বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল ২০১৫
সাত খুন: তদন্ত প্রতিবেদন ‘যে কোনো সময়’
Home Page » প্রথমপাতা » সাত খুন: তদন্ত প্রতিবেদন ‘যে কোনো সময়’বঙ্গনিউজ ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন অবশেষে ‘চূড়ান্ত’ করেছে হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত সরকারের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি।
যে কোনো সময় হাই কোর্টে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছি। যেহেতু ওটা কোর্টে জমা দেব তাই এটিকে নির্ভুল করা হচ্ছে। প্রতিবেদনটিকে নিখুঁত করতে আর একবার ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড দেখা হচ্ছে।”
আদালতের নির্দেশে এই কমিটি হওয়ার ১১ মাস পর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করলেন এর সদস্যরা। কমিটির মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে ছিল।
তদন্ত কমিটি চার শতাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নিয়েছে জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, কোনো কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য একাধিকবারও নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনের আকার ‘বেশ বড় হয়েছে’ বলে জানালেও চাঞ্চল্যকর ওই খুনের ঘটনায় কাকে কাকে দায়ী করা হয়েছে বা প্রতিবেদনে কী সুপারিশ থাকছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি সদস্য সচিব।
“তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা সব বিষয়ই রাখার চেষ্টা করেছি। সাক্ষীরা যেসব তথ্য দিয়েছেন তাও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বেশ বড় প্রতিবেদন হয়েছে।”
প্রতিবেদন আদালতে জমা হওয়ার পর সাংবাদিকরা বিস্তারিত জানতে পারবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত বছরের ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন।
এরপর র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত বছরের ৭ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লাকে (বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের-পিএসসি সচিব) প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করে সরকার।
এই কমিটি নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তৎকালীন র্যাব মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন এসপি-ডিসিসহ চার শতাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নিয়েছে।
কমিটির প্রধান হিসাবে শুরু থেকে দায়িত্ব চালিয়ে আসা শাহজাহান আলী মোল্লাকে গত ৯ নভেম্বর পিএসসির সচিব করা হলে তদন্তে ভাটা পড়ে। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল হাকিমকে কমিটি প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর হাই কোর্ট শাহজাহান আলী মোল্লাকেই কমিটির প্রধান হিসাবে বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। ওই সময় নতুন করে দায়িত্ব নিয়ে শাহজাহান বলেছিলেন, “শিগগিরই’ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন বলে আসছিলেন, সদস্যদের মধ্যে ‘সমন্বয়হীনতার জন্য’ চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরিতে দেরি হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কমিটির সব সদস্য একসঙ্গে বসেই তা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও হত্যার ওই ঘটনায় প্রশাসনের কেউ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করতে বলা হয় কমিটিকে।
অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলে আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫৯:৫৭ ৩৪২ বার পঠিত