বুধবার, ২৫ মার্চ ২০১৫
হরতাল হচ্ছে হরতাল হচ্ছে না।
Home Page » ফিচার » হরতাল হচ্ছে হরতাল হচ্ছে না।ছোট বেলা থেকে আমরা হা এবং নার সাথে অতপত ভাবে জড়িত। আমাদের জীবনে অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান আমরা হা এবং নার মাধ্যমে করেছি। কিন্তু আজকাল আমাদের দেশের রাজনীতি যেন আটকে গেছে এই হা এবং নার মধ্যে। আমদের দেশের প্রধান দুই দল বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যাকে আমরা বি এন পি বলে সম্বোধন করে থাকি । দুই দলের মধ্যে যোজন বিয়োজন পাথক্য হলেও, একটা জায়গায় প্রচণ্ড রকমের মিল খুজে পাই আমরা, আর তা হলো তাদের বিপরীত মুখি অবস্থান। আওয়ামিলীগ কোন বিষয়ে হা বললে বি এন পি সে বিষয়ে না বলবে এবং আওয়ামিলীগ কোন বিষয়ে না বললে বি এন পি সে বিষয়ে হা বলবে । তারা যেন উপর থেকে পণ করে এসেছে আমরা কখনও, কোন বিষয়ে এক মত হব না, তাতে এই
দেশের জনগণ দাবদাহ পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মরুক বা ককটেল বিস্ফোরণ মরুক না কেন।
বেশ কিছুদিন আগে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্তী সংসদে বলেছেন, বি এন পি এবং জামায়াত হরতাল এবং অবরোধ কারনে আমাদের দেশের মোট ক্ষতির পরিমাণ ১. 20 লাখ কোটি টাকা । টাকার অংকটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হতে পারে কিন্তু আমি সে দিকে যেতে চাই না। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্তী বলেছেন আমি এই টাকার অংকটা সত্যি বলে ধরে নিলাম।
যেহেতু সরকারি দলের মাননীয় প্রধানমন্তীর উল্লেখিত কিছু কথা বলেছি তাহলে সংসদের বাহিরের বিরোধী দলের কিছু না কিছু কথাতো বলতেই হয়। একটু লক্ষ্য করুন হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ১৬ টি মামলা হয়েছে এবং সেই সাথে তাকে হুকুমের আসামি করে গ্রেপ্তার করা্র প্রবণতা লক্ষ্য করছি। এছাড়া মির্জা ফকরুলের বিরুদ্ধে ৭৬ টি, মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ১২০ টি (তিনি মোটা্মুটি এই দৌড়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন), এসানুল হক মিলন ৯১ টি এবং মওদুদ আহমেদ ২৪ টি সহ আরও অনেক নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ।
আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ৭১ লাখ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। এর মধ্যে আছে শ্রমজীবি, পেশাজীবি সহ আরও অনেক লোক। প্রথমে আমরা শ্রমজীবি মানুষের কথা বলব, তারপর কথা হবে পেশাজীবিদের নিয়ে। আমদের দেশে শ্রমজীবি লোকের সংখ্যা প্রায় এক থেকে দেড় কোটি এর মধ্যে আছে ৪০-৫০ লাখ নির্মাণ শ্রমিক, ৪০-৫০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক এবং বাকি ২০-৩০ লাখ অন্যান্য শ্র্ম বিক্রি করে তাদের সাদামাটা জীবন যাপন করে থাকে। তারা দু বেলা দু মুঠো খেয়ে পরে জীবন যাপন করতে পারলে তাদের জীবন ধন্য বলে তারা মনে করে। আমাদের দেশের শ্রমজীবি কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজি উৎপাদন
