মঙ্গলবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৫
‘আঁধারে দুপুর’- নিশাত আমিন -এর ধারাবাহিক উপন্যাস
Home Page » সাহিত্য » ‘আঁধারে দুপুর’- নিশাত আমিন -এর ধারাবাহিক উপন্যাস2)
বর কনের আসন ঘিরে জটলা। কনের মুখখানা মায়াবি। পাতলা ছিপছিপে গড়ন। সরু থুতনি আর চিকন নাকের সরল মুখখানার অবয়ব প্রসাধনির আড়ালে পুরোটা ঢাকা পড়েনি। হয়তো ঘরের লোকের হাতে সাজ বলে। আজকাল শহুরে মেয়েদেরতো এমন অবস্হা যে বিয়ের দিনের কনেকে বিয়ের পর প্রসাধনবিহীন মুখে চেনাই কষ্টকর হয়ে যায়। সদ্য বিবাহিত স্বামীর পাশে ও কেমন জড়সড় হয়ে বসে আছে। কিশোরী বয়সের একমেয়ে হয়তো কনের বোন গোছের কেউ হবে বর কনের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে আর খুনসুটি করছে। সে এক একটা কথা বলছে আর জটলা ঘিরে হাসির রোল পড়ছে। কনেকে দেখে মিলারও নিজের বিয়ের কথা মনে পড়ে যায়। ওরও ঠিক একই বয়সে বিয়ে হয়েছিল। তখন সবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ Abvm© ফাষ্ট ইয়ারে fwZ© হয়েছে। প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথেই অনিকের সাথে পরিচয়। সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে মিলার নিজেরই হাসি পায়। তখন মিলাদের বাসা ছিল উত্তরায়। আজমপুর থেকে ক্লাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভুল বাসে উঠে পরায় তাকে ধানমন্ডি ২৭ এ নামতে হয়। মিলা সেসময়ে কিছুতেই শাহবাগ যাওয়ার রাস্তাটা খুজে পাচ্ছিল না। মিলাদের পরিবার এমনিতে কনজারভেটিব না হলেও সে ছিল একটু চাপা স্বভাবের মেয়ে। স্কুল কলেজ বাসার কাছাকাছি ছিল বলে উত্তরা ছেড়ে ও খুব একটা কোথাও বের হয়নি, আর তাই ঢাকা শহরের বেশির ভাগ রাস্তা ঘাটই ছিল তার অজানা। বাস থেকে নেমে ও একদম দিশেহারা হয়ে পরেছিল। ঠিক এমন এই gyn~‡Z©ই অনিকের আবিভাব-ম্যাডাম, একজন ক্যান্সার রোগির জীবন বাঁচাতে কিছু সাহায্য করূন। মিলা কিছু বুঝে উঠার আগেই আগন্তুক আবার হাতে ধরা একটি ছবি উচিঁয়ে বললো-আটবছরের সজিব মৃত্যুব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত, আপনার আমার মতো মানুষের সহযোগিতায় ও আরও কিছুদিন পৃথিবীর বুকে বেচেঁ থাকতে পারবে। মিলা বুঝে উঠতে পারে না এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে কিভাবে ভিক্ষুক দলের সদস্য হয়! তারপর ওর কথায় সম্বিত ফিরে পায়, সে বললো আপা দেখুন, আপনার সন্দেহের কোন কারন নেই, আমি অনিক, ঢাকা ইউনিভাসিটির কলা অনুষদে ফাইনাল ইয়ারে আছি। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে মানবতা নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলেছি, দুঃস্হ আর অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করাই আমাদের একমাএ লক্ষ্য। মিলা ব্যাগ থেকে একশত টাকার একটা নোট বের করে অনিকের হাতে দিয়ে বললো –ভাইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাওয়ার রাস্তাটা কোনদিকে? অনিক মিলার কথায় হেসে ফেললো। মিলা লজ্জা পেয়ে বললো, না মানে আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কলা অনুষদের