শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

প্রশ্ন ফাঁস: ‘শিথিল’ নিরাপত্তায় চলছে বিজি প্রেস

Home Page » প্রথমপাতা » প্রশ্ন ফাঁস: ‘শিথিল’ নিরাপত্তায় চলছে বিজি প্রেস
শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪



index.jpgবঙ্গ-নিউজঃঅতীতে প্রশ্ন ফাঁসের তদন্তে সরকারি মুদ্রণালয় বিজি প্রেসের নিরাপত্তা শিথিলতার ওপর দায় এলেও ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেয়নি কেউ।২০১০ সালে একটি সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিজি প্রেসের দায় প্রমাণিত হলেও আগের সেই আভ্যন্তরীণ নীতিই বহাল রয়েছে।বরাদ্দের অভাবে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রে প্রশ্ন ছাপাতে না পারায় দীর্ঘ সময় নিয়ে বিজি প্রেসে ছাপানো হচ্ছে বিভিন্ন পাবলিক ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন।

২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা প্রশ্ন ছাপানোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে ৬২ দিনে। আগামী বছরের ২ ফেব্রুয়ারি হবে এসএসসি পরীক্ষা।

বিজি প্রেসের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, গোপনীয় শাখায় যে ২৬০ জন কর্মী কাজ করেন, তাদের নিয়োগ হয়েছে অন্যদের মতো একই প্রক্রিয়ায়।

“সকাল ৭টায় গোপনীয় শাখায় প্রবেশ করতে হয় তাদের। গোপনীয় শাখার গেইটে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকে। রাতে কাজ শেষে কর্মীরা বের হওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারাও তাদের শরীর তল্লাশি করেন।”

দুইজন কর্মকর্তার কক্ষ থেকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে গোপনীয় শাখায় কার্যক্রম তদারকি করা হয় বলে জানান তিনি।

নজরুল ইসলামের কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ চালনো হয় ৩২টি সিসিটিভিতে। এতে দেখা যায়, নেভি ব্লু ট্রাউজারের সঙ্গে নীল রঙের হাফহাতা শার্ট পড়ে অন্য প্রেসকর্মীদের মতোই কাজ করছেন গোপনীয় শাখার কর্মীরা।

নজরুল জানান, এ শাখার কর্মীদের কোনো অন্তর্বাস পড়তে দেওয়া হয় না। শীতের সয়ম একটি আলাদা ‘গাউন’ সরবারহ করা হয়, যা প্রেসের ভেতরেই রাখা থাকে। তাদের সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুর ও রাতের খাবারও খেতে হয় প্রেসের ভেতরে।

প্রেসকর্মীদের কাজ যারা দেখভাল করেন, তারাও গোপনীয় শাখার ভেতরে অবস্থান করেন বলে জানান উপ-পরিচালক।

পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে গোপনীয় শাখার কর্মীরা ২০১০ সালে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে। ওই ঘটনায় কয়েকজনকে চাকরিচ্যুতও করা হয়।

২০১০ সালের ঘটনার পর থেকে পুলিশের সঙ্গে বিজি প্রেসের কর্মকর্তারাও গেইটে কর্মীদের শরীর তল্লাশি করেন বলে দাবি করেন নজরুল।

অবশ্য আরেকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্মীদের তল্লাশি করার কাজটি কর্মকর্তারা সব সময় করেন না। আর প্রশ্নফাঁসে সন্দেহভাজন কয়েকজন কর্মকর্তার নামও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। কাজেই কেবল প্রেসকর্মীদের পাহারা দিলেই নিরাপত্তার বিষয়টি পূর্ণ করা সম্ভব নাও হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, গোপনীয় শাখার কর্মী, পুলিশ ও ট্রেড ইউনিয়নের নেতারাও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকতে পারে।

“ভালোমতো খোঁজ নিলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। কিন্তু কখনোই কেউ এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেনি। অনেক সময় রাতে পুলিশের সঙ্গে কর্মকর্তারা গেইটে থাকেন না।”