করে থাকে আর হরতালের মত কঠোর কর্মসূচির জন্য তাদের হার ভাঙ্গা পরিশ্রমের দাম যদি ঠিক মত না পায় তাহলে দেশের অর্থনীতিক অবস্থা এমনিতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত্যে চলে যাবে। এখানে ঢাকা এবং ঢাকার বাহিরের চিত্র তুলে ধরা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। সিরাজগঞ্জের মিল্ক ভিতায় ১ কেজি দুধের দাম ২৫/২৬ টাকা। সবাই একটু থমকে যাবেন, যখন ১ লিটার মিনারেল ওয়াটের সাথে ১ কেজি দুধের তুলনা করব। কারন বাজারে ১ লিটার মিনারেল ওয়াটার যে ২০ টাকায় কিনতে হয়। একই অবস্থা অন্যান্য সবজির বেলায়। উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় খবর নিয়ে আমরা জানতে পারি, ১ কেজি মুলার দাম ১ তাকা, ১ কেজি টমাটোর দাম ২/৩ টাকা এবং রাজশাহিতে কথা বলে আমরা জানতে পারি যে, হরতালের কারনে টমাটো চাষিদের এবার প্রায় ৮০-১০০ কোটি টাকার লোকসান গুণতে হবে। অন্যান্য সবজির বেলায় চাষিদের প্র্তিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। হরতালের কারনে ঢাকা শহরের সবজি বাজারের চিত্র একেবারে বিপরীত। এখানে কেতাদেরকে ৬,৭ বা ৮ গুন বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হচ্ছে। একই অবস্থা নির্মাণ শ্রমিক ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের। তারা যে, দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচতে চায় সে অধিকার টুকু যেন কেড়ে নিতে চায় আমাদের দেশের ক্ষমতার লোভে পরা রাজনিতিক দল গুলো।
পেশাজীবীর কথা বলতে গেলে দুই শ্রেণীর পেশাজীবীর কথা বলতে হয়। ১ম শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত সরকারি পেশাজীবী আর ২য় শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত বেসরকারি পেশাজীবী । সরকারি পেশাজীবীরা মোটামুটি সরকারের দয়া ও মায়ায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল আছেন। আর বেসরকারি পেশাজীবীরা তাদের বেতন ও ভাতা নিয়ে প্র্তিনিয়ত দুঃচিন্তার মধ্যে থাকেন কারন তাদের মালিকদের ব্যবসার চাকা গরুর গাড়ির চাকার চেয়ে ধীর গতিতে চলছে এবং যেকোন সময় এই গতি থেমে যেতে পারে।
সাধারণ মানুষকে নিয়ে অল্প কিছু কথা বলে আজকের লেখাটা সমাপ্তি টানবো। তা না হলে আপনারা বলবেন আপনি সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট বোঝেন না, তাই তাদের নিয়ে আর কি লিখবেন। শুধু একটি কথা বলব, আমরা যারা নিজেদের জীবিকার প্রয়োজনে প্র্তিদিন ঘর বের হই তারা তাদের জীবন হাতে নিয়ে বের হই এবং দিন শেষে যখন ঘরে ঢুকে যায় তখন মনেমনে আল্লাকে ধন্যবাদ জানাই এবং বলি, “আল্লাহ তো্মাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সহি সালামত ঘরে ফেরানো্র জন্য।” এই হচ্ছে আমদের সাধারন মানুষের অবস্থা। মনে হয় যেন ” নিজ দেশে পরবাসী, কোথাও কেউ নেয় যাকে মন খুলে বলতে পারি, খুব বিপদে আছি একটু সহযোগিতা করুন যাতে করে দু দলকে এক সঙ্গে বসাতে পারেন আর আমরা নিরাপদে পরিবার পরিজন নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারি।”
উপরের বিষয় নিয়ে ভাবুন, ভাবতে হবে, আপনাকে, আমাকে এবং আমাদের সকলকে কারন এদেশ আমার, আপনার এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের কোন রাজনৈতিক দলের একক সম্পত্তি নয়। যদি মাননীয় প্রধানমন্তীর কথা সত্যি ধরে নিয় তাহলে হরতাল হচ্ছে, সংসদের বাহিরের বিরোধী দলের কথা সত্যি ধরে নিয় তাহলেও হরতাল হচ্ছে, আবার আমদের দেশের শ্রমজীবি, পেশাজীবির দৈনন্দিন জীবন ধারনের কথা গুলো্কে সত্যি ধরে নিয় তাহলেও হরতাল হচ্ছে, সর্বশেষ সাধারণ মানুষের মনের কথা গুলো্কে সত্যি ধরে নিয় তাহলেও হরতাল হচ্ছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে হরতাল হচ্ছে হচ্ছে এবং হচ্ছে ।
হুমায়ন কবির
বঙ্গ নিউজ, ঢাকা ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৭:৪১ ৪২৩ বার পঠিত