ছাএী, প্রথম বষ। আজ আমার প্রথম ক্লাস, ভুল করে ভুল বাসে উঠে পড়ায় এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তাটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। অনিক একটা রিক্সা ডেকে রিক্সাচালককে শাহবাগ নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে মিলাকে বললো-শাহবাগ থেকে ক্যাম্পাস যেতে পারবেনতো ? মিলার দ্বিধাদ্বন্দ দেখে অগ্যতা অনিককেও রিক্সায় উঠতে হলো। সেদিন মিলাকে ক্লাসে নামিয়ে দিয়ে অনিকের আর ক্যান্সার রোগীর জন্য A_© সংগ্রহ হয়েছিল কিনা বোঝা গেলনা তবে মিলা কিছুতেই অনিকের কথা ভুলতে পারছিল না। মনের গভীরে একটা অজানা ভয় থেকে থেকে মিলার হৃদয়কে মুচড়ে দিচ্ছিল। তারও প্রায় মাসখানেক পরে মিলা যখন ক্ষনিকের আবেগ থেকে বেরিয়ে এসে অনিকের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে এমনই এক সকালে এক তোড়া গোলাপ হাতে অনিক মিলার ক্লাসের সামনে এসে বললো-এগুলো আপনার জন্য আর খুব জরূরি না হলে আজকে ক্লাস না করলে খুব খুশী হবো, চলুন দুজনে মিলে মানবতা সংগঠনের জন্য কিছু A_© সংগ্রহ করি। আর সেদিন থেকেই মিলা আর অনিক একসাথে। তার cieZ©x তিন মাস টিএসসি, কলাভবন ,শাহবাগ, নিউgv‡K©U, ধানমন্ডি, আজিজ gv‡K©U প্রায় কোথাও ওদেরকে আলাদা দেখা যায়নি। যদিও তখনো কেউ কাউকে ভালবাসার কথা মুখ ফূটে কিছু বলেনি কিন্তু ওদের মাঝে একে অপরের জন্য অনুভূতির গভীরতা এতটা ছিল যে দুজন দুজনকে ছাড়া কিছুই চিন্তা করতে পারতো না। m¤úK©টা চূড়ান্ত ch©v‡q রূপ নিয়েছিল সেদিন যেদিন অনিক তার এক চাচাতো ভাইয়ের হলুদ সন্ধ্যায় মিলাকে নিয়ে গিয়েছিল। সেই সন্ধ্যায় সবাই যখন কনেকে হলুদ দেওয়ায় ব্যস্ত এমনি এক wbR©b gyn~‡Z© অনিক মিলাকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোটে ঠোট রেখে বলেছিল-তুমি আমাকে ভীষনভাবে AvKwl©Z করছো। তোমার আবেশ আমার ভিতর এতটাই যে আমার মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাব। আমাকে আমার এই অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দাও, আমি তোমাকে পুরোপুরি পেতে চাই, তোমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে চাই, তোমাকে বলতে চাই, তোমায় ছাড়া আজ আমি A_©হীন। অনিকের আহবানকে অস্বীকার করার মতো অবস্হা মিলার ছিল না, আর বিবাহ ewn©f’Z শারীরিক m¤úK© গড়ে তোলার মতো অতটা স্বাধীন চিন্তার মেয়েও মিলা ছিল না, তাইতো সেদিন কোন কিছু না ভেবেই সে বলেছিল-বিয়ে ছাড়া এসব m¤ú‡K© আমি জড়াতে পারবোনা। আর সে রাতেই বাসার কাউকে না জানিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে মিলা অনিক এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার তিনদিন পর যখন মিলার খোজে পরিবারের সবাই পাগল প্রায় এমন এক gyn~‡Z© সে ছোটবোন শিলাকে ফোন করে জানায় –আমি ভাল আছি, বাবা মাকে চিন্তা করতে বারন করিস। আমি আর অনিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি, ও খুব ভাল ছেলে। আমি এখন কক্সবাজারে, হানিমুন এ এসেছি ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪১:৫৮ ৫৫৫ বার পঠিত