বৃহস্পতিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৫
শুনানির আবেদন খালেদার পক্ষে
Home Page » প্রথমপাতা » শুনানির আবেদন খালেদার পক্ষেবঙ্গ-নিউজ: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাত মামলার শুনানিতে যাবেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তার পক্ষে সময়ের আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জানুয়ারি) হরতাল চলাকালে ওই মামলার শুনানি হওয়ার কথা আছে।
ওই মামলার প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়াকে এখনও ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে। তাই তিনি আদালতে হাজির হতে পারবেন না। তার পক্ষে সময়ের আবেদন করা হবে।
রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ অস্থায়ী আদালতে দুর্নীতির মামলা দু’টির বিচার চলছে। গত ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদল করে। তার পরিবর্তে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ পান আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদার।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় প্রথম সাক্ষী ও বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদের অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।
হারুন-অর রশিদ গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শুরু করে আরও পাঁচ কার্যদিবস সাক্ষ্য দিয়েছেন। সেদিন থেকেই খালেদার আইনজীবীদের নানা বিষয়ে একের পর এক আবেদন, এজলাসকক্ষে তাদের হট্টগোল ও বিচারককে গালাগালির মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম ভণ্ডুল করার চেষ্টার ফলে ব্যাহত হয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ। সময়ের আবেদন জানিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ কয়েক দফা পিছিয়েও নিয়েছেন তারা। ফলে প্রায় চার মাসেও হারুন-অর রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি বলে জানা গেছে। অথচ তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও প্রথম সাক্ষী ও বাদী।
এ অবস্থায় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ছিল নতুন বিচারকের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রথম দিন। সেদিন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বকশিবাজার এলাকায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে এমপি ছবি বিশ্বাসসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। বিএনপির কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও আওয়ামী লীগের নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেন।
প্রথম দিনের বিবেচনায় খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে ২৪ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে বুধবার (৭ জানুয়ারি) ধার্য করেছিলেন নতুন বিচারক। ৭ জানুয়ারি আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পুনরায় ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।
খালেদা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
তাদের মধ্যে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন।
মামলার অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন।
অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ মোট ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।
মামলাটির অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।
এ মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
গত বছরের ১৯ মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।
গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালতভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ওই দুই মামলা পরিচালনার জন্য ভবনটিকে (যা বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার অস্থায়ী আদালত ছিল) অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা এবং বিচারিক আদালতে অভিযোগ গঠন ও অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মোট পাঁচটি রিট আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। সবগুলো আবেদনই হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায়। পরে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পাঁচটি আপিল আবেদন করেন খালেদা জিয়া। আপিল বিভাগও সব আপিল খারিজ করে দিয়েছেন।
আগের বিচারকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে খালেদার একটি আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষমান থাকা অবস্থায় আইন মন্ত্রণালয় বিচারক পরিবর্তন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৬:৫২ ৩৫৮ বার পঠিত