বুধবার, ২৫ মার্চ ২০১৫
আজ বাঙালী নিধনযজ্ঞের ভয়াল কালরাত রক্তাক্ত ২৫ মার্চ
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » আজ বাঙালী নিধনযজ্ঞের ভয়াল কালরাত রক্তাক্ত ২৫ মার্চবিশেষ প্রতিনিধি ॥ “অবিনাশী আগুনে পোড়ে হায়রে শোকার্ত স্বদেশ/ দুখিনী মায়ের অশ্রু জমা হয় নিভৃত পাঁজরে/ যে যাবে যুদ্ধে এখনই সে উঠুক উঠুক ঝলসে/ যে যাবে যুদ্ধে সবকিছু ভাঙুক সে….।”১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কৃষ্ণপক্ষের রাত। এ রাত একদিকে যেমন বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মমুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করেছিল, অন্যদিকে এ রাতেই সূচিত হয়েছিল জঘন্যতম গণহত্যা। সেই রক্তাক্ত রাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো আগুনের শিখা আকাশকে বিদ্ধ করেছিল। এক সময় অগ্নিবর্ণের শোকার্ত ধূম্রকু-লী ছড়িয়ে পড়ল, কিন্তু পরমুহূর্তেই সেটাকে ছাপিয়ে উঠল আগুনের লকলকে শিখা। সারাদিন ধরে রোদেপোড়া নগরী চৈতী হাওয়ায় জুড়িয়ে আসছিল। দিন শেষে এলো সেই ভয়াল রাত। তখনও কেউ জানে না কী ভয়ঙ্কর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় কালরাত আসছে বাঙালীর জীবনে।
ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমের। ঘরে ঘরে অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে। গভীর হতে শুরু করেছে রাত। অকস্মাত যেন খুলে গেল নরকের সব দরজা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এ নামে মৃত্যুক্ষুধা নিয়ে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক নামল ঢাকার রাস্তায়। রাস্তের স্তব্ধতা গুঁড়িয়ে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিন গান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারি হলো রাতের বাতাস। মানব ইতিহাসের পাতায় রচিত হলো কালিমালিপ্ত আরেকটি অধ্যায়। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হলো বিশ্ববিবেক।
আজ সেই ভয়াল, বীভৎস ২৫ মার্চ। বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রীর নাম ২৫ মার্চ। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন। একাত্তরের অগ্নিঝরা এদিনে বাঙালী জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংসতা। গণহত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানী দানবরা মেতে ওঠে নির্বিচারে স্বাধীনতাকামী বাঙালী নিধনযজ্ঞে। এ রাতেই বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মমুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করেছিল বিশ্ববাসী। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে ভয়ঙ্কর মাত্র এক রাতেই হানাদাররা হত্যা করেছিল হাজার হাজার ঘুমন্ত বাঙালীকে।
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন- “সে রাতে সাত হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হয় আরও তিন হাজার লোককে। ঢাকায় ঘটনা শুরু মাত্র হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভূমি।”
বাংলাদেশ সময়: ০:১৩:১৭ ৩৪৭ বার পঠিত