বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪
দেশের নান্দনিক শহীদ মিনার উদ্বোধন হলো
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » দেশের নান্দনিক শহীদ মিনার উদ্বোধন হলোস্টাফ রিপোর্টার,ঢাকা অফিস।।অবশেষে বহুপ্রতীক্ষিত নবনির্মিত শহীদ মিনারের উদ্বোধন হয়েছে সিলেটে। এটিকে বলা হচ্ছে দেশের দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার।আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এই শহীদ মিনার উদ্বোধনের আগেই মানুষের নজর কাড়ে। স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন শহীদ মিনারটিতে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ব্যবহার করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার সঙ্গে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব প্রমুখ।
উন্নত মম শিরের মতো বিশাল স্তম্ভের মধ্যে রাখা হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বিশাল আকৃতির সেই রক্তলাল সূর্য যেন প্রতিদিন নতুন চেতনায় জেগে ওঠার দীপ্তি জ্বেলে রেখেছে। মূল স্তম্ভের দুইপাশে এমনভাবে ঘাস স্থাপন করা হয়েছে কখনো দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজ পাহাড় থেকে সূর্য জাগছে। চারপাশে যেন লেগে আছে সারাক্ষণ সবুজ ঢেউ।
সিলেটের এ রকম নানা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং বাঙালীর দীর্ঘ সংগ্রামী চেতনাকে মাথায় রেখে নির্মিত হয়েছে ৪৫ ফুট উচ্চ ও ৩০ ফুট প্রস্থ আধুনিক স্থাপত্যে এই শহীদ মিনার। এতে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি টাকা।
নিসর্গের ছায়া ঢাকা সিলেটে সময়ের প্রবাহে সেই ঐতিহ্যের সাথে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক স্থাপত্য যোগ হলো। সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই মনে করেন, সবুজের অপরুপ সাজে সজ্জিত সিলেটে নির্মিত বিশাল আকৃতির শহীদ মিনারটি সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
১৯৮৮ সালে এ অঞ্চলের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। সিলেটের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু দেশপ্রেমিক মানুষ তখন সেই শহীদ মিনারের বীজ বপন করেন। তারপর সেই শহীদ মিনারই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা লাভ করে। এই শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করেই সিলেটের সকল প্রগতিশীল আন্দোলন, এ অঞ্চলের তাবৎ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বেগবান হয়।
গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী সিলেট নগরীতে হেফাজতের একটি মিছিল জিন্দাবাজার থেকে আম্ব^রখানার দিকে যাচ্ছিল। এসময় মিছিল থেকে চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। তারপর শহীদ মিনারটি দীর্ঘদিন ভাঙ্গা অবস্থায় ছিলো। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শহীদ মিনার পরিদর্শনে এসে যত দ্রুত সম্ভব তা পুনর্নির্মাণের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথে বসেন সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবাই। তারা বর্ধিত পরিসরে নতুন আঙিকে শহীদ মিনারটি পুন:প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। অর্থমন্ত্রী তাদের প্রস্তাবে সম্মতি দেন। পরে সেই প্রস্তাব অনুযায়ী সিলেট সিটি কর্পোশেন কাজ শুরু করে।
সিটি কর্পোরশন সূত্র আরো জানায়, শহীদ মিনারটি দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হয়। যেমন মূল স্তম্ভের পাশাপাশি শহীদ মিনারের একপাশে আছে মুক্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চ, ব্যাকস্টেজ, গ্রীণরুম, অনুশীলন পরিসর, ওয়াশরুম। আছে বিশ শতক জায়গা নিয়ে জনসমাগমের জন্য উন্মুক্ত চত্বর। সেই সঙ্গে রাখা হয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সিলেটের ঐতিহ্য ও সংগ্রহশালা এবং ৩৮০০ বর্গফুটের মিনি লাইব্রেরী। আছে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত পরিসর।
শহীদ মিনারের নকশা এঁকেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শুভজিৎ চৌধুরী। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন কৌশিক সাহা, মো. সিপাউল বর চৌধুরী, ধীমান চন্দ্র বিশ্বাস ও জিষ্ণু কুমার দাস। প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন হুমায়ুন খান ও দেবাশীষ ভট্টাচার্য।
পুনর্নির্মিত এই শহীদ মিনার উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সিলেট জুড়ে। উদ্বোধনকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই উৎসবমুখর ছিল সিলেট। এছাড়া উদ্বোধন উপলক্ষে গ্রহণ করা হয়েছে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচী।
পুরো শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আঁকা হয় দৃষ্টিনন্দন আল্পনা। বুধবার সকাল থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গন। সকাল থেকেই চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের গান, লোকগীতি। সন্ধ্যা ৬টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসেবে শহীদ মিনার উদ্বোধনকালে পুরো শহীদ মিনার এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ৭:০২:৪৩ ৩৪৮ বার পঠিত