বিশ্ব » ইয়েমেনে সৌদির ‘প্রেস্টিজ’ হুমকির মুখেবঙ্গনিউজ ডটকম: সিংহাসনে আরোহণের মাত্র দু’মাস হল। এর মধ্যেই নিজ দেশের মর্যাদাকে বাজির মুখে ফেললেন সৌদি বাদশাহ সালমান। সীমান্তবর্তী ইয়েমেনে শিয়া-শাসিত ইরানের মাতব্বরির জবাব দিতে অন্য আরব মিত্রদের নিয়ে সামরিক অভিযান চালালেন তিনি। আর এর সব কিছুই হচ্ছে সালমানের ছেলে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স মোহাম্মদ ইবনে সালমানের সার্বিক নির্দেশনায়। প্রিন্স মোহাম্মদ সৌদি রাজকীয় আদালতেরও প্রধান।
তবে অভিযান শুরুর এক সপ্তাহ টের পাওয়া যাচ্ছে আসলে এর মাধ্যমে নতুন বাদশাহ কতটা ঝুঁকি নিয়েছেন।
সৌদি আরবসহ আরো কিছু দেশ সব সময়ই অভিযোগ করে এসেছে যে, ইয়েমেনে মূলত ইরানই প্রক্সি যুদ্ধ করছে। অর্থাৎ, হুথিদের ব্যবহার করে ইরান লাভবান হতে চায়। এই শিয়া যোদ্ধাগোষ্ঠি গত নয়দিনের সৌদি বিমান হামলার পরও সামনে অগ্রসর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার অ্যাডেন শহরের দক্ষিণাঞ্চালে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের একটি বাসভবন দখলে নিয়েছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় একটি যুদ্ধে এক সৌদি সৈন্যকে হত্যা এবং আরো ৫জনকে আহত করেছে।
আর এই বিশৃংখল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চরমপন্থি সুন্নী জঙ্গিরা শক্তি জোগাড় করছে। শুক্রবার তারা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের একটি সরকারি জেল ভেঙ্গে আল কায়েদার এক আঞ্চলিক নেতাসহ তিনশতাধিক বন্দীকে মুক্ত করে নিয়ে গেছে। একই সাথে বর্তমানে তারা দক্ষিণের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
অন্যদিকে, হুথিদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত এবং বর্তমানে রিয়াদে আশ্রয় নেয়া প্রেসিডেন্ট আবদু রাব্বু মনসুর হাদির ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে আঞ্চলিক বিভিন্ন গেরিলা গ্রুপ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। গত এক সপ্তাহের অ্যাডেনের রাস্তাঘাটে লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরোটাই ভেঙ্গে পড়েছে। ত্রাণকর্মীরা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, বিমান ও সমুদ্রবন্দরগুলো বন্ধ থাকায় খাদ্য, পানীয় এবং ঔষধের অভাবে শিগগিরই মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন বহু সাধারণ মানুষ ও উদ্ধাস্তু লোকজন মারা যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে বিবেচনা করলে, অভিযানে দেশটি সৌদি আরবকে সরঞ্জাম এবং গোয়েন্দা সহায়তা করছে। অথচ, এই যুদ্ধের ফলে মার্কিনিদের অন্যতম শত্রু আল-কায়েদা ইয়েমেনে শক্তিশালী হচ্ছে। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে অন্যতম মার্কিন মিত্র সৌদি আরবও অস্থিতিশীল হওয়ার আশংকায় আছে। এবং যত সময় যাচ্ছে হুথিরা ইরানের ওপর আরো নির্ভরশীল হচ্ছে।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির নিয়ার ইস্টার্ন স্টাডিজের অধ্যাপক বার্নার্ড হাইকেল বলছেন, আমার মনে হয় না অভিযানকারীরা ইয়েমেনের সমস্যা কিভাবে সমাধান করবেন অথবা কিভাবে ব্যাপারটা সামলাবেন তা ভালভাবে চিন্তা করেননি। আমি বুঝতে পারছি না সৌদিরা কিভাবে সেখানকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে নিজেদেরকে নিরাপদে বের করে আনতে পারবে।
কিছু লোক যারা হুথিদের বিরোধী তারাও বরং এখন সৌদি আরবের বিমান হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ।
রাজধানী সানায় বসবাসকারী মোহাম্মদ সালেহ আল হুমিদি নামের এক হুথি বিরোধী বলেন, সৌদি আরব যা করছে তা আসলে কোনো শত্রুও করতে পারে না। তিনি বলেন, তাদের উচিত পার্শ্ববর্তী একটা মুসলিম দেশকে তাদের মতো করে ছেড়ে দেয়া উচিত।
পুরো ব্যাপারটা প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য বিরাট আকারে ঝুঁকি হয়ে দাড়িয়েছে। প্রিন্স মোহাম্মদের বয়স আসলে কত তা কখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিরিশের আশপাশে হবে বলে ধারণা করা হয়। তিনি রাজপরিবারের একমাত্র ব্যক্তি যিনি পুরোপুরি সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। দেশের বাইরের কোনো পড়াশোনা তার নেই। ইয়েমেনে অভিযান সম্পূর্ণ তার নির্দেশনায় হচ্ছে বলে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে।
অধ্যাপক হাইকেল বলেন, প্রিন্স অভিযানে সফল হতে পারলে নায়ক হয়ে যাবেন। তবে হতাহতদের নিয়ে ফেরত এলে সেটা হতে পারবেন না তিনি।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকসের মিডল-ইস্ট সেন্টারের অধ্যাপক মাদাওয়ী আল রশিদ মনে করেন, বাদশাহ আর ছেলে আরব উপদ্বীপে তাদের দেশের খবরদারি জোরদার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আসলে কোনো বিকল্প না থাকায় সৌদি আরবকে এই যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সৌদি আরব আমাদের দীর্ঘদিনের মিত্র’- এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যদি আপনি প্রশ্ন করেন যে কেন আমরা এই অভিযানে সমর্থন দিচ্ছি তাহলে সঠিক উত্তর হবে- ‘আমরা আসলে এটি থামাতে সক্ষম ছিলাম না।’ তবে তিনি নিশ্চিত করে জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনাবাহিনীকে সেখানে (ইয়েমেনে) পাঠাবে না।
অবশ্য সৌদি রাজপরিবারে ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষকদের মতে, আরব উপদ্বীপে ইরানের অব্যাহত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ করতে এই অভিযান দরকারি ছিল। সিরিয়া এবং ইরাকের ঘটনায় সৌদি আরবে এই ধারণা পোক্ত হচ্ছে যে, দেশটির তার প্রধান প্রতিপক্ষ ইরানকে সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
গালফ রিসার্চ সেন্টারের স্কলার মুস্তাফা আলানি বলেন, এটা ঠিক যে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে। এটা ভাল কোন অভিজ্ঞতা হবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু না করে বসে থাকায় যে ঝুঁকি ছিল তা অভিযানের ঝুঁকির চেয়ে অনেক ভয়াবহ।
তবে প্রেসিডেন্ট হাদির ক্যারিশমাটিক ক্ষমতা না থাকার কারণে তাকে ক্ষমতায় পূণর্বহালের সৌদি চেষ্টা সফল হওয়া নিয়ে সন্দেহ আছে আলানির।
আর আল মুকল্লাতে সৌদির আরেক প্রতিপক্ষ আল-কায়েদার জেল-অপারেশন সুন্নীপন্থি জঙ্গিদের উত্থানের যে ইঙ্গিত দিয়েছে তাও মোটেই সুখকর নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২০:০২ ৪৩৫ বার পঠিত