রবিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৫
অস্থায়ী কর্মী বাসের নিরাপত্তায়
Home Page » জাতীয় » অস্থায়ী কর্মী বাসের নিরাপত্তায়বঙ্গ-নিউজঃরাজধানীতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের নিরাপত্তায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করেছেন মালিকরা। ছদ্মবেশে থাকা এসব কর্মী সারাক্ষণ বাসের ভেতর অবস্থান করেন। যাত্রীদের ওপর নজর রাখাই এদের কাজ। মালিকদের মতে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধে আগুন-বোমা থেকে নিজেদের সম্পদ রক্ষায় তারা এ ব্যবস্থা নিয়েছেন। এরপরও তাদের আতংকের শেষ নেই।বাসমালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের (এবিসি) সভাপতি খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে নগরীতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার বাস-মিনিবাস চলে। কিন্তু অবরোধ-হরতালের কারণে বর্তমানে দুই থেকে আড়াই হাজার বাস চলছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনও না কোনও বাসে আগুন লাগানো হচ্ছে। এতে মালিকরা সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাচ্ছেন। বাসকর্মীদের বলে দেওয়া হয়েছে যাতে সার্বক্ষণিকভাবে বাসের ভেতরে-বাইরে নজর রাখা হয়। এরপরও হামলা হচ্ছে।’
মতিঝিল শাপলা চত্বরে শনিবার বেলা আড়াইটায় সিটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-০৫২৯) চালক আকাশ বলেন, ‘আগুন-বোমা থেকে রক্ষা পেতে বাসের জন্য আলাদা স্টাফ রেখেছি। সে যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করে।’ তিনি বলেন, ‘আগুন-বোমার আক্রমণটা বেশি হয় সন্ধ্যার পর। তাই অন্ধকার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাসের সবগুলো জানালার কাঁচ লাগিয়ে দেওয়া হয়।’
মিরপুর মিশন পরিবহন কোম্পানি লিমিটেডের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৭৩৪৬) চালক কামাল বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির প্রতিটি বাসে দুজন করে স্টাফ রাখা হয়। যাত্রীরা কে কি করছে সেটা দেখাই এদের কাজ। এটা দেখার জন্য তারা যাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন সিটে বসে থাকে। কনডাক্টর বা হেলপারের পক্ষে এ কাজটি করা সম্ভব না।’ কামাল বলেন, ‘মালিকরা বাধ্য হয়ে অস্থায়ীভাবে নতুন লোক নিয়োগ দিয়েছেন। এতে ব্যয় বাড়লেও সম্পদ রক্ষায় এছাড়া কোনও উপায় নেই।’
মতিঝিলে এটিসিএল বাসের টিকিট বিক্রেতা সেলিম বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে রাত দশটার পরও মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুরের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু আগুনের ভয়ে এখন রাত সাড়ে সাতটার মধ্যে মতিঝিল থেকে শেষ ট্রিপ দেওয়া হয়। এরপর এক ঘণ্টার মধ্যে সব বাস গ্যারেজে ঢুকে যায়।’ তিনি বলেন, ‘যাত্রী প্রচুর আছে। যানজট নেই বলে ট্রিপ বেশি হচ্ছে। কিন্তু শেষ ট্রিপের পর যারা আসছে তাদেরকে গন্তব্যে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
মতিঝিল পূবালী ফিলিং স্টেশনের সামনে বিআরটিসির টিকিট কাউন্টারটি শনিবার বেলা তিনটায় বন্ধ পাওয়া যায়। কিছুটা দূরে বাংলার বাণী ভবনের সামনে ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা বিআরটিসির ট্রাফিক বিভাগের মতিঝিল ইনচার্জ মো. মনিরুল হাসান বলেন, ‘আগুনের ভয়ে ইদানিং আমরা বিআরটিসির বাসে বালি, পানি ও ডিসটিংগুইশার রাখি। বাসে আগে চালক থাকত একজন। গত কয়েক দিন ধরে চালক রাখা হচ্ছে দুজন করে। একজন অসুস্থ হলে যাতে অন্যজন বাসটি চালাতে পারে।’
মনিরুল হাসান বলেন, ‘সন্ধ্যার পর যাত্রী নামার সঙ্গে সঙ্গে বাসের জানালা ও দরোজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাস কখনোই খালি থাকে না। সারাক্ষণ চালক অথবা হেলপারদের বাসে বসে থাকতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘এত সতর্কতার পরও কিছুদিন আগে রাজউক ভবনের কাছে বিআরটিসির একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।’ তিনি জানান, পুলিশ যেখানে-সেখানে বাস দাড়াতে বারণ করে দিয়েছে।
বাসমালিকরা জানিয়েছেন, গত ৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত শুধু সিটি সার্ভিসেরই শতাধিক বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। অনেক মালিক ভয়ে তাদের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মালিকরা দেউলিয়া হয়ে যাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৬:২১ ৩৬৯ বার পঠিত