মঙ্গলবার, ৩ মার্চ ২০১৫
কোনও ভদ্র মেয়ে রাত ৯টার পর রাস্তায় বেরোয় না: মুকেশ সিং
Home Page » এক্সক্লুসিভ » কোনও ভদ্র মেয়ে রাত ৯টার পর রাস্তায় বেরোয় না: মুকেশ সিংআন্তর্জাতিক ডেস্ক: অদ্ভুত যুক্তি শোনালো এক ধর্ষক। যুক্তি দিয়ে বলল- ‘ধর্ষণের জন্য দায়ি মেয়েরাই’। আলোচিত এই ধর্ষকের নাম মুকেশ সিং। বলা যায়, ধর্ষক-খুনী। মনে পড়ে কী ২০১২ সালে দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসে ধর্ষিত হওয়া সে নির্ভয়ার কথা।
৬ ডিসেম্বর রাতে চলন্ত বাসে নির্ভয়া কান্ডের খবর শুনে সেদিন শিউরে উঠেছিল মানুষ। নির্ভয়াকে এরপর বাঁচানো যায়নি। অথচ এই ঘটনার জন্য নির্ভয়াকেই সম্পূর্ণভাবে দায়ি করল সেদিনের অন্যতম দোষী মুকেশ সিং। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মুকেশসহ ৬। যে বাসটিতে নির্ভয়ার উপর নৃশংস যৌন অত্যাচার হয়েছিল সেই বাসটির চালক ছিল এই মুকেশ।
জেলের মধ্যেই একটি ডকুমেন্টারির জন্য দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মুকেশ জানিয়েছে ‘রাত ৯টার পর যে মেয়েরা বাড়ির বাইরে বেরোয় তাদের উদ্দেশ্যই থাকে পুরুষদের আকর্ষিত করা।’ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিবিসিতে সম্প্রচারিত হবে মুকেশের এই সাক্ষাৎকার।
মুকেশের বয়ানে এই নির্ভয়ার মৃত্যু নিছকই এক দুর্ঘটনা। সে জানিয়েছে ‘ধর্ষিত হওয়ার সময় বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেনি মেয়েটি। চুপ করে থেকে ধর্ষণ হতে দিয়েছে। ধর্ষণের পর আমরা মেয়েটিকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিলাম। ওর সঙ্গি ছেলেটিকে খানিক মারধর করি আমরা।’
মুকেশ আরও বলেছে ‘কোনও ভদ্র মেয়ে রাত ৯টার পর রাস্তায় বেরোয় না। ধর্ষণের জন্য ছেলেদের থেকে মেয়েরা অনেক বেশি দায়ি। ছেলে আর মেয়েরা কখনই সমান হতে পারে না। বাড়িতে থেকে গৃহস্থালীর কাজকর্ম করাটাই মেয়েদের সাজে। রাত ৯টার পর `অশালীন` পোশাক পরে রাস্তায় বেরুনো মেয়েদের কাজ নয়। মাত্র ২০% মেয়েরাই ভাল হয়।’
মুকেশের দাবি, তাদের ফাঁসি হলে আখেরে খতিটা মেয়েদেরই হবে। তার মতে, ‘এরপর ধর্ষণ করে কেউ আর ধর্ষিতাকে তাদের মত বাঁচিয়ে রাখবে না।’ মুকেশ জানায়, তারা আসলে মেয়েটি ও তাঁর সঙ্গিকে `শিক্ষা` দিতে চাই ছিল, বোঝাতে চাইছিল রাতের বেলা তাদের মোটেও বাড়ির বাইরে বেরুনো ঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, সেই রাতে শুধু ধর্ষণ নয়, নির্ভয়ার উপর নির্মম অত্যাচারও করেছিল এই ছয় অভিযুক্ত। অকথ্য যৌন নির্যাতন করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। নির্ভয়ার যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দিয়েছিল লোহার রড সহ আরও বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। পরে রক্তাক্ত, অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় নির্ভয়া ও তার সঙ্গিকে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।
অত্যাচারের মাত্রা এতটাই ছিল তীব্র ছিল যে পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও শেষপর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনার পর দিল্লি সহ সারা দেশ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনে বাধ্য হয় সরকার।
অভিযুক্ত প্রত্যেককেই পরে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৩ সালের ১১ মার্চ অন্যতম অভিযুক্ত তিহার জেলে পুলিশি হেফাজতেই আত্মহত্যা করে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ঘটনার সময় নাবালক হওয়ায় তার ৩ বছরের জেল হয়।
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে বাকি ৪ অভিযুক্ত অপরাধী সাব্যস্ত হয়। নিম্ন আদালত তাদের ফাঁসির আদেশ দিলেও দিল্লি হাইকোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দোষীপক্ষ। এখনও পর্যন্ত এই চারজনের মৃত্যদন্ড স্থগিত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৭:৪৫ ৩৯১ বার পঠিত