শনিবার, ৩ জানুয়ারী ২০১৫

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের ঢল : আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার দাবি

Home Page » বিনোদন » সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের ঢল : আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার দাবি
শনিবার, ৩ জানুয়ারী ২০১৫



2015-01-02_21_167750.jpgবঙ্গ-নিউজ : র‌্যাবের অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে জনশূন্য হয়ে পড়েছিল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। এতে পর্যটকদের আনাগোনা কমে গিয়েছিল।
কিন্তু শীত আসার সাথে সাথে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। আজ বন্ধের দিনে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি ঘটে এ উদ্যানে।
কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ মিলে খুব কম। নতুন বছরের শুরতে যখন বাচ্চাদের স্কুলের ব্যস্ততা নেই তখন পছন্দের স্থানে ঘুরতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়িয়ে যান অনেকেই। আর ঘুরানোর পছন্দের স্থান হিসেবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান।
শুধু হবিগঞ্জেরই নয়, বি-বাড়ীয়া, নরসিংদীসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও পর্যটকরা আসছেন এখানে। অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের পর অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক আসেন সাতছড়িতে।
সাতছড়ি ব্যবস্থাপনা কমিটি সুত্রে জানা গেছে, শীত আসার সাথে সাথে টিকেট বিক্রি থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার টাকা রাজস্ব আসছে এ মৌসুমে। সাপ্তাহিক বা সরকারী ছুটি হলে পর্যটক আসেন বেশি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পিকনিক পার্টি ইতোমধ্যে আসা শুরু করে দিয়েছে। আজও ৮ থেকে ১০টি পিকনিক পার্টি এসেছে সাতছড়িতে। তবে যারা উদ্যানে প্রবেশ করেন কেবল তারাই টিকেট কাটেন। বেশীর ভাগ লোক উদ্যানের বাহিরে আড্ডা জমান।
সাতছড়িতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পাখ-পাখালির কিচির-মিচির শব্দে আনন্দেই সারাদিন কাটে পর্যটকদের। দোলনায় চড়া ছাড়াও খেলাধুলায় মেতে উঠেন তারা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাদেরকে মুগ্ধ করে।
গাড়িতে করে আনন্দ আর হৈ হুল্লড়ে মেতে উঠেন পর্যটকরা। পর্যটকদের জন্য প্রশাসন থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়। পাশাপাশি আহবান জানানো হয় বণ্যপ্রাণী ও গাছপালা ধ্বংস না করার জন্য।
সাতছড়িতে পর্যটকদের আনাগোনায় কর্তৃপক্ষ আনন্দিত। ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ জানান, শীতকালে ও দুই ঈদে পর্যটক বেশী আসে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে ব্যবস্থাপনা কমিটি আন্তরিকভাবে কাজ করছে। প্রশাসন থেকেও এ ব্যাপারে কমিটিকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
চুনারুগাট থানার ওসি অমূল্য কুমার চৌধুরী জানান, আজ তিনি সাতছড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে প্রচুর পর্যটক এসেছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ রাখা হয়েছে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানকে পর্যটক বান্ধব ও আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন পর্যটকরা। বি-বাড়ীয়া থেকে আসা কলেজ ছাত্র মুখলেছুর রহমান জানান, এখানকার পরিবেশ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। কিন্তু ভাল কোন রেস্টুরেন্ট নেই। এছাড়া মোবাইল নেট ওয়ার্ক না থাকা একটি সমস্যা। একসাথে আসা কোন টিমের সদস্য যদি দলচ্যুত হন তবে তাকে খুজে বের করতে বেশ সমস্যা হয়।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্ধ্যা রানী দেব বর্মা জানান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে শীতকালে বন্ধের দিনগুলোতে পর্যটক বেশী আসে। এখন প্রতিদিনই বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা।
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন হিল রিজার্ভের সংরক্ষিত বনভূমির অভ্যন্তরে ২৪৩ হেক্টর ভূমি নিয়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জীব বৈচিত্রে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এ বনাঞ্চলটি নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বিশেষ করে পাখি প্রেমিকদের জন্য এটি একটি স্বপ্নভূমি।
এ উদ্যানে চাপালিশ, শিমুল, বেলপুই, শেওড়া, পামসহ ২০৮ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বনের মাটিতে কোথাও কোথাও জীবাস্মর অবশিষ্ঠাংশ পাওয়া যায়। সাতছড়ি শব্দটি দিয়ে রক্ষিত এ বন এলাকার ভিতর সাতটি প্রবাহমান জলধারাকে নির্দেশ করলেও কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৭:২১   ৪১১ বার পঠিত