সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪
আপনি দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা ভোগ করতে হবে’ : খালেদা জিয়াকে দুদক চেয়ারম্যান
Home Page » জাতীয় » আপনি দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা ভোগ করতে হবে’ : খালেদা জিয়াকে দুদক চেয়ারম্যানবঙ্গ-নিউজ ডটকম:মন্ত্রীদের বিষয়ে নতুন করে কোনো তদন্ত নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বলেছেন, ‘উনি দোষী কী দোষী না, আমি তার রায় দেয়ার মালিক নই। আমি তদন্ত করে একটি অভিযোগ পেশ করেছি। এখন আপনি যদি বলেন অভিযোগ মিথ্যা। তাহলে বড় বড় উকিল দিয়ে আপনি অভিযোগ খণ্ডন করতে পারেন। আপনি সেটা খণ্ডন করেন। বড় বড় মামলা থেকে অনেকেই মুক্ত হচ্ছে। আপনি যদি বিচারে দোষী সাব্যস্ত হোন, তাহলে আপনাকে সাজা ভোগ করতে হবে। আর আপনি যদি নির্দোষ প্রমাণিত হোন, তবে আপনি মুক্ত হবেন। আমি তাদেরকে (খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের) অনুরোধ করব, আমাদের সাথে আপনারা সহযোগিতা করেন। তাহলে নিশ্চিত একটা ফল জাতি দেখতে পাবে।’
সোমবার দুপুরে রংপুর মহানগরীর আরডিআরএস মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুদকের করা খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টি টেনে এনে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, যে মামলাগুলো আমাদের আদালতে আছে, সেগুলো যদি সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারতাম, তাহলে ইতোমধ্যেই আপনাদের অনেকগুলো ফল দেখাতে পারতাম। গত কয়েক মাস থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মামলা নিয়ে আমরা বেশ অসুবিধার মধ্যে আছি। মামলাগুলো পরিচালনা করাই যাচ্ছে না। আদালতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, ফলে আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করে যে আদালতে স্বাভাবিকভাবে বিচার করা সম্ভব সে আদালতে মামলাগুলো নিতে বাধ্য হয়েছি। আদালতপাড়া থেকে মামলাগুলো বিডিআর হত্যা মামলার আদালতের স্থানে নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।
খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘বারবার করে বলা হচ্ছে মামলাগুলো মিথ্যা। তাহলে আমি বলব যদি মিথ্যা মামলা হয় এতেই তো আপনাদের সুযোগ। আপনারা মিথ্যা প্রমাণ করে মুক্ত হয়ে যান। আমি চাই তো সেটা আপনারা করেন। মামলাটা শেষ হয়ে যাক। কিন্তু আপনারাই তো তা হতে দিচ্ছেন না। বারবার করে কোনো না কোনো অজুহাত তুলে আপনারা মামলা উচ্চ আদালতে তুলছেন। একবার বলছেন বিচারকের প্রতি আস্থা নেই। একবার বলছেন বিচারকের নিয়োগ ঠিক হয়নি। এভাবে বিভিন্ন ধরনের বাহানা করা হচ্ছে। এ জন্য কয়েকবার বিচারকও পরিবর্তন করা হচ্ছে।’দুদককে টিআইবির দেয়া দায়মুক্তির কমিশন প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি বলি না যে, টিআইবির রিপোর্ট একেবারেই মিথ্যা। টিআইবি তারা মূল্যায়ন করেছে। তবে আমার মনে হয় সেটি পুরোপুরি ঠিক নয়। তিনি বলেন, আমরা বড় বড় মামলা করেছি। এগুলো আগে কখনো করা হয়নি। এগুলোও আমাদের কম সাকসেস নয়। এসব বিষয় যদি তারা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতেন তা হলে হয়তো এভাবে তারা বলতেন না। আসলে বাংলাদেশের ট্রান্সপারেন্সি যে সংস্থা আছে। এই মূল্যায়নটি তারা করেন না। এটা করা হয় কেন্দ্রীয়ভাবে। বার্লিন থেকে সেটা করা হয়। তারা বিভিন্নভাবে কাগজপত্র দেখে তারা করেন। হয়তো সেই দেখাতে হয়তো সঠিকভাবে করা হয়নি। আরো কিছু বিষয় মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। তাহলে হয়তো ব্যাপারটা অন্যরকম দাঁড়াতো। তিনি বলেন, অভিযোগ অনুসন্ধান করলেই তাকে দোষী বলা যাবে না। সেটা প্রমাণ হতে হবে। অনুসন্ধানের পর যদি আমরা সব ঠিকঠাক পাই, তাহলেই তাকে আমরা সেখান থেকে মুক্তি দেই। সুতরাং দুদক দায়মুক্তির কমিশন বিষয়টি ঠিক নয়।
বিএনপিকে বারবার বিরোধী দল উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশেষ করে দুর্নীতির বিষয়টিতে যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন, তারা এক ধরনের কথা বলেন, যারা বিরোধী দলে থাকেন, তারা এক ধরনের কথা বলেন। বিরোধী দল যখন সরকারে আসে বা এই দলগুলো যখন সরকারে যাবে, তখন তাদের সুর কিন্তু অন্যরকম হয়ে যাবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রতি বছরই রিপোর্ট দেয়। রিপোর্ট দিলেই দেখা যায়, যারা সরকারে থাকে, তারা এই রিপোর্টটিকে সহজভাবে নিতে পারেন না। আর যারা বিরোধী দলে থাকেন তারা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
দুদুক চেয়ারম্যান যুক্তি দেখিয়ে বলেন, গত বছর যখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট আসে তখন বিরোধী দল এতো সোচ্চার ছিল না। তবে রিপোর্টটি যে একেবারেই ভুল তা আমরা উচ্ছ্বসিতভাবে বলব না। দুর্নীতি যেহেতু আছে, তারা সেভাবে করেছে। তবে মূল্যায়ন ঠিক হয়নি। কিন্তু সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হতে পারে। কিন্তু বিরোধী দল যেভাবে বলছে ব্যাপারটা তা নয়।
মন্ত্রীদের বিষযে নতুন করে কোন তদন্ত নয় উল্লেখ করে দুদুক চেয়ারম্যান বলেছেন, এই মুহূর্তে সে রকম কোনো কাজ আমাদের হাতে নেই। যেসব কাজ আমাদের হাতে আছে সেগুলো নিয়েই আমরা এগোচ্ছি। কয়েক দিন আগেই আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশের সব চেয়ে ধনী তাকেও আমরা দুদকে এনেছি। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন ব্যুরো থাকাকালে আমরা শুধু মামলা মোকদ্দমা করতাম। ২০০৪ সালে কমিশন হওয়ার পর অনুসন্ধান ও তদন্তের সাথে প্রতিরোধ বিষয়টি জোর দেয়া হয়েছে। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, দুর্নীতি আছে বলেই জাতিসঙ্ঘ চিন্তাগ্রস্ত। সবখানেই দুর্নীতি আছে। যুক্তরাষ্ট্রে আছে। বিশ্ব্যব্যাংকেও আছে। দুর্নীতি কিভাবে কমানো যায় সেটিই আমাদের লক্ষ্য। কারণ দুর্নীতি দেশের জন্য খারাপ। জনসাধারণের জন্য খারাপ। অর্থনীতির জন্য খারাপ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩৮:৪৪ ৩৭৫ বার পঠিত