শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৫
আগুনে পোড়ার চেয়েও বেশি কষ্ট…
Home Page » জাতীয় » আগুনে পোড়ার চেয়েও বেশি কষ্ট…বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আগুনে পোড়ার যন্ত্রণার চেয়েও বেশি কষ্ট সন্তানের কান্না। যখন শুনি আমার মেয়ে ওর বাবার শার্ট আর আমার উড়না জড়িয়ে বাসায় কান্না করছে, তখন নিজের পোড়ার যন্ত্রনার চেয়েও বেশি কষ্ট লাগে। অবরোধে যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ মা সাহিদা ফাতিমা জাহান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একমাত্র মেয়ে নাসিয়া সিদ্দিকী রিমের জন্য আর্তনাদ করে এ সব কথা বলেন। সাহিদা ফাতিমা জাহান বলেন, হাসপাতালে দেখতে আসা আত্নীয়-স্বজনদের মুখে যখন শুনি রিম ওর বাবার শার্ট, আর আমার উড়না জড়িয়ে আব্বু-আম্মু বলে কান্না করছে। তখন আর সহ্য করতে পারি না।হাসপাতালের পাশে থাকা পরিবারের সদস্যরা বলেন, প্রতিদিনই একাধিকবার মেয়ের কথা বলে কান্না করেন ফাতিমা। সন্তানের জন্য মায়ের এমন কান্নায় বার্ন ইউনিটে ভর্তি অন্য রোগী ও তাদের স্বজনরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে এই দগ্ধ মা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে এখন আমার একটাই চাওয়া, আমি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে মেয়ের কাছে ফিরতে পারি।’
শুক্রবার (২৩ জানুয়ারি) যাত্রাবাড়ীতে গ্লোরি পরিবহনে ছোড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হন ইয়াসির আরাফাত সিদ্দিকী ও সাহিদা ফাতিমা জাহান দম্পতি। এরপর থেকেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রযেছেন এই ফার্মাস্টিক দম্পতি।
মুখ, গলা ও হাতের বিভিন্ন অংশে পোড়া ক্ষত নিয়ে ফাতিমা জাহান বঙ্গনিউজকে বলেন, আমরা দু’জনই ফার্মেসিতে পড়াশোনা শেষ করে ফার্মাস্টিক হিসেবে কাজ করছি। মানুষের সেবার জন্য আমরা ওষুধ তৈরি করি। অথচ ওই মানুষরাই আমাদের পুড়িয়ে দিল।
ঘটনার দিনের সেই ভয়াবহ দৃশ্যের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, কয়েক সেকেন্ড পরেই বাস থেকে নেমে পড়বো। এমন সময় পেট্রোলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বাসটিতে। আমার এখনও বিশ্বাস হয় না যে, আমি আগুন থেকে বাঁচতে বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে পড়েছি।
এদিকে যাত্রাবাড়ীর ওই ঘটনায় দগ্ধ ওসমান নামে আরেকজন বলেন, ‘আমরা ভাই নিরীহ মানুষ। কর্ম করে খাই। আর যেন কোনো নিরীহ মানুষ এমন নিষ্ঠুরতার শিকার না হন।’
তিনি বলেন, পরিবারের জন্য একমাত্র আমিই উপার্জন করি। পুরো পরিবার আমার উপার্জনের টাকায় চলে। ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে। সুস্থ্য হয়ে আমি আবার কাজে ফিরতে পারবো কিনা জানি না।
পরিবার এবং ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
শুধু তারাই নন, হরতাল-অবরোধে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ অনেক পরিবারেরই এখন এমন অবস্থা। রাজনীতি না করেও রাজনীতির চরম নিষ্ঠুরতার শিকার এসব নিরীহ মানুষগুলো।
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক প্রফেসর সাজ্জাদ খন্দকার বলেন, পেট্রোল বোমায় দগ্ধ অনেকেই আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে আমরা দু’জনকে রিলিজ দিয়েছি।
বর্তমানে ৪৮ জন দগ্ধ ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৬ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪২:২০ ৩৮০ বার পঠিত