তবে উপ-পরিচালক নজরুল ইসলামের দাবি, বিজি প্রেস থেকে ‘কোনোভাবেই’ প্রশ্ন ফাঁস হয় না।

“বড় পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানোর সময় গোপনীয় শাখায় অতিরিক্ত লোক কাজ করে। কারো আত্মীয়-স্বজন বা সন্তান পরীক্ষার্থী থাকলে ওই পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানোর সময় তাদের গোপনীয় শাখায় কাজ করতে দেওয়া হয় না। প্রশ্ন ছাপানোর আগে তাদের এ সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র পূরণ করতে হয়।”

তার দাবি, গোপনীয় শাখার কর্মীরা প্রশ্ন ছাপানোর কাজ শেষে বাড়ি চলে যান। আর কাজের মধ্যে তারা প্রশ্ন মুখস্থ করতে পারেন না।

মোট ১৩টি অফসেট মেশিনে প্রশ্ন ছাপার কাজ চলে জানিয়ে নজরুল বলেন, আরো আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র পেলে প্রশ্ন ছাপানোর সময় কমিয়ে আনা যেত, কিন্তু বরাদ্দ না পাওয়ায় তা হয় না।

বিজি প্রেসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের সন্দেহ, পরীক্ষার আগে যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়, তখনই ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।

“কোড ব্যবহার করে বিজি প্রেসে প্রশ্ন ছাপানো হয়। কর্মীরা জানে না কোন কোডের প্রশ্ন কোন বোর্ডের। একটি বিষয়ে চার সেট করে প্রশ্ন ছাপালে ১০ বোর্ডের জন্য ৪০টি প্রশ্ন ছাপাতে হয়। ফলে প্রশ্ন মুখস্থের সুযোগ নেই।”

আলমগীর জানান, ছাপানোর সময় যে প্রশ্নপত্রগুলো বাতিল হয়ে যায় সেগুলো একটি চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর প্রশ্ন ছাপানো শেষে কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্লেইটটিও পুড়িয়ে ফেলা হয়।

বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রশ্নের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি পেয়ে তা গোপনীয় শাখায় কম্পোজ করা হয়। এরপর ‘প্রুফ’ ঠিক করে তৈরি করা হয় প্লেইট। ওই প্লেইট যায় ছাপাখানায়। ছাপা প্রশ্নের প্যাকেট সিলগালা করে বোর্ড কর্তৃপক্ষেকে বুঝিয়ে দেয় বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষ।

গোপনীয় শাখায় যেসব কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় তাতে পেন ড্রাইভের মতো কোনো ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ নেই বলে জানান নজরুল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজি প্রেসের একজন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষকদের হাতে লেখা প্রশ্নের পাণ্ডুলিপিতে অনেক ভুল থাকে। অনেক সময় হাতের লেখা বোঝা যায় না।

পাণ্ডুলিপিতে ভুল পেলে তা সংশোধনের জন্য বোর্ডকে জানানো হয়। বোর্ড সেই শিক্ষককে ডেকে পাঠায়। ওই শিক্ষক বিজি প্রেসে এসে পাণ্ডুলিপি ঠিক করে দেন।

“পাণ্ডুলিপি ঠিক করার সময় ওই শিক্ষক জেনে যান তার প্রশ্নেই গ্রহণ করেছে বোর্ড এবং তা ছাপানোও হচ্ছে। তিনি যে প্রশ্ন ফাঁস করেন না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে? আপনারা শুধু বিজি প্রেসের দোষ দেন কেন?”

গত বছর প্রাথমিক সমাপনী, এ বছরের ঢাকা বোর্ডের এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র এবং ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোও বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখার নিরাপত্তা বাড়ানোর সুপারিশ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১২:২৬:৪৭   ৫৪৯ বার পঠিত